নারায়ণগঞ্জ : প্রেমিকের প্ল্যানে অভিনব কৌশলে শিশু চুরির ব্যবসায় নেমে পড়েন প্রেমিকা নাসিমা। একসময় নাসিমা অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। প্রেমিকের বোঝানো কথায় মোটা অঙ্কের ধান্দায় নেমে ধরা খান নাসিমা।
নিঃসন্তান ধনী ব্যক্তিরা দাবিহীন শিশুর জন্য লাখ লাখ টাকা খরচ করে থাকেন। এমন কথায় সেই কাজ ছেড়ে শিশুচুরির পেশায় আসে নাসিমা। প্ল্যান অনুসারে প্রেমিককে স্বামী পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতো প্রেমিক জুটি।
সুযোগের সন্ধানে থাকতো কীভাবে শিশু বাচ্চাদের তুলে নেয়া যায়। একবার নাটোর এলাকায় শিশুচুরি করতে গিয়ে গণধোলাইয়ের শিকারও হয়েছিলেন নাসিমা। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার তারাব এলাকা থেকে ৫ মাসের শিশু রাইশাকে চুরি করে নাসিমা ও তার প্রেমিক সুমন।
রূপগঞ্জ থানা পুলিশের হাতে আটক হওয়া নাসিমা আক্তার পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এসব কথা স্বীকার করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রূপগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) গিয়াসউদ্দিন জানান, নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বাকলজোড়া ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের চাঁন মিয়ার মেয়ে নাসিমা বেগম রাজশাহী রেললাইন এলাকায় থেকে অনৈতিক কাজ করতো।
এ সময় তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠে সুমনের। একসময় সুমন নাসিমার সঙ্গে শিশুচুরির প্ল্যান করে। এরপর তারা নাটোর এলাকায় চলে আসে। সেখানে এক ভাড়া বাড়িতে মাত্র ৭ দিন থেকেই ১০ মাসের এক শিশুকে চুরির চেষ্টা করে নাসিমা।
এ সময় ধরা পড়ে গণধোলাইয়ের শিকার হয় নাসিমা। পরে অবশ্য সুমন সবাইকে বোঝাতে সক্ষম হয় যে, তার স্ত্রী সন্তান মারা যাওয়ায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। সে যাত্রায় প্রাণে বাঁচে তারা। এরপর ৩ মাস আগে উপজেলার তারাব এলাকার বাচ্চু মেম্বারের বাড়িতে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস শুরু করে তারা।
গত মঙ্গলবার সুমন সটকে পড়ে। এরপর নাসিমা পাশের ঘরের ভাড়াটিয়া রাসেল মিয়া ও রিনা আক্তারের ৫ মাস বয়সী শিশু রাইশাকে চুরি করে নেত্রকোনায় নিজ বাড়িতে নিয়ে যায়।
ক্রেতা খুঁজতে সুমন চলে যায় রাজশাহী। নেত্রকোনায় যাবার পর থেকেই শিশুটির অনবরত কান্নায় এলাকাবাসীর সন্দেহ হয়। তারা দুর্গাপুর থানায় বিষয়টি জানায়। গত বুধবার রাতে দুর্গাপুর থানার উপ-পরিদর্শক আসাদুজ্জামান স্থানীয় পাইকপাড়া গ্রাম থেকে নাসিমা ও তার পিতা-মাতাকে আটক করে শিশু রাইশাকে উদ্ধার করেন।
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নাসিমা শিশু চুরির কথা স্বীকার করলে বৃহস্পতিবার রাতে তাকে রূপগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনার পর থেকেই লাপাত্তা নাসিমার কথিত প্রেমিক সুমন।
সুমনের সঠিক কোনো ঠিকানাও নাসিমার জানা নেই বলে পুলিশকে জানিয়েছে। শিশু রাইশার পিতা রাসেল মিয়ার দায়ের করা অপহরণ মামলায় নাসিমাকে নারায়ণগঞ্জ আদালতে হাজির করা হলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহিউদ্দিনের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। পরে আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
১২ মার্চ,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম