শুক্রবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৪:০৫:৫৯

সিদ্ধিরগঞ্জ ঘিরেই সব শঙ্কা

সিদ্ধিরগঞ্জ ঘিরেই সব শঙ্কা

মসিউর রহমান খান ও এমএ খান মিঠু, নারায়ণগঞ্জ থেকে: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের পরিবেশ এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ থাকলেও শঙ্কা কাটছে না। আশঙ্কা করা হচ্ছে, সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকাকে ঘিরেই ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা। যে কোনো সময় পুরো নির্বাচনের পরিস্থিতি পাল্টে দিতে পারে এ সিদ্ধিরগঞ্জ। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকেও আশঙ্কার বিষয়টি আমলে নিয়ে বিশেষ নিরাপত্তা কৌশল নেওয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জ সিটি এলাকায় মোট ভোটার সংখ্যা চার লাখ ৭৪ হাজার ৯৩১। সদর, বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জ_ এ তিন থানা নিয়ে সিটি করপোরেশনের এলাকা হলেও শুধু সিদ্ধিরগঞ্জেই এক লাখ ৮৫ হাজার ভোট রয়েছেন। ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জে ১ থেকে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের অবস্থান। প্রধান দুই মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও অ্যাডভোকেট মো. সাখাওয়াত হোসেন খানের পক্ষ থেকেও এ এলাকায় বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার জন্য।

প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। দু'পক্ষ থেকেই বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়া এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযানের জন্য তাগিদ দেওয়া হয়েছে। বিএনপি প্রার্থীর পক্ষ থেকে একাধিকবার ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে এ নিয়ে।

তবে রিটার্নিং অফিসার নুরুজ্জামান তালুকদার জানিয়েছেন, ভোট গ্রহণের আগের চার দিন থেকে পরের তিন দিন বৈধ অস্ত্র জমা রাখার নিয়ম রয়েছে। সে হিসাবে ১৮ থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৈধ অস্ত্র জমা রাখা হবে। ১৮ ডিসেম্বরের আগেই অস্ত্র জমা দেওয়ার জন্য ডিসি অফিস থেকে এ-সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হবে। এ বিষয়টি পুরোপুরি জেলা প্রশাসকের এখতিয়ার।

অন্যদিকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে কবে থেকে অভিযান শুরু হবে, তা জানাতে পারেননি রিটার্নিং অফিসার। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ১৮ ডিসেম্বর স্থানীয়ভাবে প্রশাসনের সবার সঙ্গে একটি বৈঠক হবে। সেখানেই ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা কৌশল নির্ধারণসহ সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, বিলুপ্ত ঘোষিত আদমজী জুট মিল এলাকাকে ঘিরে নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই সিদ্ধিরগঞ্জের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক। এবারের নির্বাচনে এ এলাকার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে হত্যা ও গুমের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি পুলিশ কনস্টেবল হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিও এখানে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন।

এ এলাকায় নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের প্রভাবও রয়েছে বিস্তর। এখানকার পৃথক দুটি ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন বহুল আলোচিত সাত খুন মামলার আসামি নূর হোসেনের ভাতিজা শাহজালাল বাদল ও সহযোগী আরিফুল হক হাসান।

সিদ্ধিরগঞ্জ প্রসঙ্গে আলাপকালে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আইভীর অন্যতম ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত রফিউর রাবি্ব বলেন, ওই এলাকা থেকে ৩৪ জন খুনের মামলার আসামি কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। এদের মধ্যে চাঁদাবাজি ও গুমের মামলার আসামিও রয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের আলোচিত গডফাদারের আশীর্বাদপুষ্ট প্রার্থীও রয়েছেন।

অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে প্রশাসনের এখন পর্যন্ত কোনো তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। তিনি বলেন, আইভীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সাখাওয়াত হোসেনকে বলা হলেও তার আড়ালে গডফাদারের তৎপরতা ঠেকানোই বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় গত ৫ বছরে সিটি করপোরেশন থেকে অনেক উন্নয়নমূলক প্রকল্প নেওয়া হলেও তা কাউন্সিলরদের কারণে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

অন্যদিকে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল হোসেন বলেন, আদমজী জুট মিলকে ঘিরে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটে চলেছে। তার রেশ এখনও রয়েছে। সাত খুন মামলার আসামি নূর হোসেনের লোকজনের আধিপত্য এখনও বহাল রয়েছে ওই এলাকায়। তিনি বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জের তুলনায় বন্দর ও সদর থানা এলাকা অনেকটাই আশঙ্কামুক্ত। এটিএম কামালের মতে, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালানোসহ প্রয়োজনীয় অনেক পদক্ষেপ থেকে স্থানীয় প্রশাসন নির্বিকার। এ থেকেই জনমনে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, ২ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি নেতা কাউন্সিলর প্রার্থী ইকবাল হোসেনের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে চারটি বিচারাধীন ও একটি তদন্তাধীন। বহুল আলোচিত সাত খুন মামলারও আসামি ছিলেন তিনি। এ ছাড়াও যুবদল নেতা দলিল লেখক ইকবাল হোসেনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে। একই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হেকিমের বিরুদ্ধেও রয়েছে একটি মামলা।

৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী নূর হোসেনের ভাতিজা শাহজালাল বাদলের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও অস্ত্র আইনসহ ১২টি মামলা রয়েছে। আরেক যুবলীগ নেতা তোফায়েল হোসেনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা বিচারাধীন। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী যুবলীগ নেতা আরিফুল হক হাসানের বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে। একই ওয়ার্ডের যুবলীগ নেতা নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে তিনটি, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী গোলাম মোহাম্মদ সাদরিলের বিরুদ্ধে ১১টি মামলা রয়েছে। একই ওয়ার্ডের নজরুলের বিরুদ্ধে রয়েছে একটি মামলা। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহ্বায়ক মতিউর রহমান মতির বিরুদ্ধে ২২টি মামলা ছিল।

এর মধ্যে বেশক'টি থেকে তিনি খালাস পেয়েছেন। একই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম মণ্ডল পুলিশ কনস্টেবল মফিজ হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। এ ছাড়াও ৭ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী আলা হোসেন আলার বিরুদ্ধে তিনটি, হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধে তিনটি, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী বিএনপি নেতা উজ্জ্বল হোসেনের বিরুদ্ধে চারটি, যুবলীগ নেতা মহসিন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে তিনটি, যুবদল নেতা দেলোয়ার হোসেন খোকনের বিরুদ্ধে সাতটি, সাগর প্রধানের বিরুদ্ধে চারটি এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ইস্রাফিল প্রধানের বিরুদ্ধে একটি ও সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে।-সমকাল

১৬ ডিসেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে