তারেক পাঠান নরসিংদী প্রতিনিধি: নরসিংদীর স্ত্রীর পরকীয়ার স্বামী খুন। প্রেমিক’ চাপাতিসহ গ্রেফতার। নরসিংদী সদর উপজেলায় সুজন সাহা (৩৪) হত্যার ঘটনায় তামজীদ আহম্মেদ নামের এক কলেজছাত্রকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তামজীদ নিহত সুজনের স্ত্রী অদিতি সাহার প্রেমিক বলে পুলিশ দাবি করেছে।
আজ শনিবার ভোররাতে সদর উপজেলার রাজাদী গ্রামের বাড়ি থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতি ও রক্তমাখা জামাসহ তামজিদকে গ্রেফতার করা হয়। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে তামজিদ আজ সন্ধ্যায় নরসিংদীর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
তামজিদের বাড়ি নরসিংদী শহরের ভেলানগর মহল্লায়। সে নরসিংদী আইডিয়াল কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র।
গত বুধবার রাতে নরসিংদী সদর উপজেলার চিনিশপুরে শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার পথে স্ত্রীর সামনে সুজন সাহাকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ওই রাতেই পুলিশ সুজনের স্ত্রী অদিতি সাহা, শাশুড়ি অলকা রানী সাহা ও স্ত্রীর বড় ভাই সজল সাহাকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেফতার হওয়া তিনজন ও সুজনের শ্বশুর কাশীনাথ সাহাসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আট-দশজনের বিরুদ্ধে নরসিংদী সদর মডেল থানায় মামলা করেন সুজনের বাবা বিমল চন্দ্র সাহা।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গ্রেফতারের পর তামজিদ পুলিশকে জানায়, অদিতি সাহার সঙ্গে প্রায় পাঁচ বছর ধরে তার প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। হিন্দু-মুসলমান হওয়ায় পরিবার তাদের সম্পর্ক মেনে নেয়নি। একপর্যায়ে পাঁচ মাস আগে অদিতির পরিবার জোর করে তাকে ঢাকার পীরেরবাগ এলাকার বাসিন্দা সুজন সাহার সঙ্গে বিয়ে দেয়। বিয়ের পরও তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে থাকেন অদিতি। পরে স্বামী সুজন সাহা ও তাঁর পরিবারের লোকজন ঘটনা জানতে পারেন। এ নিয়ে সুজন স্ত্রী অদিতিকে গালমন্দ করেন। এই ঘটনা জানতে পেরে ক্ষিপ্ত হয় তামজিদ। পরে সংসার আর ভালো লাগছে না বলে অদিতি তামজিদকে কিছু একটা করতে বলেন।
তামজিদ জানায়, বুধবার অদিতি স্বামী সুজনকে নিয়ে নরসিংদীতে তাঁর বাবার বাড়িতে মনসা পূজায় অংশগ্রহণের জন্য বেড়াতে আসছিলেন। আসার সময় অদিতি স্বামীকে নিয়ে ট্রেনে নরসিংদী নেমে বাবার বাড়ি যাবেন বলে মুঠোফোনে খুদেবার্তার (এসএমএস) মাধ্যমে তামজিদকে জানিয়ে দেন। এ তথ্য পেয়ে তামজিদ তার বাসা থেকে চাপাতি নিয়ে সাদা গেঞ্জির কাপড়ে পেঁচিয়ে বাড়ি থেকে বের হন এবং ঘটনাস্থলের পাশের ঝোঁপে অপেক্ষা করতে থাকেন। সুজন ও অদিতি রাত সাড়ে ১১টার দিকে চিনিশপুর কালীমন্দিরের কাছে পৌঁছালে তামজিদ চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে সুজনকে হত্যা করে।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) রূপন কুমার সরকার ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার এসআই তাপস কান্তি রায় জানান, গত বুধবার (১৬ আগস্ট) রাতে ঢাকা থেকে নরসিংদীতে শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে যাওয়ার পথে স্ত্রীর সামনেই দুর্বৃত্তের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন হন ঢাকার পীরেরবাগ এলাকার সুজন সাহা। এ ঘটনায় নরসিংদী সদর মডেল থানায় মামলা করা হয়। ঘটনার পরপর সুজনের স্ত্রী, শাশুড়ি ও স্ত্রীর বড় ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় মামলার তদন্ত করতে গিয়ে একটি এসএমএসের সূত্র ধরে শনিবার ভোর রাতে তামজিদকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নিহত সুজনের বড় বোন সীমা সাহা জানিয়েছেন, প্রায় পাঁচ মাস আগে নরসিংদীর রাজাদী এলাকার কাশীনাথ সাহার মেয়ে অদিতি সাহাকে বিয়ে করেন সুজন। বিয়ের পর থেকেই অদিতি শাশুড়ির মুঠোফোন নিয়ে দীর্ঘ সময় সবার আড়ালে গিয়ে কথা বলেন। এরপর সুজন স্ত্রীকে ১৫ হাজার টাকায় একটি মুঠোফোন কিনে দিলে বাথরুমে ঢুকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলতেন অদিতি। এতে বাড়ির সবাই বিরক্ত হয়ে তাঁর কাছ থেকে মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে যান। এতে স্বামী-শাশুড়ির সঙ্গে অদিতির মনোমালিন্য শুরু হয়। বুধবার অদিতি নিজের গয়না ও সব কাপড়-চোপড় নিয়ে মনসা পূজার নাম করে বাবার বাড়ি রওনা হন। সঙ্গে ছিলেন সুজন। রাতে ট্রেন থেকে নেমে সাড়ে ১১টার দিকে রিকশায় করে রাজাদী যাওয়ার পথে চিনিশপুর কালীমন্দিরের অদূরে তাঁর প্রেমিক তামজিদসহ কয়েকজন দুর্বৃত্ত তাঁদের পথরোধ করে। অদিতিকে ছেড়ে দিয়ে তারা সুজনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। তাঁর চিৎকারে পথচারী ও পাশের লোকজন এসে সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক সুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
এমটিনিউজ২৪ডটকম/আ শি/প্রতিনিধি