ময়মনসিংহ: স্বামীকে বেঁধে রাখলেন স্ত্রী, তাও আবার বাসরঘরে! এটা পরে নিশ্চিয় অবাক হচ্ছেন? হবারই কথা। কেননা, স্বামী-স্ত্রী। পৃথিবীর সবচেয়ে আপন এবং মধুর একটি সম্পর্কের বন্ধন। বিবাহ স্বামী-স্ত্রীর মাঝে একটি সুদৃঢ় বন্ধন।
কিন্তু, সম্প্রতি ময়মনসিংহে যে ঘটনা ঘটেছে তাতে সবার মাথায় হাত। তাহলে ঘটনাটি খুলে বলা যাক- মাত্র ২৫ দিন আগের বাসররাতের স্মৃতি এখন তাড়িয়ে বেড়ায় মেয়েটিকে (১৯)। গায়ে হলুদের গন্ধ যায়নি, মেহেদির রং মোছেনি। এর মধ্যেই তিনি জানতে পারেন, যাকে তিনি স্বামী হিসেবে পেয়েছেন, সে সত্যিকারে জীবন সঙ্গী নয়, ভন্ড প্রতারক। ওই ব্যক্তি এর আগেও একাধিক বিয়ে করেছে। তাকেও টাকার লোভে বিয়ে করেছে। এরই মধ্যে ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে লাপাত্তা হন।
এর পর ওই প্রতারক স্বামীকে কৌশলে ডেকে এনে সেই বাসরঘরেই শিকলে বেঁধে রেখেছেন তিনি। উপযুক্ত বিচারের আশায় তিনি এ কাজ করলেও বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) পর্যন্ত তিন দিনেও স্বামীর পরিবারের কেউ আসেনি। শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ গিয়ে ওই ব্যক্তিকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, প্রতারণার শিকার মেয়েটির বাড়ি নান্দাইল পৌরসভার চারআনিপাড়া মহল্লা। ১ লাখ ৭০ হাজার টাকার দেনমোহরে গত ২৩ সেপ্টেম্বর তার বিয়ে হয় কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের মৃত মতি মিয়ার ছেলে আলী আকবরের (২৫) সঙ্গে। বিয়ের তিন দিন পর যৌতুকের ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায় বর আলী আকবর। পরে অনেক খোঁজ করেও তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। একপর্যায়ে ফোন করে কৌশলে আলী আকবর কে বাড়িতে আনতে সক্ষম হন ওই নারী।
বাড়িতে আসা মাত্রই, বসতঘরের বারান্দায় আলাদা একটি কক্ষে বর আলী আকবরকে কোমরে শিকল বেঁধে সিমেন্টের খুঁটির সঙ্গে আটকে রাখা হয়েছে। একই ঘরে তাদের বাসর হয়েছিল বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগী ওই নারীর বাবা জানান, স্থানীয় মো: জালাল উদ্দিনের কথায় মেয়েটিকে ধুমধাম করে বিয়ে দেয়া হয়। এ সময় বরের কোনো অভিভাবক না এলেও তার (জালাল) কথার ওপর ভিত্তি করে এই বিয়েতে রাজি হন। কিন্তু, বিয়ের তিন দিন পর যৌতুকের টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান তিনি।
পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর আলী আকবর এর আগে আরও দুইটি বিয়ে করেছে। প্রথম স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে গেলেও দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে দিব্যি ঘর সংসার করছে সে। ওই সংসারে তার দুটি সন্তানও রয়েছে। দ্বিতীয় সন্তান জন্মের দিন সে তৃতীয় বিয়ে করে।
ওই মেয়েটির বাবা আরও জানান, তার আদরের মেয়েকে ফেলে চলে যাওয়ার পর আলী আকবরকে খোঁজ করতে বাজিতপুর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে মেয়েকে দিয়ে বলা হয় তার (বর) চাহিদার আরও ৩০ হাজার টাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য। ব্যস, এই ফাঁদে পা দেন বর আলী আকবর। এরপর গত মঙ্গলবার বাড়িতে এনে তাকে আটকে রাখা হয়।
তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ের মহা সর্বনাশ করেছে সে। এখন তার পরিবারের লোকজন এসে একটা ফয়সালা করে তাকে ছাড়িয়ে নিতে হবে। অন্যথায় থানায় অভিযোগ দেব।’
এদিকে আলী আকবর তার আগের দুটি বিয়ে করার কথা স্বীকার করে জানায়, সে আতর আলী নামের এক ঘটকের ফাঁদে পড়ে আগে বিয়ে করার কথা গোপন করে এই বিয়েটি করেছে। এই বিয়ের জন্য ঘটককে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে।
আলী আকবর বলেন, ‘আমি ভুল করেছি। আমার এক বছর বয়সের ছেলে ও ২৫ দিন বয়সের এক কন্যাসন্তান রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, এখন তাকে ক্ষমা করে দিলে নতুন স্ত্রীকে নিয়ে সে ঘর-সংসার করবে।
অন্যদিকে প্রতারণার শিকার মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘এই প্রতারকের ঘর আমি করব না। আমার তো সব শেষ। আমি এর (বর আলী আকবর) বিচার চাই। বিচার না করলে এই জীবন রাখব না।’
এ বিষয়ে নান্দাইল থানার ওসি কামরুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) রাতে পুলিশ গিয়ে প্রতারক আলী আকবরকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। থানায় অভিযোগ দিতে সঙ্গে প্রতারণার শিকার মেয়ে ও তার বাবা থানায় আসেন।
এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান ওসি কামরুল ইসলাম জানান।
এমটিনিউজ২৪.কম/হাবিব/এইচআর