ময়মনসিংহ থেকে : রিয়াজের মৃত্যুদণ্ডাদেশের খবর শুনে আনন্দে কাঁদলেন সুনতী। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়ার আলবদর কমান্ডার রিয়াজ উদ্দিন ফকিরকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়ার খবর শুনে আনন্দে কাঁদলেন বীরাঙ্গনা সুনতী রানী দাস।
আজ বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তাকে এ দণ্ডের আদেশ দেয়া হয়। বীরাঙ্গনা সুনতীর বাড়ি উপজেলার কালাদহ ইউনিয়নের হোরবাড়ী গ্রামে। তার স্বামীর নাম ডিগী চন্দ্র দাস। দুই ছেলে এক কন্যা সন্তানের মা তিনি। নিজস্ব কোন জায়গা-জমি না থাকায় থাকেন পরের জমিতে। এখনো পাননি বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি।
সরেজমিনে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সুনতীর বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, মনের ভিতর কিসের চিন্তা যেন তাকে পুড়ে খাচ্ছে। বয়সের ছাপ তার শরীরে স্পষ্ট। সোজা হয়ে দাঁড়াতে তার কষ্ট হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের কথা বললেই তিনি বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের ৮ বছর আগে তার বিয়ে হয়। তার বাপের বাড়ি একই গ্রামে। যুদ্ধ চলার সময় তার কোলে দেড় বছরের ছেলে সন্তান নিত্যানন্দ ছিল।
যুদ্ধের প্রসঙ্গ নিয়ে আলাপচারিতায় সুনতী রানী বলেন, কতদিন পালিয়ে থাকা যায়। রাত হলেই দল বেঁধে বাড়িতে আসতো রাজাকাররা। একদিন পালাতে না পারায় ১০-১২ জন রাজাকার তার সর্বস্ব লুট করে নেয়। তার স্বামী ছিল সজল সরল মানুষ। তার শাশুড়ি সব দেখভাল করতো। ফলে তার সংসার ভাঙেনি।
তিনি জানান, মানবতা বিরোধী অপরাধ মামলায় সুনতীর সর্বস্ব লুটের বিষয়টি থাকলেও আজ পর্যন্ত বীরাঙ্গনা হিসাবে সরকারি কোন স্বীকৃতি পাননি। পরের জমিতে বাস করা সুনতীকে সহায়তার জন্য আজ পর্যন্ত কেউ এ গিয়ে আসেনি।
পরের জমিতেই দুই সন্তান ও ছেলের বৌ নাতি-নাতনী ও স্বামী নিয়ে খেয়ে না খেয়ে চলছে তার সংসার। ফুলবাড়ীয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার লীরা তরফদারকে সুনতী রানীর বিষয়টি অবগত করলে তিনি জানান, এটি তার জানা নেই।
তিনি খোজ নিবেন বলে জানান। সুনতী আরও জানান, আলবদর কমান্ডার রিয়াজ উদ্দিন ফকিরের মৃত্যুদণ্ডাদেশে তিনি খুশি হয়েছেন। তিনি বলেন, 'চাওয়ার কি আছে বাঁচবও আর কতদিন। শেষ বয়সে যদি বীরাঙ্গনা উপাধি নিয়ে মরতে পারি এর চেয়ে পাওয়ার কি আছে।'
উল্লেখ্য, এ মামলার প্রথম দিকে তিনজন আসামি ছিলেন। তারমধ্যে রাজাকার আমজাদ আলী গ্রেফতারের পর মারা যাওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আনা হয়নি। অভিযোগ গঠনের আগেই বিদ্যানন্দ গ্রামের রাজাকার ওয়াজ উদ্দিন মারা যাওয়ায় তাকেও অভিযোগ থেকে বাদ দেয়া হয়।
মামলার বাদী ভালুকজান গ্রামের খোরশেদ আলী জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তার বাবা তালেব আলীকে ভালুকজান আখিলা নদীর উপর ব্রিজের উপর দাড় করে গুলি করে হত্যা করে রিয়াজ উদ্দিন ফকির। খোরশেদ আলী জানান, তিনি এ রায়ে খুশি হয়েছেন। এ রায় দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য তিনি দাবী জানা।
এমটিনিউজ২৪/এম.জে/ এস