এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : রঙিন শাড়ি পরে, মেহেদি রাঙা হাতে শ্বশুরবাড়িতে যাওয়া ফারিয়া হাসান ইতি (২৫) শনিবার (১১ মে) বাবার বাড়িতে ফিরে এসেছে সাদা কাফনে। ইতি ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর শহরের সতিষা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মো. আব্দুর রশিদের মেয়ে।
ইতির বাবার অভিযোগ, আমার মেয়ে মরতে পারে না। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। শরীরে আঘাতের চিহ্ন। ঘাড়ে ৩টি ইনজেকশনের সুইয়ের দাগ। হাতে ব্লেড দিয়ে কাটা ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। বাম হাত ভাঙা। কানের একাংশে কালো দাগ রয়েছে। তাকে নির্মমভাবে আঘাতের পর হয়তো ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে বা হত্যা করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মানুষের সেবা করার ব্রত নিয়ে নার্সিং সেবাকে বেছে নিয়েছিল। সব বাধা অতিক্রম করার মানসিকতা ছিল তার। যে কারণে সে কখনো আত্মহত্যা করতে পারে না।
সাভার মডেল থানার ওসি শাহ জামান মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। নিহতের স্বামী মো. শাকিরুল হক শুভকে (৩০) আটক করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
শুভর বাবা ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বালুয়াপাড়ার গোলাম মোহাম্মদ খান পাঠান (ডা. রায়হান) জানান, আমি প্রথম শুনেছি আমার পুত্রবধূ অসুস্থ। পরে জানলাম সে আত্মহ''ত্যা করেছে। ঘরের দরজা ভেঙে প্রতিবেশীরা এসে তাকে উদ্ধার করে। ঘরে ভাত-মাছ-মাংস রান্না করা ছিল। কেউ কিছু খায়নি। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে হয়তো বিরোধ চলছিল।
জানা যায়, ২০২৩ সালের ৮ ডিসেম্বর শুভর সঙ্গে ইতির বিয়ে হয়। ইতি গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে এসএসসি ও ২০১৮ সালে রাজবাড়ি নার্সিং ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা পাস করে।
বর্তমান সাভারে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বিয়ের পর থেকে সাভারের তালতলা বেকারি এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিলেন।
শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে ইতি টানা ৩ দিনের উিউটি শেষ করে বাসায় ফেরেন। সকাল ১০টার দিকে ইতি তার মা পারভীন আক্তারের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি তার মাকে জানান, ‘আমি কী এখানে থেকে মরব; না চলে আসব?’ তখন তার মা ইতিকে জানান, তোদের কী হয়েছে? তখন কোনো কিছুই বলে না। এরপর হঠাৎ আমার মেয়ের চিৎকার শুনতে পাই। এই চিৎকারই, শেষ কথা।
মেয়ের কণ্ঠের শেষ চিৎকার। এরপর থেকে মেয়ের ফোন বন্ধ। মেয়ের জামাই শুভর ফোনে একাধিক নাম্বার থেকে একাধিকবার কল দিলেও ফোন রিসিভ করেনি। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বেয়াই ডা. রায়হান ফোন দিয়ে বলেছেন, মেয়ের কী অবস্থা একটু খোঁজ নেন। তখন আমরা বলেছি, মেয়ের ফোন বন্ধ। জামাইতো কল রিসিভ করে না। এরপর শুভর নাম্বারে কল দিলে কল রিসিভ করেছে। প্রথমে আমরা কেমন আছি এসব জিজ্ঞাস করে। তারপরে বলে ইতি আর নাই। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন করে আমার মেয়েকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমি আমার মেয়ের হত্যার বিচার চাই।
ইতির মৃত্যুতে শোক বইছে এলাকাজুড়ে। ছুটে এসেছে ইতির বান্ধবীরাও। কয়েকদিন আগে বিয়ের মেহেদি রাঙার সেই হাত, বিয়ের শাড়ি আর স্মৃতিময় ঘটনা বলে তারা কান্নায় ভেঙে পড়ছেন।
ইতির বান্ধবী তাসফিয়া জাহান উর্মি জানায়, ইতি অত্যন্ত শান্ত স্বভাবের। সেগুলো স্কুলজীবনে আমাদেরকে পরামর্শ দিতো। সে মৃত্যুর পথ বেছে নেবে বিশ্বাসযোগ্য নয়। এই তো সেদিন রঙিন শাড়ি আর মেহেদি রাঙা হাতে বিদায় জানিয়ে গেলাম। এটাই যে শেষ বিদায়।
ইতির লাশের ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার রাতে গৌরীপুর পৌর শহরের সতিষা গ্রামের বাবার বাড়িতে এসে পৌঁছলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। রাতেই তার লাশ বাবার বাড়ির পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।