নোয়াখালী : কে জানতো তিনি আসবেন। সেনবাগ-সোনাইমুড়ী উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের অসহায়, হত দরিদ্র, গরীব দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়াবেন। যুগে যুগে এমনিতো হয়। যিনি আসবেন হয়তো তিনিও জানতেন না তার আসার পেছনের রহস্য কি? বিধাতা এমনই করেন। যাকে দিয়ে কোন ভালো কাজ করান তার ওপরেই তিনি সেই দায়িত্ব অর্পণ করেন।
আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক। নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার বারগাঁও ইউনিয়নে যার জম্ম। যিনি দেশের অন্যতম নির্মাণ প্রতিষ্ঠান তমা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি। তিনি আসলেন, একেবারে সু-উচ্চ স্থান থেকে গ্রামীণ জনপদে। আর এসেই অল্প দিনেই জয় করলেন আপামর সাধারণ মানুষের হৃদয়।
২০১৬ সাল থেকে আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক বিচ্ছিন্ন ভাবে কন্যা দায়গ্রস্থ অভিভাবকদের পাশে দাঁড়ালেও তিনি আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা দেন ১০ জুন ২০১৮ সালে। আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক এসেছিলেন সেনবাগ পৌর শহরের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের জুম্মার নামাজ আদায় করতে। সে দিন নামাজ পড়া শেষে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, এই সমাজে বিবাহের উপর্যুক্ত অসহায় ও দরিদ্র মেয়েদের বিয়ের দায়িত্ব তিনি নিতে চান।
এ জন্য বিবাহের উপর্যুক্ত মেয়েদের অভিভাবকদের তার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করার অনুরোধ করেন তিনি। একইসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, প্রতিমাসে অন্তত ১০টি অসহায় মেয়েকে তার নিজ খরচে বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে রয়েছে। যেমন ঘোষণা তেমন কাজ। ঘোষণার পর পরই কন্যা দায়গ্রস্থ অভিভাবকরা আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন।
সেনবাগ উপজেলার কাবিলপুর ইউনিয়নের উত্তর শাহাপুর ডাক্তার বাড়ির অন্ধ মনোয়ারা বেগমের কন্যা, মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ মোহাম্মদপুর গ্রামের অসহায় মেয়ে খুকু, সোনাইমুড়ী উপজেলার বারগাঁও ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামের অসহায় মেয়েসহ প্রায় ১৩০ জন হত দরিদ্র অসহায় মেয়েকে পিতার দায়িত্ব নিয়ে নিজে উপস্থিত থেকে বিয়ে দেন আতউর রহমান ভূঁইয়া মানিক।
কন্যা দায়গ্রস্থ মেয়েকে বিয়ে দিয়ে অসহায় বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন তিনি। এই বিয়ে এখনো চলমান রয়েছে। প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার একটি, দুটি এমনকি তিনটি বিয়েও সম্পন্ন হচ্ছে। শুধু বিয়ে দেয়া নয়, বিবাহ পরবর্তী জীবনে স্বামী-স্ত্রী’র নতুন সংসারে কোনো অভাব-অনটন যাতে হানা না দেয় সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন। কর্মসংস্থানের জন্য কোনো জামাইকে বিদেশে পাঠিয়েছেন, কোনো জামাইকে টেম্পু, সিএনজি অটোরিকশা কিনে দিয়েছেন আবার চাহিদা অনুপাতে কাউকে ভ্যান রিকশা ও ব্যবসার পুঁজি দিচ্ছেন।
সেই সঙ্গে প্রয়োজনে স্বর্ণালংকারসহ নতুন ঘরবাড়ি ও সংসারের আসবাবপত্র দিচ্ছেন। মোট কথা একটি বিয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রয়োজনীয় সব দায়িত্বই তিনি পালন করেছেন। এ যেন অসহায়দের মাথার উপর বড় একটা ছায়া হয়ে দাঁড়িয়েছেন তিনি।
তবে এ বিয়েগুলোর আয়োজন একটু ব্যতিক্রম। কোনো বিয়েতেই তিনি নগদ অর্থ দেননি। প্রতিটি বিয়ের কাঁচা বাজার থেকে শুরু করে বর-কনের উভয়পক্ষের কাপড় কেনা পর্যন্ত সবকিছুই নিজের তদারকিতে রাখেন তিনি।
এমনকি শত ব্যস্ততার মধ্যেও ঢাকা থেকে ছুটে গিয়ে প্রায় সবগুলো বিয়ের অনুষ্ঠানে হাজির থেকে উকিল বাবা হয়ে বিয়ে সম্পন্ন করছেন। হিন্দু পাত্র-পাত্রির বিয়েতে রীতি অনুযায়ী রাত জেগে থেকে বিবাহ সম্পন্ন করেছেন বলেও জানা গেছে।
সেনবাগ উপজেলার কাবিলপুর ইউনিয়নের উত্তর শাহাপুর ডাক্তার বাড়ির অন্ধ মনোয়ারা বেগম বলেন, আমি অন্ধ মানুষ। আমার এই মেয়েকে কে বিয়ে করতে আসবে।
মেয়ের বিয়ে নিয়ে অনেক চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু আল্লাহ আমাদের জন্য একজন ভালো মানুষ পাঠিয়েছেন। মানিক মিয়া আমার মেয়ের বিয়ে দিয়ে আমাদের চিন্তা দূর করেছেন। আমরা তার জন্য দোয়া করি, আল্লাহ যেন মানিক মিয়াকে নেক হায়াত দেন।
সেনবাগ-সোনাইমুড়ী এলাকার একাধিক জনপ্রতিনিধির সঙ্গে আলাপ কালে তারা জানান, আমরা সত্যি আনন্দিত। আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক সমাজ সেবায় একজন উজ্জল নক্ষত্র। উনার কর্ম দেখে আমরা অনুপ্রাণিত হই। আমরা গর্বিত যে উনার মতো একজন মাটির মানুষ পেয়েছি।
এক প্রতিক্রিয়ায় তমা প্রুপের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক মানিক বলেন, ‘যতদিন আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রাখেন ততদিন সোনাইমুড়ী-সেনবাগের সকল গরীব ও অসহায় মেয়েদের নিজ খরচে বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা আমার আছে।
মানুষের বিভিন্ন স্বপ্ন থাকে, আমার স্বপ্ন অসহায় মেয়েদের বিয়ে দিয়ে তাদের অভিভাবকের মুখে হাঁসি ফোটানো। এ জন্য তিনি সকলের সহযোগীতা কামনা করেন।