ময়মনসিংহ থেকে: অর্থের অভাবে তুহিন মিয়ার বড় ও ছোট ভাইদের লেখাপড়া হয়নি। তবে দমে যায়নি সে। দৃঢ় মনোবল, কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় আর মনের জোরে অসম্ভবকে সম্ভব করেছে তুহিন।
ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করে সে এবছর এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে। তুহিনের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর শহরের সতিশায়। সে গৌরীপুর আরকে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র।
প্রাথমিক ও জেএসসি পরীক্ষায়ও সে জিপিএ-৫ অর্জন করে। তার বাবা আবদুস সোবহান মিয়া মিষ্টির দোকানে কাজ করেন। মা পারুল আক্তার গৃহিনী।
তিন ভাই এক বোনের মধ্যে তুহিন দ্বিতীয়। অভাবের কারণে তুহিনের বড় ভাই শাহিন মিয়া ও ছোট বোন রুনা আক্তার পড়াশোনা করতে পারেনি।
সংসারের হাল ধরতে শাহিন ইটভাটায় ও রুনা ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে কাজ নেয়। সবার ছোট ভাই তৌফিক ইসলাম শিশু শ্রেণিতে পড়েন।
তুহিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছোট একটি খুপড়ি ঘরে তাদের বসবাস। টিনের চালেও রয়েছে অসংখ্য ছিদ্র। এ ঘরের একটি চৌকির কোণে বইখাতা রেখে চলতো তার পড়াশোনা।
তুহিন জানায়, জেএসসি পাশ করার পর তার পরিবারের পক্ষ থেকে লেখাপড়া খরচ চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই পড়ালেখার খরচ চালানোর জন্য সে স্থানীয় ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ নেয়।
সেই আয়ের টাকা দিয়েই পড়াশোনা ও কোচিংয়ের খরচ চালিয়ে এবার এসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে সে।
তুহিন বলে, ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করার কারণে মাঝে মাঝে স্কুলে যেতে পারতাম না। কিন্তু রাত জেগে ঠিকই পড়াশোনা করতাম।
বর্ষাকালে পড়াশোনা করতে অনেক কষ্ট হতো। টিনের চালের ছিদ্র দিয়ে বৃষ্টি পানি পড়ে বইখাতা ভিজে যেতো। তুহিন আরও বলে, আমার ভালো ফলাফলের পেছনে আমার মা ও মালেক স্যারের অনুপ্রেরণা ছিলো সবচেয়ে বেশি।
ফল শোনার পর মা আমাকে জড়িয়ে ধরিয়ে ধরে আনন্দে অনেকক্ষণ কেঁদেছেন। তখন আমারও চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে আসে। তুহিনের এ সাফল্যে তার বাবা-মা অনেক খুশি।
তুহিন জানায়, সে এখন স্বপ্ন দেখে পড়াশোনা করে ডাক্তার হওয়ার। তবে অভাবের কারণে তার উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হওয়ার বিষয় নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তুহিনের বাবা আবদুস সোবহান মিয়া বলেন, 'ছেলে পাশ করছে আমরা অনেক খুশি হইছি কিন্তু আমরার তো টেকা নাই কলেজে কিভাবে পড়ামো ছেলেডারে।'
গৌরীপুর রাজেন্দ্র কিশোর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শরীর চর্চা শিক্ষক আব্দুল মালেক বলেন, মেধাবী তুহিন অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের ছেলে।
ক্রিকেটে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের ক্ষুদে ক্রিকেটার হিসাবে সুনাম রয়েছে। আমরা তার সাফল্যে অনেক গর্বিত।
এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস