নোয়াখালী থেকে : নোয়াখালীর জাহাইজ্যার, চর এক সময়ের ডাকা'ত এবং চ'রমপ'ন্থীদের অভ'য়ারণ্য হিসাবে পরিচিতি ছিল। সেই চর আজ হয়ে উঠছে বাংলাদেশ সেনাবা'হিনীর সবচেয়ে বড় সাম'রিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। ১৯৯২-৯৬ সালের দিকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম চলাচলকারী জাহাজ সমূহ নোয়াখালীর সুবর্ণ চর হয়ে বঙ্গোপসাগরে চলাচল করতো।
সেই সময়ে নোয়াখালির মোহনায় কোন এক চড়ে আ'টকে পরে একটি বিশাল জাহাজ। পরবর্তীতে জাহাজ আ'টকে পড়া সেই চরকে নামকরণ করা হয় জাহাইজ্যার চর। এক সময় মানুষ আ'ত'ঙ্কে সেই চরের নাম পর্যন্ত নিতো না। এই চরের বি'স্তৃত বনভূমি আর গভীর জ'ঙ্গলে গড়ে উঠে বিভিন্ন ডাকাত আর চ'র'মপ'ন্থী দলের আ'স্তা'না৷ কিন্তু বেশিদিন টিকতে পারেনি তারা।
বাংলাদেশ সেনাবা'হিনী ২০১৩ সালে সেই চরকে ডাকা'ত মু'ক্ত করে। পরে সেনাবা'হিনীকে এই অনুমতি দেয় বর্তমান সরকার। পরে সেনাবা'হিনী এর নতুন নামকরণ করে। যা আজকের স্বর্ণদ্বীপ হিসাবে পরিচিত৷ এদিকে ব্যবহারের অনুমতি পাওয়ায় ৩৭০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই বিশাল একখ'ণ্ড ভূমি পায় বাংলাদেশ সেনাবা'হিনী। মুল ভূখণ্ড থেকে আলাদা এই ভূমিকে মানুষের বসবাসযোগ্য করে তোলার কাজে নামে বাংলাদেশ সেনাবা'হিনী।
সেনার তত্ত্বাবধানে এই বনভূমি পরিষ্কার করে সেখানে ৬০ হাজার ঝাউ গাছ এবং ভিয়েতনাম এর ১৫০০ উচ্চ ফলনশীল নারিকেল গাছ রোপণ করে। সেই সাথে বছরের ৮ মাস পানির নিচে তলিয়ে থাকা এই বিস্তৃত জলাভূমিকে উ'দ্ধা'র এর প্র'ক্রিয়া শুরু করে বাংলাদেশ সেনাবা'হিনী। ধীরে ধীরে উ'দ্ধা'র করা হয়েছে মোট জলাভূমির দুই তৃতীয়াংশ জমি। দিনে দিনে ক্রমেই বৃদ্ধি করা হচ্ছে এর আয়তন। সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে সেখানে গড়ে তোলা হচ্ছে নতুন নতুন অবকাঠামো।
ইতিমধ্যে সেখানে একটি ৩১ সজ্জা বিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণ করেছে সেনাবা'হিনী। দ্বীপ এর আয়তনকে লাজে লাগিয়ে সেখানে গবাদিপশু খামার স্থাপন করেছে সেনাবা'হিনী। যা সেনাবা'হিনীর নিজস্ব চাহিদা পূরণে বিশেষ অবদান রেখে চলেছে। সেখানে স্থাপন করা ২০ টি খামারে ১৩ হাজার মহিষ, ১৬ হাজার ভেড়া এবং ৮ হাজার গরু পালন করা হচ্ছে। সেই সাথে এসব গবাদি পশু থেকে প্রাপ্ত দুধ এবং মাংস প্রক্রি'য়াজাতকরণের বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে এই দ্বীপে।
দ্বীপে বিভিন্ন ফলের চাষাবাদ শুরু করা হয়েছে। উৎপন্ন করা হচ্ছে বিভিন্ন শাক সবজি। সামাজিক এইসব উদ্যোগ এর পাশাপাশি দ্বীপ কে ঘিরে রয়েছে সেনাবা'হিনীর বৃহৎ সাম'রিক পরিক'ল্পনা। সেনাবা'হিনীর সাম'রিক পরিক'ল্পনা অনুসারে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বড় এবং উন্নত সাম'রিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা হচ্ছে এই অঞ্চলকে। যেখানে ইতিমধ্যে স্থাপন করা হয়েছে সাম'রিক বা'হিনীর বসবাস এর জন্য বিশেষ আবাসিক ব্যবস্থা যেখানে একসাথে থাকতে পারবে ৫০০০ সৈন্য।
রয়েছে সাম'রিক মহড়া চালানোর জন্য বিশাল অঞ্চল যা সেনাবা'হিনীর ভারি সাজোয়া যান, ট্যাংক এবং আর্মাড ক্যারিয়ার বহনে স'ক্ষ'ম করে গড়ে তোলা হয়েছে। এই অঞ্চলের ভূমি যেখানে বছরের ৮ মাস পানির নিচে থাকতো, সেই ভূমি রক্ষায় ব্যবহার করা হচ্ছে কন'ক্রিট ড্যাম সেই সাথে ভূমির উচ্চতা বৃদ্ধির কাজ করছে সেনাবাহিনী। ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের অধীনে থাকা এই বিশাল দ্বীপ টিতে স্থাপন করা হয়েছে টেলিফোন টাওয়ার যা সার্বক্ষ'ণিক মুল ভূখ'ণ্ডের সাথে যোগাযোগ র'ক্ষা করতে সাহায্য করে।
রয়েছে নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা যেখানে সোলারভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থায় দ্বীপ টিতে ১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। পাশাপাশি তেল ভিত্তিক জেনারেটর স্থাপন করা হয়েছে। ঘূর্নি'ঝড় কিংবা জলো'চ্ছ্বাস এর মত দুর্যো'গে স্থানীয় দের র'ক্ষা করতে এখানে স্থাপন করা হয়েছে ৩ টি বড় সা'ইক্লো'ন সেন্টার। এছাড়াও দ্বীপ টিতে উন্নত ইন্টারনেট সেবা প্রদানে ব্যবহার করা হচ্ছে স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট সুবিধা। সেনা সদস্য দের জন্য রয়েছে কম্পিউটার ল্যাব।
সাম'রিক প্রশিক্ষণ হিসাবে গড়ে তুল তে ইতিমধ্যে এই দ্বীপ ঘিরে বাজেট পরিক'ল্পনা গ্রহণ করেছে সেনাবা'হিনী। যার অধীনে দ্বীপটির বিভিন্ন অংশে হেলিপ্যা'ড নির্মাণ, হেলিকপ্টার এর জন্য হ্যাং'গার স্থাপন, ট্যাংক প্রশিক্ষণ ট্রাক নির্মাণ, নদী তীরবর্তী এলাকা জুড়ে বনভূমি স্থাপন, ভারি যানবাহন তথা, সেনা পরিবহনে ব্যবহার করা জাহাজ এবং নৌযান জন্য পোর্ট এরিয়া স্থাপনের পরিক'ল্পনা রয়েছে। এছাড়া সেনাবা'হিনী ভারি যানবাহন এর রক্ষ'ণাবে'ক্ষণ সুবিধা সম্বলিত একটি ওয়ারশপ এখানে স্থাপন করা হবে।
বর্তমানে ৩ টি নৌযান এবং ৬ টি ল্যান্ডিং ক্রা'ফট এর মাধ্যমে এখানে যাতাযায় ব্যবস্থা স্থা'পন করেছে সেনাবা'হিনী। দীর্ঘ মেয়াদি পরিক'ল্পনার অংশ হিসাবে ভবিষ্যতে এই দ্বীপে সাম'রিক বিমান ওঠানামার সুবিধার জন্য এয়ারস্টীপ নির্মাণের পরিকল্পনা যুক্ত করা হয়েছে। সেনাবা'হিনীর পাশাপাশি সরকারও এই দ্বীপ নিয়ে কিছু পরিক'ল্পনা গ্রহণ করেছে। সরকারের পরিক'ল্পনা অনুসারে বিশাল এই ভূমি এর এক অংশকে সিংগাপুর এর আদলে একটি উপশহর গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে প্রাক যাচাই বাছাই শুরু হয়েছে।
এছাড়া এখানে নৌবা'হিনীর জাহাজ সমূহের জন্য একটি ঘাঁ'টি নির্মাণ করা হবে। সেনাবা'হিনীর তথ্য মতে, এই দ্বীপে প্রতিবছর ১০ হাজার সেনা সদস্য তাদের ম'হড়া চালাতে স'ক্ষ'ম। বছরে দুই বার এখানে বর্তমানে বিভিন্ন সাম'রিক মহ'ড়ার আয়োজন করা হচ্ছে যেখানে দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন ডিভিশন থেকে সেনা সদস্যরা যোগ দিচ্ছে। ট্যাংক এবং আর্টি'লারি প্রশিক্ষণ গ্রহণের পাশাপাশি বিমানবা'হিনী ছোট পরিসরে বিভিন্ন যৌথ ম'হড়ায় অংশ নিচ্ছে। পরিক'ল্পনা সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে এই দ্বীপ টি হবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বড় সাম'রিক প্রশিক্ষণ ঘা'টি যেখানে এক সাথে ১০ হাজার এর বেশী সৈন্য মহ'ড়ায় অংশ নিতে পারবে। সৌজন্যে: ডিফ্রেস ৩৬০ ডট কম