ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার এক পল্লীর সড়কের পাশে বসে কাঁদছিল সেই তিন শিশু। তিন শিশুর একজন ময়না (১০)।
আজ শুক্রবার দুপুরে ময়না জানায়, তাদের পাশের বাড়ির মিজানুর রহমান বাবুল তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে তাদের বাবা রফিককে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে দুই পা ও একটি হাত ভেঙে দেয়। এ সময় তারা তিন ভাই-বোন পা ধরে আকুতি করলেও কোনো কথা শুনেননি মিজান।
ময়না বলে, আব্বারে ওরা এমনবায় মারছে, তহন মাটিতে রক্ত কুত্তায় খাইছে। স্যার, আপনেরা হের বিচার করুইন।
আহত রফিক গফরাগাঁও সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে গত বুধবার রাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সেখানে ৭ নম্বর ওয়ার্ডে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তিনি।
শিশুদের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার খারুয়া ইউনিয়নের বীর বাঘারি গ্রামে। তাদের বাবার নাম মো. রফিকুল ইসলাম।
তিনি গ্রামে গ্রামে ফেরি করে কটকটি (এক ধরনের মিষ্টিযুক্ত মুখরোচক খাবার) ও ঘরে বানানো চিপস নিয়ে শিশুদের কাছে দিয়ে বিনিময়ে ভাঙারির মালামাল সংগ্রহ করেন। উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা তিনি।
বিয়ের পর থেকে বীর বাঘারি গ্রামে অবস্থিত শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করেন রফিক। তার শ্বশুর মো. জৈন উদ্দিন (৬৮) জানান, তিনি বয়স্ক ভাতার টাকা পান।
তার স্ত্রী রাবিয়া ভিক্ষা করে কিছু আয় করেন। আর মেয়ে জামাইয়ের ভাঙারির ব্যবসার আয় দিয়ে তাদের ১০ জনের পরিবারের ভরণ-পোষণের ব্যয় নির্বাহ করা হয়।
জৈন উদ্দিন অভিযোগ করে জানান, গত ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে পরাজিত ইউপি সদস্য প্রার্থী আবদুল কাদিরকে ভোট না দেয়ার অভিযোগে রফিকুলকে লোহার রড দিয়ে পেটায় কাদিরের মেয়ে জামাই মিজানুর রহমান বাবুল (৩৮)।
এরপর থেকে রফিকুল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাদের প্রতিটি দিন পার হচ্ছে অর্ধাহারে অনাহারে।
রফিকুলের তিন সন্তান জানায়, তাদের চোখের সামনে বাবাকে মারধর করা হয়েছে। মারধরকারীর হাত-পা ধরেও তাদের বাবাকে রক্ষা করতে পারেনি তারা। শিশুরা বলে, আমরার আব্বা কী ঈদের আগে আইতো না। আমরা ঈদ করবাম কীবায়?
ওই এলাকার লোকজন জানান, খেটে খাওয়া একজন দরিদ্র মানুষকে যেভাবে লোহার রড দিয়ে হাত-পা ভেঙে দেয়া হয়েছে, এ ঘটনার বিচার হওয়া দরকার। তিনবেলা যারা মুখের আহারই যোগাতে পারছে না তাদের আইনের সহায়তা দেবে কে।
অভিযুক্ত মিজানুর রহমান বাবুল ফেরিওয়ালা রফিক বলেন, আমার ওপর দা দিয়ে হামলা করার কারণে আত্মরক্ষার্থে তাকে সামান্য মারধর করা হয়েছে।
নান্দাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান জানান, আহতের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
২৪ জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম