শনিবার, ০৬ আগস্ট, ২০১৬, ০৫:৫২:০৯

বিচারের দাবীতে ৯ মাসের সন্তানকে নিয়ে পথে পথে ধর্মান্তরিত মরিয়ম

বিচারের দাবীতে ৯ মাসের সন্তানকে নিয়ে পথে পথে ধর্মান্তরিত মরিয়ম

রুপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে ফিরে : দুই বছর আগের রুপগঞ্জের হাজী নুরউদ্দিন স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীর পড়া সেই মেয়েটি (১৬) আজ ৯ মাসের সন্তানকে কোলে নিয়ে পথে পথে ঘুরছে বিচারের দাবীতে। স্কুল থেকে ফেরার পথে বিগত ১২ মার্চ ২০১৪ সালে অপহরণ হয়েছিল হিন্দু মেয়েটি।

সেদিনের ঘটনাটি মনে করে রাণী পাল (ছদ্মনাম) জানান, স্কুল থেকে ফেরার পথে মো: মাসুদ রানা তার কয়েকজন বন্ধুদের সাথে নিয়ে থাকে অপহরণ করে। নেশা জাতীয় কিছু খাওয়ানোর পর রাণী সেদিন জ্ঞান না হারালোও কিছু বলতে পারছিলেন, কোন কিছু করার ক্ষমতা তার ভেতর ছিল না। এইভাবে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ থেকে মাগুরা তারপর জামালপুর নিয়ে যায়।

মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার পর রাণীর পিতা কুমার পাল (ছদ্ম নাম) ১৭ মার্চ ২০১৪ তারিখে থানায় একটি নারী শিশু নির্যাতনের ৭/৩০ এ মামলা করেন, মামলা নং ২০। কিন্তু অপহরণকারী ও মেয়েটিকে আটক করতে পারিনি পুলিশ। অপহরণকারী বিভিন্ন গোপন স্থানে রেখে রাণীকে নির্যাতনসহ ভয় দেখিয়ে শারিরীক শোষণ করতে থাকে। মেয়েটি প্রতিবাদ করলে মেরে ফেলার হুমকি দেন মো: মাসুদ।

রাণী বলেন, আমার সাথে বিভিন্ন অপরাধ মূলক কাজ করে। প্রতিবাদ করলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। আমাকে জোরপূর্বক ইসলাম ধর্মে দিক্ষীত করার জন্য বল প্রয়োগ করে। আমি ভয়ে ও বাধ্য হয়ে তাদের দেওয়া কাগজে সাক্ষর করতে বাধ্য হয়। পরে জানতে পারি ওই কাগজে সাক্ষর দেওয়ার পর আমি ধর্মান্তরিত হয়ে গেছি ও আমার নাম মরিয়ম হয়ে গেছে।

এরপর মাসুদ মেয়েটি নিয়ে মাগুরা থেকে জামালপুর চলে যান। সেখানে তার বাড়ি নিয়ে গিয়ে ওঠান। সেখানে কিছু দিন থাকার পর রাণীকে (মরিয়ম) ৮ মার্স গর্ভাবস্থায় রাণীর পরিবার বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আছে।

রাণীর পিতা বলেন, আমি একজন হকার ফেরি করে জীবন যাবন করি। আমি জানতে পারি আমার মেয়ে জামালপুরে আছে। জানতে পেরে আমি ওখানে যায়। আমার মেয়ের উপরে প্রায় ওরা বিভিন্ন প্রকার অত্যাচার চালাতো। সেকারণে ওই এলাকার মানুষের সহযোগিতা আমার মেয়েকে আমি বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে পেরেছে।

মেয়েটি এখন একটি পুত্র প্রসব করেছে। সেই সন্তানকে নিয়ে বর্তমানে রয়েছেন তার হকার পিতা ঘরে। পিতার আর্থিক অবস্থা কথা চিন্তা করে রাণী এখন ৯ মাসের সন্তানকে নিয়ে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার কাছে যাওয়া চেষ্টা করছেন এবং তার উপর ঘটে যাওয়া অত্যাচারের বিচার দাবী করছেন।

দুই বছর আগে মামলা দায়ের হওয়া কথার সত্যতা স্বীকার করেছেন রুপগঞ্জ থানার সেকেন্ড অফিসার এনামুল হক। তবে পুলিশ কেন আসামীকে গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয়েছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তখন রুপগঞ্জ থানায় ছিলেন না বলে এড়িয়ে যান।

এদিকে আসামী মো: মাসুদ সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে আরো এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। এর পূর্বেও তিনি আরো একটি বিয়ে করেছেন। সেই স্ত্রীর ঘরে ৫ বছরের একটি ছেলেও রয়েছে। বর্তমানে মাসুদের প্রথম স্ত্রীও মাসুদের নামে একটি মামলা করেছেন। তবে একাধিক বার চেষ্টা করেও মাসুদের সাথে কোন যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

৬ আগস্ট ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস‌‌‌‌

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে