নারায়ণগঞ্জ : গতকাল রাতে বউ-শাশুড়িকে গলাকেটে খুন করেছেন জামাই কাউসার। এরপর পালানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। স্থানীয়রা তাকে ধরে ঘরে আটকে রাখে। পরে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। কেন গলাকেটে বউ-শাশুড়িকে খুন করেছেন তার লোমহর্ষক কাহিনী বর্ণনা করেছেন কিলার জামাই। শুনন তার দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী-
লাভলী প্রথম বিয়ের খবরটি গোপন করে ছয় মাস আগে কাউসারকে দ্বিতীয় বিয়ে করে। সম্প্রতি কাউসারের সন্দেহ ছিল আগের স্বামীর সঙ্গে এখনো লাভলীর কথা হয়। গোপন সম্পর্কও আছে। তাদের দুজনের মধ্যে পরকীয়া প্রেম রয়েছে। লাভলীকে নিয়ে অন্য সন্দেহও ছিল কাউসারের।
শুক্রবার বাসায় শাশুড়ি এলে এসব নিয়ে প্রথমে তর্কাতর্কি হয়। পরে রাতে পুনরায় তর্কাতর্কির একপর্যায়ে প্রথমে লাভলীকে ঘরে থাকা রান্নার কাজে ব্যবহার করা বঁটি দিয়ে কোপ দেন কাউসার। বাধা দিতে এলে শাশুড়িকেও কোপান কাউসার।
শনিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কে এম মহিউদ্দিনের আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন কাউসার। এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিশদ বর্ণনা করেন তিনি। নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক হাবিবুর রহমান স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শনিবার দুপুরে তার শ্যালক মো. ইমদাদুল হক বাদী হয়ে ভগ্নিপতি কাউসারকে আসামি করে সোনারগাঁ থানায় মামলা দায়ের করেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুর কাদের মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। কাউসারকে বিকেলে আদালতে হাজির করা হয় বলে জানান তিনি।
এদিকে নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। মরদেহ দুটি বরগুনা জেলার পাথরঘাটা এলাকায় দাফন করা হয়।
মামলার বাদী ইমদাদুল হক এজাহারে উল্লেখ করেন, বরগুনা জেলার পাথরঘাটা থানার পূর্ব বাদুরতলা গ্রামের চাঁন মিয়া হাওলাদারের মেয়ে লাভলী আক্তারকে একই থানার দক্ষিণ পাথরঘাটা গ্রামের সারোয়ারের ছেলে কাউসার ৬ মাস আগে বিয়ে করেন।
এতে বলা হয়, বিয়ের পর কাউসার তার স্ত্রী লাভলী আক্তারকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে কাঁচপুর ইউনিয়নের উত্তর কাঁচপুর গ্রামের খাইরুল বাশারের বাড়িতে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। তারা একইসঙ্গে কাঁচপুর বিসিক শিল্পনগরীর একটি গার্মেন্টে চাকরি করতেন।
গতকাল শুক্রবার সকালে লাভলীর কাঁচপুরের ভাড়া বাসায় বেড়াতে আসে তার ভাই ইমদাদুল হক, মা রাশেদা বেগম। পরে বিকেলে মা রাশেদা বেগমকে কাঁচপুরে বোনের বাসায় রেখে ইমদাদুল হক ঢাকার যাত্রাবাড়ীর ছনটেকের বাসায় চলে যান।
ওইদিনই রাত সোয়া ৯টার দিকে ইমদাদুল জানতে পারেন, তার মা রাশেদা বেগম ও বোন লাভলী আক্তারকে কুপিয়ে হত্যা করেছে ভগ্নিপতি কাউসার।
ভগ্নিপতি কাউসার তার মা ও বোনকে পারিবারিক কলহের জেরে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করে।
প্রসঙ্গত, গতকাল শুক্রবার রাত সোয়া ৯টার দিকে সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর এলাকার খায়রুল বাশারের ভাড়া বাড়িতে স্ত্রী লাভলী আক্তার (২৫) ও শাশুড়ি রাশিদা বেগমকে (৪০) গলাকেটে খুন করেঘাতক কাউসার।
পরে মা ও মেয়ের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় ঘটনাস্থল থেকে জামাই কাউসার মিয়াকেও (৩০) আটক করে। তার কাছ থেকে রক্তমাখা ধারালো একটি বঁটি উদ্ধার করে স্থানীয়রা।
২০ ফেব্রুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম