সোমবার, ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১০:২৯:১৯

অদৃশ্য সাপ আতঙ্কে মাদারীপুরের ৩৭টি গ্রাম !

অদৃশ্য সাপ আতঙ্কে মাদারীপুরের ৩৭টি গ্রাম !

মাধারীপুর : গত চার দিনে সদর ও রাজৈর উপজেলার প্রায় ৩৭টি গ্রামের তিন শতাধিক মানুষ অদৃশ্য সাপের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে ওঝা ও কবিরাজের শরণাপন্ন হয়েছেন। অদৃশ্য সাপের কামড়ের গুজবে এক আতঙ্কিত জনপদে পরিণত হয়েছে মাদারীপুর। আতঙ্কে অনেকেই নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, সাপের কামড় নয়, ছোট ছোট পোকার কামড়ে শরীরে ক্ষতের সৃষ্টি হচ্ছে। এ ব্যাপারে মেডিকেল টিম কাজ করছে বলে মাদারীপুরের সিভিল সার্জন দাবি করেছেন।


সাপ আতঙ্কে ভুগছে মাদারীপুরের ৩৭টি গ্রামের মানুষ। এরই মধ্যে গ্রামবাসীর চিকিৎসা নিতে জড়ো হয়েছে স্থানীয় ওঝা ও কবিরাজের কাছে। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছে, এদের কেউই সাপে কাটা রোগী নয়। ওঝার ছড়ানো গুজবে আতঙ্কিত তারা। এই সুযোগে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারকরা। এই ঘটনার তদন্তে কাজ শুরু করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

তন্ত্রমন্ত্রে চলছে সাপের বিষ নামানোর কাজ। ওঝা আবাল কালামের দাবি এই সাপ সাধারণ কোনো সাপ নয়। এই সাপের নাম হচ্ছে জ্বিন সাপ। এই সাপটাই সব রোগীকে কামড় দিয়েছে। ওঝা আবুল কালাম বলেন, আমরা জ্বিন সাপের মন্ত্র পড়ে এই বিষ নামাই। এই সাপকে দেখা যায় না। এই সাপকে দেখলেই মানুষ বেঁহুশ হয়ে যায়।

রাজৈর উপজেলার ইশিবপুর ইউনিয়নের মুসারকান্দি, লুন্দি, হাসানকান্দি, মাঝকান্দি, সাতবাড়িয়া এবং সদর উপজেলার শ্রীনদী, চরনাচনা, বাহাদুরপুর, কালীর বাজার, জাফরাবাদ, কালিকাপুর, দক্ষিণ বীরাঙ্গল, পশ্চিম বাহাদুরপুর, হবিগঞ্জ, মীরাকান্দি, রাধার বাড়ি, সৈয়দ নূর, দুধখালি, ধুরাইল ইউনিয়নের ১১ গ্রাম, কুনিয়া ইউনিয়নের আট গ্রামবাসীসহ ৩৭ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ চার দিন ধরে অদৃশ্য সাপ আতঙ্কে ভুগছেন। ঘুমের ঘোরেও এখন সাপ দেখছেন এসব এলাকার মানুষ। অনেক সময় স্বপ্নে সাপ দেখে চিৎকার দিয়ে জেগে উঠছেন। ভয়ে মানুষ ঘরের কোনায় কোনায় তাবিজ দিচ্ছেন। দলবেঁধে চলছেন সবাই। নারীদের মধ্যেই এ আতঙ্ক বেশি বিরাজ করছে।

সম্প্রতি বাহাদুরপুরে এক গৃহবধূ মারা যান সাপের কামড়ে। এরপর এথকেই অদৃশ্য সাপ আতঙ্কে ভুগছেন মাদারীপুরের গ্রামবাসীরা। আতঙ্কিত গ্রামবাসীরা বলছে, আমরা গ্রামের সব মানুষ একটা আতঙ্কের মধ্যে আছি। আমরা সাপের আতঙ্কে ঘর থেকে বাহিরে বের হই না। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, পরীক্ষা করে দেখা গেছে ওঝার সরণাপন্নদের কেউই সাপে কাটা রোগী নয়।

মাদারীপুর রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. একরাম হোসেন বলেন, এটা হচ্ছে এক ধরনের পোকা। এই পোকার কারণেই রোগীদের শরীরে লাল দাগ হয়ে যায় এবং কিছু ব্যাথা অনুভব হয় এর বাইরে কিছুই না। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে কোনো রোগী নিজের চোখে সাপ দেখেনি।

জেলার সিভিল সার্জনরা বলছেন স্থানীয় কিছু লোকেরা এই সাপ আতঙ্ক ছড়িয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে রোগীদের কাছ থেকে। তারা আরো বলেছে দ্রুত এর বিরুদ্ধে পুলিশের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ওঝা কালাম বলেন, এটা (ওঝার কাজ) আমার পৈতৃক সম্পদ। আমার দাদা, বাবা, তার পর আমি এ কাজ করছি। আমি আজকে ৪৫ বছর ধরে বিষ নামাইতেছি। বাবার সময় থেকেই বিষ নামাই। আমি সাপের ওঝা নামে পরিচিত। দুই-চার ইউনিয়নের সবাই জানে আমাকে। এই সাপ দেখা যায় না। এই সাপ কামড় দেয়। রোগী হার্টফেল করে, বেহুঁশ হয়ে যায়। তার খাওয়া-দাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। যখন আমরা ক্ষতচিহ্ন পাই, তখন তার বিষ নামাই। যার ক্ষতচিহ্ন পাই না, তার বিষ নামাই না। টাকাটা কোনো বিষয় না। খুশি হয়ে যে যা দেয়। কেউ পাঁচশ দেয়, কেউ দুইশ দেয়, কেউ তিনশ দেয়। এভাবে বকশিশ দেয়।’

রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. একরাম হোসেন বলেন, আমরা যেটুকু জানতে পেরেছি, স্থানীয় কয়েকজন ওঝা মানুষকে ভুল তথ্য দিচ্ছে এবং তাদের ভালো ব্যবসা হচ্ছে। আসলে আমাদের মেডিকেল টিম গতকাল পুরো সন্ধ্যা ওখানে ছিল, তারা ছবি তুলে এনেছেন। তারা পরিষ্কারভাবে দেখেছেন, সাপের কামড় নয়, সিম্পলি ইনসেক্ট বাইট (পোকার কামড়) ছোট ছোট পোকা। এই পোকার কামড়ে স্কিনে রেড স্পট তৈরি হচ্ছে। এর বাইরে কিছুই না।

স্থানীয় সচেতন জনসাধারণ প্রশাসনের প্রতি এসব প্রপাগান্ডা ও গুজবের বিরুদ্ধে সঠিক তথ্য প্রচারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মনের আতঙ্ক দূর করার উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।
১৫ মে, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে