তারেক পাঠান নরসিংদী প্রতিনিধি: পুরো জেলায় আতঙ্ক! একদিনে তিন জন খুন! নরসিংদী জেলায় একদিনে পৃথক ৩ টি হত্যাকান্ডের ঘটনায় জেলাজুড়ে আতঙ্কিত সাধারন জনগণ।
নরসিংদী সদর উপজেলার চিনিশপুরে শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার পথে স্ত্রীর সামনেই স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে চিনিশপুর কালীবাড়ির কাছে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম সুজন সাহা (৩৪)। তাঁর বাড়ি ঢাকার পীরেরবাগ এলাকায়।
ঘটনার দিন সুজন সাহা তার স্ত্রী অদিতি সাহাকে নিয়ে মনসা পূজার উদ্দেশ্যে শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে রওনা দেন। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে ট্রেন থেকে নেমে তাঁরা রিকশা করে রাজাদী যাওয়ার পথে চিনিশপুর কালীবাড়ির সামনে আসলে কতিপয় দুর্বৃত্তরা তাঁদের পথ আটকিয়ে হত্যা করে।
এ সময় দুর্বৃত্তরা সুজনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরে তাঁর চিৎকারে পথচারী ও স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা সুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নরসিংদীর সহকারী পুলিশ সুপার শাহরিয়ার আলম বুধবার রাতে জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
এদিকে একই দিনে বেলাবো উপজেলার দড়িকান্দী নামক এলাকার খাইলাবন্দের একটি চকের মাঝে হাত-পা বেধে আল-আমিন নামের এক প্রকৌশলীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার দিবাগত রাত ৯ টার দিকে। নিহত আলামিনের পরিবার জানায়, আলামিন প্রতিদিনের মতো তার কর্মস্থল নরসিংদীর ভেলানগর প্ল্যান ভিউ কনসালটেন্ট এন্ড ইঞ্জিনিয়ার থেকে রায়পুরায় তার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। রাত ৯টার পর থেকে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। পরে রাত ১০টার দিকে তার মোবাইল খোলা পাওয়া গেলে পরিবারের পক্ষ থেকে তার সন্ধান চাইলে দুর্বৃত্তরা বেলাবো উপজেলার দড়িকান্দীর খাইলাবন্দের চকে তাকে পাওয়া যাবে বলে সন্ধান দেন। পরে পরিবারের সদস্যরা সেখান থেকে তার হাত-পা বাধা ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করে। সেসময় তার ব্যবহারকৃত মটর সাইকেলটি দুর্র্বৃত্তরা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে।
একই দিনে মনোহরদী উপজেলায় বখাটের ধারালো কেচির আঘাতে মফিজ উদ্দিন (৫০) নামের এক চা বিক্রেতার মৃত্যু হয়েছে। বুধবার বিকেলে উপজেলার গোতাশিয়া ইউনিয়নের বাঘেরহাট বাজারে এ চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর স্থানীয়রা ঘাতক সাইফুল ইসলামকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। নিহত মফিজ উদ্দিন সর্বলক্ষনা গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের পুত্র ও বাঘেরহাট বাজারের চা বিক্রেতা ছিলেন।
প্রতক্ষ্যদর্শী ও পুলিশ জানায়, বুধবার বিকেলে স্থানীয় থার্মেক্স নিটওয়্যার মিলের শ্রমিকরা কাজ শেষে বাঘেরহাট বাজার দিয়ে বাড়ী ফিরছিলেন। এ সময় চক বগাদি গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে সাইফুল ইসলাম শ্রমিকদেরকে লাঠি দিয়ে এলোপাতারিভাবে পেটাতে থাকে।
এ সময় বাজারের চা বিক্রেতা মো. মফিজ উদ্দিন এগিয়ে গিয়ে সাইফুলকে বাধা দেন। এসময় ঘাতক সাইফুল ক্ষিপ্ত হয়ে পার্শ্ববর্তী নারায়নের সেলুন থেকে চুল কাটার কেচি এনে মফিজ উদ্দিনের গলায় এবং পেটে আঘাত করে। একপর্যায়ে প্রচুর রক্তক্ষরনে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন মফিজ। মফিজ উদ্দিনকে মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
ঘটনার পরই বাজারের লোকজন ঘাতক সাইফুলকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন। মনোহরদী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সাফায়েত হোসেন পলাশ জানান, সাইফুল একজন বখাটে এবং মানসিক প্রতিবন্ধী লোক। নিরীহ চা বিক্রেতাকে হত্যার খবর পেয়ে পুলিশ ঘাতক সাইফুলকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
এ ব্যাপারে হত্যা মামলা হয়েছে। এ নিয়ে গত বুধবারে নরসিংদীর জেলার সদর উপজেলা, বেলাবো ও মনোহরদীতে তিনজন খুন হলো। এ দিকে একই দিনে তিন জনকে হত্যার ঘটনায় পুরো জেলায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
এমটিনিউজ২৪ডটকম/আ শি/প্রতিনিধি