রবিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৩, ০২:৫৪:১৮

চা বিক্রি করে মনিরের মাসে আয় ৫০ হাজার

চা বিক্রি করে মনিরের মাসে আয় ৫০ হাজার

এমটিনিউজ ডেস্ক: ছোট্ট একটি ঘরে সকাল থেকে রাত অবধি চলে হাঁকডাক। দোকানে সারাদিনই চা প্রেমীদের ভিড় লেগেই থাকে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়তেই থাকে। এ সময় একটু দম ফেলার সুযোগ নেই। এই ছোট্ট চায়ের দোকান থেকেই মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় মো. শাহরিয়ার মনিরের।

মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের পশ্চিম পাঁচখোলা এলাকার চায়ের দোকানি মো. শাহরিয়ার মনির। মুক্তিসেনা স্কুলের একটু সামনে মনিরের চা দোকানের খ্যাতি এখন জেলা জুড়ে। সকাল থেকে রাত অবধি প্রায় সব বয়সি লোকের দেখা মেলে তার চায়ের জন্য।

মনিরের চায়ের দোকানটি ‘নাফসিন ভ্যারাইটিজ কর্নার স্টোর’ নামে জেলায় বেশ পরিচিত। বর্তমানে তার দোকানে ৮০ ধরনের চা পাওয়া যায়। এরমধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় চায়ের মধ্যে অন্যতম হলো- দুবাই চা, স্পেশাল তুর্কি চা ও আয়ুর্বেদিক রং চা। এছাড়াও উল্লেখযোগ্য চা হলো, টক ঝাল মিষ্টি আমলকী চা, টক ঝাল মিষ্টি হট তেঁতুল চা, টক ঝাল মিষ্টি কোল্ড তেঁতুল চা, অস্থির বোম্বাই মরিচের জাদুকরী চা, তাল মিশ্রি দারচিনি চা, তাল মিশ্রি লবঙ্গ এলাচ চা, গুড়ের টক ঝাল মিষ্টি হট লেমন চা, গুড়ের টক ঝাল মিষ্টি কোল্ড লেমন চা, গুড়ের টক ঝাল মিষ্টি হট তেঁতুল চা, গুড়ের টক ঝাল মিষ্টি কোল্ড তেঁতুল চা, গুড়ের টক ঝাল মিষ্টি হট মাল্টা চা, গুড়ের টক ঝাল মিষ্টি কোল্ড মাল্টা চা, গুড়ের টক ঝাল মিষ্টি হট কমলা চা, গুড়ের টক ঝাল মিষ্টি কোল্ড কমলা চা, স্পেশাল টক ঝাল মিষ্টি পাঁচমিশালী এনার্জি বুলেট চা, আকর্ষণীয় ডাবল লেয়ার চা, স্পেশাল মধু লবঙ্গ চা, মধু দারুচি চা, আয়ুর্বেদিক রং চা, মিউশন চা, স্পেশাল মধু কালোজিরা রং চা, রং চা, তুলসী চা, পুদিনা চা, লেমন চা, টক ঝাল মিষ্টি হট লেমন চা, টক ঝাল মিষ্টি কোল্ড লেমন চা, টক ঝাল মিষ্টি হট জলপাই চা, টক ঝাল মিষ্টি কোল্ড জলপাই চা, টক ঝাল মিষ্টি হট কাঁচা আমের চা, নরমাল মাল্টা চা, টক ঝাল মিষ্টি মাল্টা চা, টক ঝাল মিষ্টি কোল্ড মাল্টা চা, কমলা চা, টক ঝাল মিষ্টি হট কমলা চা, টক ঝাল মিষ্টি কোল্ড কমলা চা, টক ঝাল মিষ্টি হট চালতা চা, টক ঝাল মিষ্টি কোল্ড চালতা চা, টক ঝাল মিষ্টি হট কদবেল চা, খাঁটি গরুর দুধের চা, স্পেশাল মসলা দুধ চা, স্পেশাল মালাই চা, স্পেশাল তুর্কি চা, গুরের দুধ চা, তাল মিশ্রি দুধ চা, তাল মিশ্রি এলাচ লবঙ্গ দুধ চা ও লবঙ্গ এলাচ দুধ চা।

মনির জানান, ২০০০ সালে এসএসসি পাশ করে অভাবের সংসারে হাল ধরার জন্য ঢাকা শহরে এসে গার্মেন্টেসে চাকরি শুরু করেন। গার্মেন্টস থেকে যে বেতন পেতেন তা দিয়ে নিজেই ভালোমতো চলতে পারতেন না। তাই তিনি চাকরি ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যান। পরে কিছু একটা করার ভাবনা থেকে চায়ের দোকান দেওয়ার কথা ভাবেন। বিভিন্ন দোকানে চা বানানো দেখে ও ইউটিউবের সহযোগিতায় শিখে নেন চা বানানোর কৌশল। এরপর মুক্তিসেনা স্কুলের সামনে বৃদ্ধাশ্রমের পাশে চা বিক্রি শুরু করেন। শুরুর দিকে তিনি ১৫ রকমের চা বানাতেন। বর্তমানে তার দোকানে ৮০ ধরনের চা পাওয়া যায়। এছাড়াও দোকানে বাহারি ধরনের পানও বিক্রি করেন তিনি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আগুন পান। এখন দোকান থেকে তার মাসে আয় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। দোকানের আয় দিয়েই সংসার ও ভাই-বোনদের পড়ালেখা করান তিনি। একসময় অনেক অভাবে দিন পার করলেও এখন চায়ের দোকান দিয়ে তার ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। 

তিনি আরও জানান, তাকে দেখে অনেক বেকার যুবকরাও চায়ের দোকান দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। অনেকে তার কাছ থেকে চা বানানোর কৌশল শিখেছে। 

মনিরের দোকানে নিয়মিত চা খেতে আসেন মাদারীপুর  সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র সোহান ইসলাম। সে ঢাকা পোস্টকে বলে, মাদারীপুর জেলার সবচেয়ে সুস্বাদু চা পাওয়া যায় মুক্তিসেনা বৃদ্ধাশ্রমের পাশে মনির ভাইয়ের দোকানে। আমরা বন্ধুরা মিলে প্রায়ই এখানে চা খেতে আসি। আমরা ‘দুবাই চা’ বেশি খাই।

গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাহাত ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ক্যাম্পাসের বন্ধুরা মিলে ২০০ টাকা ভাড়া দিয়ে প্রতি শুক্রবার এখানকার চায়ের অতুলনীয় স্বাদ নিতে আসি। এখানকার চা অন্য সব দোকানের চা থেকে আলাদা। 

পাঁচখোলা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. তিনু হাওলাদার বলেন, মনিরের চায়ের দোকানে নাম এখন জেলা জুড়ে বিস্তৃত। আমি শহরের যেখানে যাই প্রতিটা লোকের কাছেই শুনি, মনিরের দোকানের চায়ের কথা। আমি নিজেই তার দোকানের চা খেয়েছি। তার দোকানে তুর্কি, আয়ুর্বেদিক ও দুবাই চায়ের চাহিদা বেশি।

প্রসঙ্গত, শাহরিয়ার মনিরের টি স্টোরের সুস্বাদু চা খেতে চাইলে আসতে হবে মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের মুক্তিসেনা সামনে বৃদ্ধাশ্রমের পাশে। এখানে এসে যে কাউকে জিজ্ঞাসা করলে মনিরের চা স্টোরটি দেখিয়ে দেবে।-ঢাকা পোস্ট

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে