বুধবার, ০৩ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০২:২১

খাতায় যা লিখে গেল, ভণ্ড ফকিরের লালসায় কলেজছাত্রীর আত্মহত্যা

খাতায় যা লিখে গেল, ভণ্ড ফকিরের লালসায় কলেজছাত্রীর আত্মহত্যা

মানিকগঞ্জ : ভণ্ড ফকিরের লালসার শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন এক কলেজছাত্রী।  রোববার রাতে নিজ কক্ষে আড়ার সঙ্গে ঝুলে ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করেন।

ওই ছাত্রীর নাম নুরজাহান আক্তার মলি।  তিনি শিবালয় সদর উদ্দিন কলেজের ইংরেজি (অনার্স) প্রথমবর্ষের ছাত্রী ছিলেন।  

তার বাবার নাম আবদুল গফুর।  বাড়ি শিবালয় উপজেলার উলাইল ইউনিনের দশচিড়া গ্রামে।

এ ঘটনায় ভণ্ড ফকির আওলাদ হোসেন পাগাইল্যাকে (৫৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

আত্মহত্যার আগে মলি নিজের খাতার শেষ পৃষ্ঠায় লিখে যান- ‘My college life is end. অনার্সের রেজাল্টটাও শুনে যেতে পারলাম না।  ইচ্ছা ছিল- কোর্সটি শেষ করার তাও হল না।  জীবনে অনেক আশা ছিল, কিন্তু সব শেষ।  কপালে যা এনেছিলাম, তাই ভোগ করে মৃত্যুর মুখে চলে গেলাম।  কখনো ভাবি নাই- আমার জীবন আমি শেষ করে দিব।  কিন্তু ভাগ্য আমাকে করালো।'

অকালে মেয়েকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা ভানু বেগম। মলির মৃত্যুতে শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যরা।  

ভানু বেগম মেয়ে মলিকে হারিয়ে বিলাপ করছেন। তিনি জানান, চিকিৎসার নামে ভণ্ড ফকির আমার মেয়েকে পাশবিক নির্যাতনকরেছে।  এ লজ্জায়  আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।'

বোনকে হারিয়ে অসুস্থ কলেজছাত্র আবদুল কাদের মনুও বিলাপ করছেন।  বলছেন, আমার জন্যই আজ আমার বোনকে আত্মহত্যা করতে হলো।  ভণ্ড ফকির আমার অসুখ সারনোর কথা বলে কৌশলে আমার বোনের ইজ্জত হনন করেছে।  এজন্য লজ্জায়, ক্ষোভে আত্মহত্যা করেছে।

আবদুল কাদের জানান, দীর্ঘদিন ধরে তিনি অসুস্থ। তার চিকিৎসার জন্য পার্শ্ববর্তী গহেরপুর গ্রামের ফকির ও কবিরাজ পাগাইল্যাকে আনেন বাবা।

ফকির পাগাইল্যা তার বাবাকে জানায়, তোমার ছেলের অসুখ ভালো করতে আমার সঙ্গে একটি ঘরে তোমাদের বংশের যুবতী মেয়েকে দিতে হবে। ফকিরের কথায় রাজি হন বাবা।

কাদের জানান, ফকিরের কথামতো বাবা বোন মলিকে একটি গামছা পরিয়ে আমাদের ঘরের একটি কক্ষে ফকিরের কাছে পাঠান।  ফকির শর্ত দেয়, আমার চিকিৎসা ও ঝাঁড়-ফুকের সময় কেউ অন্য ঘর থেকে বের হতে পারবে না।  সে যে কক্ষে থাকবে সে কক্ষের ভেতরে কেউ উঁকিও দিতে পারবে না।

তিনি জানান, ফকিরের শর্ত মেনে সবাই একঘরে গিয়ে আশ্রয় নেই।  রাত আনুমানিক ৭টার দিকে মলিকে নিয়ে ভণ্ড কবিরাজ পাশের অন্য একটি ঘরে গাছের শেকড়সহ কবিরাজি উপকরণ নিয়ে প্রবেশ করে।

কাদির জানান, টানা ছয় ঘণ্টা ঘরের ভেতর অবস্থানের পর ফকির চলে যায়।  কবিরাজ চলে যাওয়ার পর তার বোন মলি অসুস্থ হয়ে পড়েন। কথা-বার্তা ও খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেন।  

শুধু তার দু'চোখ বেয়ে পানি পড়তে থাকে।  তবে ফকিরের এমন নিপীড়নের বিষয়টি কারো কাছে বলেনি তিনি।

ঘটনার একদিন পর রোববার দিবাগত গভীর রাতে নিজ শয়ন কক্ষের আড়ার সঙ্গে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেন মলি।

শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) মনিরুল ইসলাম জানান, ভণ্ড ফকির আওলাদ হোসেন পাগাইল্যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।  মলির বাবা আবদুল গফুর বাদী হয়ে শিবালয় থানায় মামলা করেছেন।
২ আগস্ট,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে