পৌর শহরের দক্ষিণ পাড়ার মুজিবনগর রহমানিয়া দারুল ছুন্নাহ মাদরাসার ১২০ জন শিক্ষার্থীর হাতে পবিত্র আল-কুরআন তুলে দেন তারা মিয়া।
মানবিক কাজের জন্য সমাজে বেশ পরিচিত রিকশা চালক তারা মিয়া। সহজ-সরল আর উদান মন মানসিকতার দরিদ্র রিকশা চালক তারা মিয়া নেত্রকোনার দুর্গাপুরে প্রতিটি মানুষের মনেই জায়গা করে নিয়েছেন। রিকশা চালিয়ে উপার্জিত অর্থের একটা অংশ বিলিয়ে দেন সবার মাঝে। কখনো শিক্ষার্থীদের বই, খাতা, কলম কিংবা খেলাধুলার সামগ্রী বিলিয়ে দিচ্ছেন দুই হাতে। আবার কখনোবা অসহায় ও দরিদ্র মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিচ্ছেন সাহায্য সেবা। ভিন্নধর্মী কাজের জন্য স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বেশ আলোচিত তিনি। প্রতিনিয়তই মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আকাঙ্ক্ষা তার অন্যতম প্রধান একটি বৈশিষ্ট্য। উপজেলার সদর ইউপির চকলেংগুরা গ্রামের বাসিন্দা তারা মিয়া। বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে তার ছোট্ট সংসার।
রিকশাই তার একমাত্র আয়ের এর উৎস। এই আয় থেকেই চলে তার ছোট্ট সংসার ও ছেলে মেয়ে পড়াশোনা। তবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এবার বিক্রি করলেন আয়-রোজগারের একমাত্র সম্বল ব্যাটারি চালিত অটো রিকশাটি। উদ্দেশ্য রিকশা বিক্রি টাকা দিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করবেন আল কুরআন। সম্প্রতি ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হয় তার রিকশাটি। রিকশা বিক্রির টাকা হাতে পেতে না পেতেই কিনে ফেলেন প্রায় ৩০ হাজার টাকার কুরআন শরীফ। পবিত্র এই কোরআন শরীফ নিয়েই বুধবার ছুটে যান পৌর শহরের দক্ষিণ পাড়ার মুজিবনগর রহমানিয়া দারুল ছুন্নাহ মাদরাসার শিক্ষার্থীদের মাঝে। মাদরাসার ১২০ জন শিক্ষার্থীর হাতে পবিত্র আল-কুরআন তুলে দেন তারা মিয়া। ছোটকালে পড়াশোনার প্রতি যথেষ্ট আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও অভাব অনটনের সংসারে খুব বেশি পড়ালেখা করতে পারেননি তারা মিয়া ও তার দুই ভাই।
তবে পড়াশোনা করতে না পড়ার আক্ষেপ এখনো কাঁদায় তাকে। এই থেকেই দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে রিকশা চালিয়ে উপার্জিত অর্থের একটা অংশ সবসময়ই বিলিয়ে দেন শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও খেলাধুলার সামগ্রী ক্রয় করেই। তবে করোনা কালীন সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অসহায় ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দিয়েছেন সাহায্য সেবা। মুজিবনগর রহমানিয়া দারুল ছুন্নাহ মাদরাসার সহকারী শিক্ষক মাওলানা মো. আব্দুর রউফ ডেইলি বাংলাদেশকে জানান, তারা মিয়া ভাই আমাদের মাদরাসার ১২০ জন শিক্ষার্থীর মাঝেপবিত্র আল-কোরআন বিতরণ করেছেন। তার এই দান অনেক অসহায় ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে অনেকটাই সাহায্য করবে। আমরা তারা ভাইয়ের জন্য মহান আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করি। তিনি যেনো চিরকাল এভাবেই মানুষকে সাহায্য সেবা দিয়ে যেতে পারে।
মানবিক রিকশা চালক তারা মিয়া জানান, আমার মত কেউ যেন টাকার অভাবে পড়াশোনা বন্ধ না হয় তার জন্য আমি সবসময় চেষ্টা করি শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু করার । আজ মাদরাসার শিক্ষার্থীদের মাঝে কোরআন শরীফ বিতরণ করেছি। এই মজিবনগর এলাকায় অনেক দরিদ্র ও অসহায় শিক্ষার্থী থাকে তারা যেন দ্বীনের পথে পড়াশোনা করতে পারে তার জন্যই রিকশা বিক্রি করে তাদের তাদের জন্য কোরআন শরীফ কিনেছি । মহান আল্লাহ তায়ালা চাইলে আমি আবার নতুন রিকশা কিনতে পারবো । হয়তো কিছুদিন কষ্ট করতে হবে। কিন্তু তারপরও কারো পড়াশোনা যেন বন্ধ না হয় এই চেষ্টাই সব সময় করে যাবো।
সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ।