এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের জয়রামপুরে শুরু হয়েছে বউ মেলা। তিনদিন ধরে চলবে এটা। মেলায় আসতে শুরু করেছেন দর্শনার্থীরা।
সনাতন ধর্মের অনুসারীরা শত বছর ধরে বংশ পরম্পরায় এ মেলার আয়োজন করে আসছেন। জয়রামপুর গ্রামের শতবর্ষী বটগাছকে ঘিরে ঐতিহ্যবাহী বউ মেলা শুরু হয়েছে শনিবার থেকে। বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, বৈশাখের প্রথম দিন এ পূজা করে থাকেন তারা।
বউ মেলায় নববধূ থেকে শুরু করে নানা বয়সী গৃহবধূরা অংশ গ্রহণ করেন। বটবৃক্ষের তলায় স্বামী-সন্তানদের মঙ্গল কামনায় পূজা অর্চনা দিয়ে আসছেন তারা। তাই এ মেলার নাম দেওয়া হয়েছে বউ মেলা।
নারীরা পূজায় বসে আরাধনা করেন। পূজায় অংশ নেওয়াদের ধারণা এখানে আরাধনা করলে ‘স্বামী সংসারের বাঁধন অটুট থাকবে এবং স্বামী সন্তানদের নিয়ে সুখ শান্তিতে সংসারে বসবাস করতে পারবে’। বউ মেলায় অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই নারী। পুরুষরাও আসেন, তবে তারা সংখ্যায় কম।
অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বামীর সোহাগিনী বউ হতেই হিন্দু নারীরা ছুটে আসেন এ পূজায়। ঝুড়ি ভরা বৈশাখী ফলের ভোগ আনা হয়। কবুতর ওড়ানো হয় গাছ দেবতার উদ্দেশ্যে। দেবীর নামে বলি দেয়া পাঁঠা।
সরেজমিনে দেখা যায়, স্থানীয় বিভিন্ন গ্রাম থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারীরা ঝুড়িতে মৌসুমি ফল, কবুতর ও দেবীর নামে উৎসর্গ করার জন্য পাঁঠা নিয়ে বটগাছের নিচে জড়ো হয়ে পূজা অর্চনা করছেন। বৃক্ষতলে মৌসুমি ফলের স্তূপ জমে উঠেছে। নারীরা মৌসুমি ফল নিয়ে লাইন ধরে বটগাছ তলায় ভোগ দিচ্ছেন।
বটগাছটি সিদ্ধেশ্বরী কালীতলা নামে পরিচিত। কিন্তু এলাকায় এটাকে বলা হয় বউ তলা। মেলার সময় অসংখ্য নারীর পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠা এই এলাকা। পূজা অর্চনা শেষে ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ হিসেবে ফলগুলো বিতরণ করা হয়। পূজার পরপরই শুরু হয় তিন দিনব্যাপী বউ মেলা।
বউ মেলায় পূজা দিতে আসা মনিকা রানী দাস বলেন, পাঁচ বছর এই এলাকায় আমার বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পর থেকে আমি এখানে পূজা দিয়ে আসছি। আমরা সিদ্ধেশ্বরী কালী দেবী হিসেবে এ বৃক্ষকে পূজা দেয়।
প্রথা অনুযায়ী মাটি নিয়ে বটবৃক্ষের গোড়ায় বিভিন্ন বয়সী নারীরা। মাটির সঙ্গে একটি করে কড়ি দিতে হয় বৃক্ষ দেবতাকে। এতে মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়। পরিবারে যত জন সদস্য রয়েছেন বৃক্ষ দেবতাকে ততবারই মাটির সঙ্গে কড়ি দিতে হয়।
সিদ্ধেশ্বরী বটতলায় কালী পূজার আয়োজক নিলোৎপল রায় বলেন, প্রায় শত বছর ধরে সিদ্ধেশ্বরী কালী মায়ের পূজা করা হয়। এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন সার্বজনীন ভাবে এ মেলার আয়োজন করেন। এ পূজায় দেশবাসী ও এলাকার মানুষের শান্তি ও মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করা হয়।