সোমবার, ২৩ মে, ২০১৬, ১২:০১:০০

ফকিরের আসনে লড়বেন সেই অধ্যাপক

ফকিরের আসনে লড়বেন সেই অধ্যাপক

ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহ-৩ গৌরীপুর আসনের সংসদ সদস্য ডা. ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকিরের মৃত্যুর পর তার শূন্য আসনের উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান গৌরীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।

২০১৪ সালের ২৪ জুন প্রয়াত এমপি মজিবুর রহমানের ক্যাডাররা অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনকে দিগম্বর করে। এরপর এমপির লোকজন কলতাপাড়ায় দিগম্বর মোড় নামে একটি সাইনবোর্ডও ঝুলিয়েছিল। পরে সমালোচনার মুখে ওই সাইনবোর্ড খুলতে বাধ্য হয় এমপির লোকজন।

স্থানীয় ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২ মে ডা. ক্যাপ্টেন (অব) মজিবুর রহমান ফকিরের মৃত্যুর পরপরই প্রশ্ন উঠেছে কে হবেন গৌরীপুরের পরবর্তী এমপি? রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে এখন তুমুল আলোচনা, কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি?

ইতোমধ্যে গৌরীপুর উপজেলা ও কেন্দ্রীয় কমিটির নবীন-প্রবীণ মিলিয়ে একঝাঁক প্রার্থী মাঠে নেমেছেন এই আসনের অন্তবর্তীকালীন নির্বাচনের প্রার্থী হিসাবে। এই তালিকায় আছেন অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।

এই আসনের অন্যান্য প্রার্থীরা গণসংযোগের পাশাপাশি পোস্টার, ব্যানার, তোরণ নির্মাণ করে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করলে ওই প্রচারণায় ফরিদ উদ্দিনের নাম আসছে ভিন্নভাবে। এমপি মজিবুর রহমানের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করার কারণে উপজেলার কলতাপাড়া বাজারে ফরিদ উদ্দিনকে প্রকাশ্যে দিগম্বর করে এমপির ক্যাডাররা। এরপর ফরিদ উদ্দিনকে ধরে নিয়ে কলতাপাড়া বাজারে ব্যক্তিগত কার্যালয় ‘সেবালয়’ আটকে রেখে একঘণ্টা অমানসিক নির্যাতন করে। ওই সময় ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ময়মনসিংহ মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত ছিলেন।

এ ঘটনার পর এমপি ও তার ক্যাডারদের বিচারের দাবিতে ফুসে উঠে গৌরীপুরের সর্বস্তরের জনতা। ঘটনার প্রতিবাদ ও অপরাধীদের বিচারের দাবিতে এলাকায় হরতাল পালন, উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের নেতৃত্বে মজিবুর রহমানকে এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। থানায় মামলাও হয়। এ সময় প্রায় দেড় মাস মজিবুর রহমান এলাকায় আসতে পারেনি। কিন্তু কিছুদিন পর সব কিছু ধামা-চাপা পড়ে যায়। মামলার মূল আসামিদের বাদ দিয়ে চার্জশিট দেয় পুলিশ।
এরপর আর দিগম্বর হওয়ার বিচার পাননি এই প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা। ২০১৫ সালের অক্টোবরে সরকারি চাকরি থেকে অবসরে আসার পর পুনরায় আওয়ামী লীগের রাজনীতির যুক্ত হন অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন। চলতি বছরের ২৪ মার্চ অধ্যাপক ফরিদের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম মৃত্যুবরণ করেন। ওই জানাজায় দলীয় যেসব নেতাকর্মী শরিক হয়েছিলেন তাদের তালিকা করে বিচার করার ঘোষণা দিয়েছিলেন এমপি মজিবুর রহমান।

গত ২ মে এমপি মজিবুর রহমান ফকিরের মৃত্যুর পর তার শূন্য আসনে নৌকা প্রতীকের প্রত্যাশায় অন্যান্য এমপি প্রার্থীরা যখন প্রচারণা শুরু করেন। ঠিক সেই মুহূর্তে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন প্রার্থী হিসাবে প্রচারণা শুরু করায় রাজনীতি নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে।

প্রার্থিতার বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন বাংলামেইলকে বলেন, ‘মজিবুর রহমান ফকিরের মৃত্যুতে গৌরীপুর স্বৈরাচারের শাসন থেকে মুক্ত হয়েছে। তাই এখানকার মাটি-মানুষের অধিকার রক্ষা, গৌরীপুরের উন্নয়ন ও স্থানীয় রাজনীতিতে সুস্থ ধারা ফিরিয়ে আনার জন্য নির্বাচনে প্রার্থী হতে যাচ্ছি।’

প্রয়াত এমপির প্রতি কোনো রাগ-ক্ষোভ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মজিবুর রহমান ছিলেন একজন বিকৃত রুচির মানুষ। তিনি আমার ওপর অনেক অন্যায়-অত্যাচার করেছেন। যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন তো রাগ-ক্ষোভ ছিলই, তবে এখন তিনি মারা গেছেন একজন মুসলমান হিসাবে আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।’

উল্লেখ্য, ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ১৯৭৩ সালে গৌরীপুর কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সহ-সম্পাদক নির্বাচিত হন, ১৯৭৭ সালে গৌরীপুর উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক, ১৯৭৯ সালে ঢাবি জহিরুল হক হলের যুগ্ম সম্পাদক ও  ১৯৮০ সালে হলের সহসভাপতি, ১৯৮২ সালে গৌরীপুর কলেজে যোগদান, ১৯৮৬ সালে গৌরীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে গৌরীপুর কলেজ সরকারিকরণ হলে তিনি রাজনীতি থেকে অব্যাহতি দিয়ে চাকরিতে যোগদান করেন। -বাংলামেইল
২৩ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে