মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই, ২০১৭, ০১:২৩:৩৯

হেভিওয়েট নেতাদের সঙ্গে পাল্লায় ছাত্রনেতারা

হেভিওয়েট নেতাদের সঙ্গে পাল্লায় ছাত্রনেতারা

সঞ্জিত সাহা, নরসিংদী থেকে : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরব হয়ে উঠেছে নরসিংদীর রাজনৈতিক অঙ্গন। তৃণমূলে দৌড়ঝাঁপের পাশাপাশি কেন্দ্রে বাড়ছে লবিং-তদবির। প্রার্থিতা জানান দিতে ইতিমধ্যে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা মাঠে নেমে পড়েছেন। জনগণের কাছাকাছি পৌঁছতে পাল্লা দিয়ে চালাচ্ছেন মসজিদ-মাদ্রাসায় অনুদান দেওয়াসহ সামাজিক কর্মকাণ্ড।

জেলার প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এখনই প্রধান দুই দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ব্যানার-ফেস্টুনসহ নানা ধরনের পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। কোথাও কোথাও কোরবানি ঈদের আগাম শুভেচ্ছা দিয়ে পোস্টার লাগানো হয়েছে। অনেক প্রার্থী সরব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও। এ জেলায় হেভিওয়েট প্রার্থীর পাশাপাশি রয়েছেন রাজপথ কাঁপানো সাবেক ও বর্তমান একঝাঁক ছাত্রনেতা।

জেলার হেভিওয়েট প্রার্থীদের আসনে হানা দিতে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠ চষছেন। বিতর্কিত ও পুরনোদের হটিয়ে স্থলাভিষিক্ত হতে চাইছেন রাজপথ কাঁপানো ছাত্রনেতারা। কার্যত এ জেলায় (১৯৯, ২০০, ২০১, ২০২ ও ২০৩) সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে। নরসিংদী-১ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে এগিয়ে রয়েছেন বর্তমান এমপি এবং দলের জেলা সভাপতি ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম হিরু বীরপ্রতীক।

তিনি এরই মধ্যে নানাভাবে তত্পরতা শুরু করেছেন। তার সঙ্গে দলীয় প্রতীক পেতে মরিয়া যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আইয়ুব খান। রাজনৈতিক মাঠে তেমন তত্পরতা চোখে না পড়লেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম হিরুর নানা ব্যর্থতা তুলে ধরে আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতার জানান দিচ্ছেন। এ ছাড়া নরসিংদী-২ আসনের সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খান পোটনও এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী।

এ আসনে বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও এলাকার নেতা-কর্মীদের আঁকড়ে ধরে রেখেছেন ডাকসুর সাবেক এই জিএস। জাতীয় পার্টির মনোনয়ন চাইবেন দলের জেলা সভাপতি শফিকুল ইসলাম। নরসিংদী-২ (পলাশ) আসনে বর্তমান এমপি কামরুল আশরাফ খান পোটন।

তিনি আগামী নির্বাচনে বড় ভাই সাবেক সংসদ সদস্য ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপকে নিজের আসন ছেড়ে দিতে পারেন। দলের হাইকমান্ড চাইলে তিনি সদর আসন থেকে নির্বাচন করবেন। তবে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রতীক নিয়ে ১৪-দলীয় জোটের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ ইনু) সাংগঠনিক সম্পাদক জায়েদুল কবিরও মনোনয়নপ্রত্যাশী।

গতবার তিনি আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হন। এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানের। তিনি নিয়মিত এলাকায় যোগাযোগ রাখছেন। এ ছাড়া জেলা বিএনপির অর্থবিষয়ক সম্পাদক এলদেম কবীর ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি এবং জেলা বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেতও মনোনয়নপ্রত্যাশী। জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন প্রেসিডিয়াম সদস্য আজম খান।

নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে এগিয়ে রয়েছেন বর্তমান এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা। তিনি এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগের পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অনুদান ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহন, কৃষি ব্যাংকের পরিচালক মাহবুবুর রহমান ভূঞা এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম রাখিলও দলীয় প্রতীক প্রত্যাশা করছেন।

অন্যদিকে এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন দলটির আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া। এ ছাড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মাস্টার, ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুর এলাহীও ব্যাপক তত্পরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে আকরামুল হাসান বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হওয়ায় স্থানীয় তরুণদের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে।

এদিকে বিএনপি নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলনের ভরা মৌসুমে মঞ্জুর এলাহী ও তোফাজ্জল মাস্টার গাঢাকা দিয়েছেন। এ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন চাইবেন অ্যাডভোকেট রিয়াজুল করিম বাসেদ। নরসিংদী-৪ (মনোহরদী-বেলাব) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন। একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও তিনি দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন।

তবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সহসম্পাদক ডা. আবদুর রউফ সরদার, যুবলীগের কেন্দ্রীয় উপ-শিক্ষা সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা কাজী মো. মাজহারুল ইসলাম এবং মনোহরদী উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বীরুও দলের প্রতীক নৌকা প্রত্যাশা করছেন। বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন ‘সংস্কারপন্থি’ নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল। বেশ কয়েক দিন আগে তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করে এলাকায় কাজ করার অনুমতিও পেয়েছেন।

এ ছাড়া কেন্দ্রীয় বিএনপির মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক কর্নেল (অব.) জয়নাল আবেদীনও শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। তবে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলও এ আসনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী। এরই মধ্যে এলাকায় তার পক্ষে ব্যাপক শোডাউন হচ্ছে। বিশেষ করে তরুণ নেতা-কর্মীরা জুয়েলের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তিনি নিবিড়ভাবে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

স্থানীয় বিএনপির একটি অংশ বলছে, এ আসনে বিএনপি থেকে সাবেক ছাত্রনেতা সানাউল হক নীরুকেও ধানের শীষ প্রতীক দিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। জাতীয় পার্টির মনোহরদী উপজেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট কামাল হোসেন ও নেওয়াজ আলী ভুইয়া। নরসিংদী-৫ (রায়পুরা) আসন থেকে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু।

আগামী নির্বাচনেও তিনি দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশা করছেন। সে লক্ষ্যে নিয়মিত এলাকায় যাচ্ছেন ও নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। এ আসনে এবার শক্ত অবস্থানে রয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতা ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য অ্যাডভোকেট রিয়াজুল কবির কাওছার। তিনি নিয়মিত এলাকায় রাজনৈতিক, সামাজিকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদান করছেন। গণসংযোগ করছেন গ্রাম থেকে গ্রামে।

এ আসনে আরেকজন শক্তিশালী প্রার্থী ছিলেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ। মনোনয়ন প্রত্যাশায় তিনিও গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয় পরিচয়ে ব্যারিস্টার তৌফিকুর রহমানও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে কোনো কারণে রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু নির্বাচন না করলে তার ছোট ভাই সালাহ উদ্দিন আহমেদ বাচ্চু কিংবা তার ছেলে রায়পুরা উপজেলা আওয়ামী লীগর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহমেদ পার্থ, ছাত্রনেতা এস এম কাউয়ুমও মনোনয়নপ্রত্যাশী হতে পারেন বলে জানা গেছে।

এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে এগিয়ে রয়েছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও যুবদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এ কে নেছার উদ্দিন ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক রেজাউর রহমান রিপন। উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক জামাল আহমেদ চৌধুরী এবং ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মো. শাহ আলমও শক্ত অবস্থানে রয়েছেন।

ছাত্রনেতা শাহ আলম দীর্ঘদিন ধরেই এলাকায় গণসম্পৃক্ত নানা কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন। এ ছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সহসম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল ও সাবেক হুইপ মাইনুদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম রুহেল ভূঁইয়াও তত্পরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন কেন্দ্রীয় নেতা এম এ সাত্তার। বিডি প্রতিদিন
এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে