নারায়ণগঞ্জ: করোনায় আক্রা'ন্ত হওয়ার পর এলাকা থেকে উচ্ছেদ চেস্টা করা হয়েছিল সেই চিকিৎসক পরিবারের ১৮জন সদস্য করোনাকে জয় করে এখন সুস্থ হয়েছেন। তবে সে সময়ের ঘটনা তাদের বারবার পীড়া দিচ্ছে ।
নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিসের মেডিক্যাল অফিসার ডাক্তার শিল্পি আক্তার করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। চিকিৎসা দিতে গিয়ে প্রথমে তার ভাই আনিস এবং একে একে পরিবারের ১৮জন সদস্য করোনায় আক্রা'ন্ত হন। এমন ঘটনায় ওই পরিবারের বাড়িতে অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশে বাধা, রাতের বেলায়ি বাড়িকে ঢিল ছুড়া এবং এলাকা থেকে উচ্ছেদের চেস্টা করা হয়। ফতুল্রার দেলপাড়া এলাকায় ডা. শিল্পির পৈত্রিক বাড়িতে এসব ঘটনা ঘটে।
অবেশেষ জানা যায়, নারায়ণগঞ্জে করোনা যু'দ্ধে জয়ী হয়েছেন একই পরিবারের ১৮ জন সদস্য। বাড়ির প্রতিটি সদস্য করোনা আক্রা'ন্ত হবার পরো হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়নি তাদের। দৃঢ় মনবল ও একে অপরের সহযোগিতায় সুস্থ হয়ে উঠেন তারা সকলে।
নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শিল্পী আক্তারের বাবা-মায়ের যৌথ পরিবারে ২১ এপ্রিল প্রথম আক্রা'ন্ত হন ডা. শিল্পী আক্তারের ছোট ভাই। এরপর পরিবারের বাকিদের নমুনা পরীক্ষা করা হলে দুদিন পর পরিবারের আরো ১৭ জনের করোনা শনা'ক্ত হয়। তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭৪ বছরের বৃদ্ধ এবং ১৪ বছর বয়সী কিশোরও রয়েছে।
বুধবার (১৩ মে) দ্বিতীয় ফলোআপ নমুনা পরীক্ষরা ফলাফল অনুযায়ী ওই পরিবারের ১৮ জনই এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। এর আগে ৫ মে প্রথম ফলোআপ পরীক্ষায় ১৭ জনের রিপোর্ট নেগেটিভ ও একজনের পজেটিভ আসে।
আক্রা'ন্ত হবার পরপরই বাড়িতে রেখে পরিবারের সকলকে চিকিৎসা দেয়ার জন্য সকল প্রস্তুতি নেন ডা. শিল্পী আক্তার। করোনাভাইরাস চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত থাকার সুবাধে চিকিৎসা বিধি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত ছিলেন তিনি। একই সঙ্গে চিকিৎসা সরঞ্জাম, ঔষধ প্রস্তুত রাখেন। এমনকি সর্বোচ্চ খারাপ অবস্থার জন্যও প্রস্তুতি নিয়েছিলেন এই চিকিৎসক। তবে সে প্রস্তুতির সম্পূর্ণ ব্যবহারের প্রয়োজন হয়নি বলে জানান ডা. শিল্পী আক্তার।
শিল্পী আক্তার বলেন, করোনা শনাক্ত হওয়ার পরই ভেবে নিয়েছিলাম বাসায় রেখে চিকিৎসা করাবো। কেননা আমার পরিবারের ১৮ জন আক্রা'ন্ত ছিলেন। ১৮ জনকে একই সাথে, একই হাসপাতালে ভর্তি করানো সম্ভব নয়। একাধিক হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে তাদের দেখাশোনা করা সম্ভব ছিল না। কেননা দেখাশোনা করার মত কেউ ছিলোই না। তাই যা করার ছিল সব আমাকেই করতে হত। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম বাসায় রাখবো। এছাড়া বাসায় তাদের আলাদা আলাদা আইসোলেশনে রাখার মত পর্যাপ্ত কক্ষ ছিলো। তাই সময় ব্যয় না করে সকল প্রস্তুতি নিয়ে নেই। তবে আমাদের সৌভাগ্য যে, কারো শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেনি।
তিনি বলেন, আমার বাবার বয়স ৭৪ বছর। সে সবচেয়ে বেশী ঝূঁকিতে ছিলেন কিন্ত আক্রা'ন্ত হবার পর তার কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি। জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, শ্বাসকষ্ট কিছুই তার ছিলনা। পরিবারের এক সদস্যের জন্য শুধু একবার নেবুলাইজিং মেশিন ব্যবহার করতে হয়েছে।
শিল্পী আক্তার জানান, তার পরিবারের সকলে আলাদা আলাদা কক্ষে আইসোলেশনে ছিলেন, চিকিৎসকদের দেয়া ঔষধ নিয়মিত গ্রহণ করেছেন, ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খেয়েছেন, কিছু ব্যায়াম, গরম পানি পান করা, গরগরা করার মত সকল স্বাস্থ্য বিধিই তারা পালন করেছেন।
তাদের সুস্থ হয়ে উঠার পিছনে ছিল তাদের ধীর মনোবল ও একে অপরের প্রতি সহযোগিতা এমন মন্তব্য করে শিল্পী আক্তার বলেন,করোনা শনাক্ত হওয়ার পর আমরা সবাই ভ'য় পেয়ে যাই। তার উপর এলাকাবাসীর অমানবিক আচরণ আমাদের আরো মনোবল ভে'ঙ্গে দেয়। তবে প্রশাসনিক সহযোগিতা ও উৎসাহ আমাদের মনোবল তৈরি করে। তারপর আসে আইসোলেশনের দিনগুলো। তখন তাদের কাছে কেউ ছিল না তারা নিজেরা ব্যতিত। আমি বাইরে থেকে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করলেও তাদের কাছে ছিলাম না। যা করতে হয়েছে তা তারাই করেছেন। যখন যা প্রয়োজন ছিল তা বাড়ির সামনে দিয়ে আসা হত। কিন্তু রান্না-বান্নাসহ বাড়ির সকল বিষয় তাদের দেখতে হয়েছে। আগে যেমনটা বলেছিলেম, আমাদের সৌভাগ্য আমাদের সদয় ছিল। ফলে বাড়ির একজন অসুস্থবোধ করলে আরেকজন কাজ সামলে নিয়েছেন। আর সদস্য বেশী হওয়ায় এক্ষেত্রে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। তাদের ধীর মনোবল ও একে অপরের পাশে ছিলেন বলেই আজ তারা সুস্থ।