মযমনসিংহ: ময়মনসিংহের গফরগাঁও থেকে নির্বাচিত এক সময়ের দাপুটে সংসদ সদস্য এনামুল হক জজ (৮০) অর্থাভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা করাতে সরকারের সহযোগিতা চান তিনি। চোখের সামনে দাপুটে এমপির এমন অবস্থায় হতবাক স্থানীয়রা।
জাতীয় পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদের পালিত মেয়ে নাজুকে ১৯৭২ সালে বিয়ে করেন এনামুল হক জজ। পরে ১৯৮৩ ও ১৯৮৬ সালে ময়মনসিংহ-১০ গফরগাঁও আসন থেকে জাতীয় পার্টির হয়ে দু’বার সংসদ সদস্য হন তিনি।
এক সময় তার গফরগাঁও পৌর শহর ও ঢাকায় বিলাসবহুল বাড়ি ছিল। কিন্তু সর্বশেষ পৌর শহরে ১২ শতাংশ জমি মসজিদের নামে লিখে দিয়ে এক রুমের ভাড়া বাসায় থাকছেন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে। খাট কেনার সামর্থ্য না থাকায় মেঝেতেই ঘুমান তিনি।
প্রথম স্ত্রী নাজু এক মেয়েকে নিয়ে আমেরিকায় থাকেন। দ্বিতীয় স্ত্রী নাছিমা হক ঢাকার পুরানা পল্টন ও মিরপুর কাজী পাড়ায় দুই সন্তান নিয়ে দুটি বাড়িতে থাকেন। সহায় সম্পদ যা ছিল সবই এই দুই স্ত্রী ও সন্তানদের নামে লিখে দিয়েছিলেন এনামুল হক।
বর্তমানে তিনি তৃতীয় স্ত্রী রুমার সঙ্গে পৌর শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডে ভাড়া বাসায় ৮ বছরের সন্তান নুরে এলাহীকে নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।
নিজেকে একজন মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে এনামুল হক বলেন, আমি ক্ষমতায় ছিলাম, কিন্তু ক্ষমতার অপব্যবহার করিনি। আমি তখন ইচ্ছা করলেই মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নিতে পারতাম। কিন্তু নিইনি। আমি কোনোদিন ভাবতেও পারিনি শেষ বয়সে এসে আমার এমন অবস্থা হবে। তিনি বলেন, এই শেষ জীবনে আমার একটা ঘর দরকার। আমার আয়ের কোনো উৎস নেই। আমি সরকারের কাছে দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের নিশ্চয়তা চাই।
মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার বিষয়ে স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, আমরা আটজনের একটি দল নিয়ে চলে যাই ভারতের মেঘালয়ে। সেখান থেকে এক মাস পরে ফিরে আসি কিশোরগঞ্জের ফুলতলায়। নির্দেশ আসে হোসেনপুর হয়ে নদী পেরিয়ে গফরগাঁও অপারেশনের।
একটি বাজারের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে কখনো রাস্তায় কখনো বাড়িঘরের ভেতর দিয়ে যাই। গন্তব্য কালীবাড়ির (বর্তমান গফরগাঁও ইমামবাড়ি) কাছে একটি পাটক্ষেত। সেখানে এসএলআর বিনিময় হবে বিকেল ৪টায়। সময়মতো চলে আসি হোসেনপুর হয়ে নদী পেরিয়ে। হেঁটে চলে আসি গন্তব্যে।
হঠাৎ দেখি ১০-১২ বছরের একটি ছেলে আমাকে ইশারায় ডাকছে। কাছে গেলাম। একটি চিরকুট হাতে দিয়ে ছেলেটি উধাও। লেখা ছিল তাড়াতাড়ি কেটে পড়ো। সমস্যা আছে। নতুন জায়গার কথা লেখা ছিল চিরকুটে। সেখানে পরদিন সন্ধ্যায় যেতে হবে। হঠাৎ পাক বাহিনীর উপস্থিতি টের পাই। পালাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ধরা পড়লাম।
যখন জ্ঞান ফিরল, দেখি আমি গফরগাঁও ডাকবাংলোর আমগাছে ঝুলে আছি। হঠাৎ কানে ভেসে এল এটা মৌলানা সাহেবের লোক। আমাকে ছেড়ে দেয়া হলো। যিনি আমাকে ছাড়িয়েছেন তার কাছে জীবন বাঁচানোর জন্য আমার পরিবার কৃতজ্ঞতা জানাল।
এনামুল হকের তৃতীয় স্ত্রী রুমা আক্তার বলেন, ওনার প্রথম ও দ্বিতীয় স্ত্রী খুব সুখেই আছেন। অথচ খেয়ে না খেয়ে আমার সংসার চলছে। আমি বাচ্চা নিয়ে না পারি ছাড়তে, না পারি থাকতে। এভাবেই জীবন চলছে আমাদের।
স্থানীয়রা বলেন, উনি (এনামুল হক) এক সময় অনেক অর্থ সম্পদের মালিক ছিলেন। দুই বারের এমপিও ছিলেন। তার এখন কিছুই নেই। থাকার একটু জায়গা ছিল। তাও মসজিদের নামে দান করে দিয়েছেন। তার এমন দূরাবস্তা দেখে আমাদের খুব খারাপ লাগে। তিনি একজন সাবেক এমপি ও সম্মানী ব্যক্তি৷ সরকার যদি প্রতি একটু নজর দেয় তাহলে হয়তো সম্মানের সঙ্গে তিনি চলতে পারবেন।
এ বিষয়ে গফরগাঁও পৌরসভার মেয়র ইকবাল হোসেন সুমন বলেন, স্থানীয় এমপি সাহেবের (বাবেল গোলন্দাজ) নির্দেশে তার বাসায় গিয়ে সাধ্যমতো সাহায্য করেছি। তার জন্য স্থায়ী বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হবে এবং সেটা খুব অল্প সময়ের মাঝেই হবে বলে আমি আশাবাদী।