জিয়াউর রহমান, নেত্রকোণা: কিছুদিন পরপরই গ্রামটিতে অলৌকিকভাবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। এ অবস্থায় গত দুই মাসে ৯ বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ওই গ্রামটির ৩টি ঘর ও ৬টি খড়ের গাদাসহ অন্যান্য মালামাল পুড়ে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এসব অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত খুঁজে বের করতে পারছেন না গ্রামবাসী। এ নিয়ে সালিস বৈঠকও হয়েছে। তবুও থামছে না অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। ফলে আগুন আতঙ্কের মধ্যে রাত কাটছে ওই গ্রামটির লোকজনের।
নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার মাসকা ইউনিয়নের আলমপুর গ্রামে ঘটছে এমন অলৌকিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো। সম্প্রতি গত রোববার (১৭ জুলাই) রাত ৩টার দিকে আলমপুর গ্রামের শাহ আলম খন্দকারের বাড়ির কৃষিপণ্য মজুদ রাখা একটি ঘরে অলৌকিকভাবে এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ঘরটিসহ ঘরে থাকা ৬ মণ পাট এবং ৩০০ আঁটি পাটশলাসহ খড় (গরুর খাদ্য) পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এ সময় আগুন নেভাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পর্শে রাদিফা আক্তার নামে এক কিশোরী আহত হন।
বুধবার (২০ জুলাই) সরেজমিনে গেলে কথা হয় আলমপুর গ্রামের বাসিন্দা শাহ আলম খন্দকার, রফিকুল ইসলাম খান, আব্দুল কাইয়ুম খন্দকার, ইলিয়াস খন্দকার, মোগল খাঁ, কামরুল ইসলাম খন্দকার, হাজু ফকির, জুবায়ের খন্দকার, জোসনা আক্তার ও মনসুরা আক্তারের সঙ্গে।
তারা জানান, গ্রামে ৩ বছর আগে হঠাৎ ফকির বাড়ি ও খন্দকার বাড়ির কয়েকটি ঘর ও খড়ের গাদায় অলৌকিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। এরপর দীর্ঘদিন তা বন্ধ ছিল। তবে সম্প্রতি গত ২ মাসের মধ্যে আলমপুর গ্রামের খন্দকার বাড়ি, ফকির বাড়ি ও খাঁ বাড়িতে ৯ বারবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৩টি ঘর ও ৬টি খড়ের গাদাসহ অন্যান্য মালামাল পুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত হাসানুর আরিফ খন্দকার জানান, গত ১১ মে আমার বৈঠক ঘর ও ১২ জুলাই গোয়ালঘর আগুনে ভস্মিভূত হয়। এভাবে একের পর এক অজানা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গ্রামবাসীর মধ্যে বর্তমানে চরম আগুন আতঙ্ক বিরাজ করছে। রাতে এলেই গ্রামের লোকজনের মধ্যে আগুন আতঙ্ক দেখা দেয়।
গ্রামটির সচেতন কয়েকজন জানান, এসব ঘটনায় গত শনিবার (১৬ জুলাই) এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে এক সালিস বৈঠক বসে। ওই বৈঠকে মাসকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম বাঙ্গালী, বীর মুক্তিযোদ্ধা বজলুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদুল হক ফকির বাচ্চু ও সঞ্জুর রহমানসহ বিপুলসংখ্যক লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
তবে এ সালিস বৈঠকের পর সোমবার (১৮ জুলাই) রাতে গ্রামের শাহ আলম খন্দকারের একটি গো-খাদ্য মজুদ রাখার ঘরে অজানা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, কে বা কারা এ আগুন লাগিয়ে দেয় তা বলতে পারছি না। বিষয়টি কেন্দুয়া থানা পুলিশকে অবহিত করলে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
এ বিষয়ে মাসকা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম বাঙ্গালী বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে দেন-দরবার করেছি। কিছুদিন পর পর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গ্রামবাসীর মাঝে ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। ক্ষতিগ্রস্তদের আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে কেন্দুয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলী হোসেন পিপিএম বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা উদঘাটনের জন্য গোয়েন্দা সদস্যদের মাধ্যমে এবং এলাকার লোকজনকে সম্পৃক্ত করে বিভিন্নভাবে তথ্য সংগ্রহ করছি। আশা করি ঘটনা উদঘাটিত হবে। -ঢাকা পোস্ট