মাদারীপুর : জিপিএ-৫ এর আনন্দে যখন ভাসছে দেশ তখনই অজানা শঙ্কা এসে ভর করেছে মাদারীপুর জেলার শিবচর থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া অদম্য মেধাবী দুই শিক্ষার্থীর ওপর।
দারিদ্রতার কষাঘাতে পিষ্ট হতে হতে গ্রামীণ পরিবেশে বড় হয়ে উঠা এই দুই শিক্ষার্থীর মুখে জিপিএ-৫ পাওয়ার আনন্দ এসে ভর করতে পারেনি। আনন্দের বদলে উচ্চশিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে ভালো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার শঙ্কায় মুখ মলিন হয়ে আছে ওদের।
বিজ্ঞান বিভাগ থেকে চলতি বছর জিপিএ-৫ নিয়ে পাশ করা এই দুই শিক্ষার্থীর বাড়ি মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার নলগোড়া এলাকায়। পৌর এলাকার খানকান্দি সৈয়দ আশরাফ আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পাস করলো নুপুর মালো ও বিথী সূত্রধর নামের দরিদ্র দুই শিক্ষার্থী। ওদের ভালো ফলাফল সবার মুখে হাসি এনে দিলেও আর্থিক দৈন্যতা ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার অন্তরায় হবে এই শঙ্কাবোধ করছেন দরিদ্র এই দুই পরিবার।
বিথীর বাবা একজন কাঠমিস্ত্রি। আর নুপুরের বাবা জেলে। দুই জনেরই সংসারে নুন আনতে পানতা ফুরায় অবস্থা।
তাদের দুই জনের ঘরেই নেই পড়ার চেয়ার টেবিল ও আসবাবপত্র। ছোটবেলা থেকে বই খাতা নিয়ে বিছানায় বসে পড়াশুনা করেছে তারা। দারিদ্র্যকে জয় করে অদম্য এই মেধাবী জিপিএ-৫ পেয়ে তারা মা বাবার মুখ উজ্জ্বল করেছে ঠিকই। কিন্ত পরীক্ষায় ভালো করেও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া নিয়ে উভয় পরিবারের মাঝে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
নুপুর মালো :
শিবচর পৌর এলাকার ৭নং ওয়ার্ডের নলগোড়া গ্রামের অধিকার বাড়ির শংকর মালোর মেয়ে নুপুর মালো এ বছর খানকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পায়। তার তার বাবা একজন জেলে আর মা যমুনা রানী মালো গৃহিনী। বড়বোন সেতু মালো স্থানীয় সরকাইর বরহামগঞ্জ কলেজে কলেজে বিএ পড়ে।
নুপুরের বাবা শংকর মালো জানান, ‘তার সামান্য আয়ে দুইজনের পড়াশুনার খরচ বহন করা তার পক্ষে খুবই কষ্টকর ব্যাপার।’
এদিকে ভালো ফলাফল অর্জন করে ভালোভাবে লেখাপড়া করানোর দায়বদ্ধতা চেপে ধরেছে দরিদ্র এই বাবাকে। আর তাই আর্থিক দৈন্যতা বারবারই ভাবিয়ে তুলছে তাকে।
বিথী সূত্রধর :
শিবচর পৌর এলাকা ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নলগোড়া গোকুল সূত্রধরের মেয়ে বিথী সূত্রধর। তার বাবা পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি। মা পলি রানী সূত্রধর গৃহিনী। কাঠমিস্ত্রির স্বল্প আয়ের সংসার চালানোই কষ্ট। প্রতিদিনের সামান্য আয়ে তার সংসারই চলে না। মেয়ের ভালো ফলাফলে খুশি বাবা-মা। খুশি হলেও বিথীর উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যত নিয়ে দুঃচিন্তাই দিন কাটছে পরিবারের সদস্যরা।
বিথির বাবা গোকুল সূত্রধর বলেন, ‘কাঠমিস্ত্রির কাজ করে সামান্য টাকা রোজগার করি। দিন আনি দিন খাই। মেয়েকে ভালো কলেজে পড়ানোর ইচ্ছা থাকলেও আর্থিক খরচ চালানোর সামর্থ আমার নাই। ওকে নিয়ে দুঃচিন্তায় আছি।’
শিবচর পৌর এলাকার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. নোয়াব মিয়া মেধাবী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার খরচ বহন করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এবং সমাজের বিত্তবান এবং সরকারে কাছে সাহায্য সহযোগিতা কামনা করেছেন।
খানকান্দি সৈয়দ আশরাফ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষাক মো. ইদ্রিস আলী ফকির জানান, ‘বিথী সূত্রধর ও নুপুর মালো দুইজনেই অত্যন্ত মেধাবী। তারা অস্বচ্ছল পরিবারে মেয়ে। তাদের লেখাপড়ার জন্য আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষিকরা বেশ সাহায্য করেছেন। কিন্ত এখন তাদের উচ্চ শিক্ষার পথে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হলে আরো সাহায্যের প্রয়োজন।’ -বাংলামেইল
১৫ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম