বৃহস্পতিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৩, ১১:৫৯:০২

বাবার কবরের মাটিতে হাত রেখে কান্না করেই যাচ্ছে দুই সন্তান

বাবার কবরের মাটিতে হাত রেখে কান্না করেই যাচ্ছে দুই সন্তান

এমটিনিউজ ডেস্ক: কাতারে প্রায় ১০ বছর অবস্থানকালে দেশে আসেন একবার। এর মধ্যে রেখে যাওয়া দুই সন্তান বড় হয়েছে। সংসারের অভাব দূর হতে থাকে। নতুন ঘরও নির্মাণ হয়েছে প্রবাসীর পাঠানো টাকা দিয়ে।

কিন্তু বিধি বাম! সেখানে কর্মরত অবস্থায় মালিকের বাড়ির সামনে এক পানির ট্যাংকিতে পড়ে বিষক্রিয়ায় তার মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। ১১ দিন পর গত রবিবার (৬ আগস্ট) তার লাশ গ্রামের বাড়িতে এলে এক শোকাবহ পরিস্থিতির অবতারণা হয়। দাফনের পর কবরের কাছ থেকে উঠতে চায় না দুই সন্তান মীম (১৩) ও নাঈম (১০)। আর্তচিৎকার করে তারা বলতে থাকে, ‘আব্বা তুমি আইয়া যে ঘুমাইলা, নতন ঘর দেখবো কেলা?’ এই বলে কবরের মাটিতে হাত রেখে কান্না করেই যাচ্ছে।

এই দৃশ্য দেখে এলাকার লোকজনও কাঁদছে। নিহত উজ্জ্বল মিয়া ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার হালিউড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আবদুল লতিফের ছোট ছেলে। প্রবাস থেকে পাঠানো টাকায় রঙিন টিন দিয়ে বাড়িতে ঘর তোলা হয়েছিল। সেই ঘরে আর ফিরতে পারেননি উজ্জ্বল।

বুধবার দুপুরে নান্দাইল উপজেলার শেরপুর ইউনিয়নের হালিউড়া গ্রামে অবস্থিত বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় নিরবতা। বাড়ির সামনে গ্রামের কয়েকজন নারীকে দাঁড়িয়ে ধাকতে দেখা যায়। জানতে চাইলে বাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে আসেন উজ্জ্বলের বাবা আবদুল লতিফ ও বড়ভাই সোহেল মিয়া।

সোহেল মিয়া জানান, গত ১০ বছর আগে উজ্জ্বল কাতার গিয়েছিলেন। কাতারের দোহায় অবস্থিত ‘মেসার্স সিক্স কনস্ট্রাক্টশন লিমিটেড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান তাকে কাজে লাগায়।

তার কাজটি ছিল প্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি কৃষি জমিতে সেচ সুবিধা নিশ্চিত করা। পানির বড় রিজার্ভার (সংরক্ষাণাগার) থেকে জমিতে সেচের পানি নেওয়া হতো। টানা সাত বছর এই কাজ করার পর উজ্জ্বল ছুটি নিয়ে দেশে ফেরেন। ছুটি শেষে আবারো কর্মক্ষেত্রে যোগ দেন। 

গত ৩০ জুলাই দুপুরে রিজার্ভার থেকে পানি ছাড়তে গিয়ে সমস্যা দেখা দেওয়ায় উজ্জ্বলের এক সহকর্মী পানির রিজার্ভারে নামেন। ওই ব্যক্তি সেখান থেকে না ওঠায় আরেকজন সেখানে নামেন। তিনিও উঠছেন না দেখে উজ্জ্বল আরেক সহকর্মীকে নিয়ে সেই রিজার্ভারে নামেন। তারা কেউ না ওঠায় শেষে ফোরম্যান পদে কর্মরত এক মিশরীয়ও সেখানে নামেন। কিন্তু ওই রিজার্ভারে নামার পর সকলেই বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। 

সোহেল মিয়া আরো জানান, তার ভাইয়ের এমন মৃত্যু পরিবারের কেউ মেনে নিতে পারছে না। নিয়োগদাতা কম্পানি যদি তার ভাইয়ের পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করে তাহলে হয়তো তারা কিছুটা দাঁড়াতে পারবে। অন্যথায় পরিবাটি বেকায়দায় পড়বে।

উজ্জ্বল মিয়ার বড় সন্তান মীম আক্তার (১৩) জানায়, বাবাকে সে ছোটবেলায় দেখেছে। তারপরও প্রতিদিন ভিডিওকলে বাবা তার সাথে কথা বলতো। এ কারণে তার মনে হতো বাবা তার কাছেই রয়েছে। 

বাড়িতে কথা বলার সময় উজ্জলের বাবা আব্দুল লতিফ শুধু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন। হঠাৎ চিৎকার করে বলে ওঠেন, আমার কইলজ্যা কই গেল? অহনতো আর কেউ কইতো না ওষুধ ঠিকমতো খাইও। বাড়ির সামনেই কবর দেখিয়ে বলেন, এই যে আমার বাজান, চিরঘুমে গেছে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে