নারায়ণগঞ্জ থেকে : জমে উঠছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা। গতকাল বিএনপি’র প্রার্থী এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের পক্ষে দিনভর প্রচারণা চালিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় ও জেলা বিএনপি’র নেতারা।
এদিকে গতি এসেছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর প্রচারেও। স্থানীয় এমপি শামীম ওসমান শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে তার পক্ষে কাজ করার আহ্বান জানানোয় নেতাকর্মীদের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কাটতে শুরু করেছে। আইভী দিনভর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণা চালিয়েছেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান সরকারের আমলে কেউ নিরাপদ না। এ সরকার গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার, ভোটের অধিকার হরণ করেছে। মানুষ ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। গতকাল ছিল বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। কিন্তু দেশে মানবাধিকার নেই। হত্যা, খুন, গুম সবই চলছে। শুধু বিএনপির নেতাকর্মী না, সাধারণ মানুষও মামলায় জর্জরিত। সে কারণে এ নির্বাচনের (নাসিক) উপর নির্ভর করছে আগামীদিনে জাতীয় নির্বাচনের ভবিষ্যৎ।
তিনি বলেন, এ নির্বাচনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। মানুষ তাদের ভোটের অধিকার ফিরে পেতে চায়, গুম খুনের বিরুদ্ধে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে জনগণ- এটাই আমার প্রত্যাশা। ধানের শীষে ভোট দিলে গণতন্ত্রের অধিকার আদায় হবে। শনিবার বেলা ১১টায় শহরের ডিআইটিতে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে ২০ দলীয় জোট প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানের পক্ষে গণসংযোগে এসে তিনি এসব কথা বলেন। সেখান থেকে তিনি দলীয় প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করেন।
দুপুর ২টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের এসিআই পানিরকল এলাকা থেকে শুরু করে গোদনাইল রসুলবাগ. চিত্তরঞ্জন, চৌধুরীবাড়ি, ২নং বাসস্ট্যান্ড, বার্মাস্ট্যান্ড, আদমজী, কদমতলী, সাইলো রোড ও সিদ্ধিরগঞ্জপুলসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। ওই সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতাকর্মী ও এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সারা দেশে সংগ্রামী মানুষ হিসেবে পরিচিত অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেনকে বেগম খালেদা জিয়া ধানের শীষ প্রতীক দিয়ে মনোনীত করেছেন।
এ নির্বাচন শুধু একটা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নয়। এ নির্বাচন সমগ্র দেশের মানুষ আজকে যে গণতন্ত্রের সংগ্রাম করছে, ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়ার সংগ্রাম করছে, তাদের মৌলিক অধিকার ফিরে পাওয়ার সংগ্রাম করছে, মানবধিকার ফিরে পাওয়ার সংগ্রাম করছে, সেই সংগ্রামের প্রতীক হচ্ছে নারায়ণঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। আজকে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ রায় দিবে, তারা কি একনায়কতন্ত্রবাদের অধীনে থাকতে চায়, নাকি ফ্যাসিবাদের অধীনে থাকতে চায়, দেশে খুন, গুম, গ্রেপ্তার, অন্যায় অত্যাচার দেখতে চায়, না কি তারা জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণের সরকার দেখতে চায়। সেটাই এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে আমরা সেই আন্দোলনের একটা অংশ হিসেবে নিয়েছি। আজকে নারায়ণগঞ্জের জনগণ প্রমাণ করবেন, বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। কারণ তারা তাদের অধিকার ফিরে পেতে চান। যে ভোট তারা দিতে পারেননি ২০১৪ সালে, সেই ভোট তারা দিতে চান নারায়ণগঞ্জে। সেই ভোটের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক উপায়ে শান্তিপূর্ণভাবে সাখাওয়াত হোসেনকে তারা নির্বাচিত করতে চান। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আপনাদের সালাম দিয়ে আমাকে পাঠিয়েছেন। তিনি যে সংগ্রাম শুরু করেছেন, ২২শে ডিসেম্বর নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জ ও বন্দরের জনগণ সাখাওয়াত হোসেনকে ভোট দিয়ে সেই সংগ্রামকে আপনারা জয়যুক্ত করবেন সেই আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।
এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন, কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, যুবদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সেলিমুজ্জামান সেলিম, জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমূর আলম খন্দকার, সাধারণ সম্পাদক কাজী মনিরুজ্জামান মনির, সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন ও আবুল কালাম, নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপি’র সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ প্রমুখ।
এদিকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান নারায়ণগঞ্জ সম্পর্কে কিছুই জানেন না। প্রায়শই সাখাওয়াত অহেতুক উদ্ভট অভিযোগ করছেন। নারায়ণগঞ্জের নদী, খাল, বিল সম্পর্কে কিছুই জানে না তিনি। সে এই জেলার বাসিন্দাও নয়, সে অন্য জেলা থেকে কিছু বছর আগে এসেছে। আর সে সিএস পর্চা, আর এস পর্চার কিছুই বোঝে না। নাসিকের ৯নং ওয়ার্ডে গতকাল শনিবার সকালে গণসংযোগে সময় গণমাধ্যমকর্মী ও এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
আইভী বলেন, আমি এলাকার মা বোন থেকে শুরু করে সবার প্রতি আহবান রাখছি আপনারা নৌকা প্রতীকে ভোট দিন। দলমত নির্বিশেষে নৌকা প্রতীকে ভোট দিলে উন্নয়ন হবে। এ নৌকার বিজয়ে শেখ হাসিনার বিজয় ঘটবে। আমি বিগত দিনে যেসব কাজ শেষ করতে পারি নাই ভবিষ্যতে সে কাজগুলো শেষ করবো। প্রধানমন্ত্রী আমাকে নৌকা উপহার দিয়েছেন। আমিও চাই নারায়ণগঞ্জবাসীকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগসহ দল মতনির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে জয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রীকে একটি বিজয় উপহার দিব। এলাকার লোকজন তখন গ্যাসের সংকটের কথা তুলে ধরেন।
এ প্রসঙ্গে আইভী বলেন, ‘গ্যাসের সংকট সমাধান সিটি করপোরেশনের কাজ না। তার পরেও আমি ইতিমধ্যে জ্বালানি মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন গ্যাসের পাইপ স্থাপন করা হচ্ছে। আগামী ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যে গ্যাসের সংকট দূর হবে।’
আইভী সিদ্ধিরগঞ্জের ৯নং ওয়ার্ডে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গণসংযোগ করেন। সকাল ৯টায় ওই ওয়ার্ডের চিরত আলী মসজিদ এলাকার পাশে পাকা শাহ এর মাজার জিয়ারত করার পর তিনি জালকুড়ি সিকদারবাড়ি পুল, আমতলা, মাদবর বাজার পশ্চিমপাড়া ও কড়ইতলা এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি জালকুড়ি উত্তরপাড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সামনে পৌঁছালে মুক্তিযোদ্ধা তাকে ফুলের নৌকা উপহার দেন। পরে তিনি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এলাকায় উঠান বৈঠক করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান, সহ-সভাপতি মো. সাদেকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াছিন মিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা বদিউজ্জামান বদু, আতাউর রহমান, মজিবুর রহমান প্রধান ও বশির আহামেদ প্রমুখ। এমজমিন
১১ ডিসেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস