সোমবার, ০৬ নভেম্বর, ২০১৭, ০৫:৩৫:৫৩

আ.লীগের গলার কাঁটা জাসদ, ঘাঁটি পুনরুদ্ধার চায় বিএনপি

আ.লীগের গলার কাঁটা জাসদ, ঘাঁটি পুনরুদ্ধার চায় বিএনপি

তারেক পাঠান, নরসিংদী থেকে : একাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সরগম হয়ে উঠেছে নরসিংদীর-২ (পলাশ) আসনের রাজনৈতিক অঙ্গণ। দেশের বড় দুটি দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপি সারা দেশের ন্যায় পলাশেও তাদের স্বস্ব অবস্থার গড়তে আ-প্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে সভা সেমিনার, সদস্য ফরম বিতরন ও উন্নয়ন কর্মকান্ড প্রচারণার মধ্য দিয়ে চলছে রাজনৈক কার্যক্রম। অপরদিকে বিএনপি সল্প পরিসরে সভা সমাবেশ ও সদস্য সংগ্রহ করলেও এই দিক দিয়ে জাতীয় পার্টি রয়েছে অনেকটা পিছিয়ে।
 
আওয়ামীলীগের গলার কাঁটা জাসদ : জানা গেছে, স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও পলাশ আসনে বিজয়ের মুখ দেখেনি আওয়ামী লীগ। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বরাবরই ড. আবদুল মঈন খান এ আসন থেকে নির্বাচনে জয়ী হয়ে এমপি ও মন্ত্রীত্ব লাভ করেন।

সে সময়কার পলাশ উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি হাসানুল হক হাসান, ঘোড়াশালের মিয়া পরিবারের সন্তান খায়রুল কবির ও নৌ বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত অফিসার নুরুল ইসলাম আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে পরাজীত হন।

দীর্ঘ বছরের পরাজয়ের গ্লানী ও সাংগঠনিক দুর্বলতা নিয়ে ২০০৪ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে উপজেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডাঃ আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলিপকে সভাপতি হিসেবে নির্বাচীত করে পলাশের তৃণমুল আওয়ামী লীগ। তখন থেকেই পাল্টে যায় আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মাঠ।

সভাপতি দিলিপ রাজনৈতিক বিচক্ষনতায় খুব অল্প সময়ে আওয়ামী লীগের দুর্বল সংগঠনকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে আসেন। যার প্রতিফলন হিসেবে ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম বারের মতো বিএনপির ঘাঁটি থেকে ড. আবদুল মঈন খানকে বিপুল ভোটে পরাজীত করে বিজয় অর্জন করেন।

এ বিজয়ের মধ্যে দিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ দেখে স্বার্থকতার মুখ। এরপর আর থেমে যায়নি আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রার্থী দিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়র আসনটিও অর্জন করে নেয়। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী নির্বাচনে মহাজোট থেকে নৌকা প্রতীকে জাসদ নেতা জাহিদুল কবিরকে মনোনয়ন দিলে অনেকটা বিভ্রান্তীকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয় নেতাকর্মীদের।

সে সময় সভাপতি, আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থান ধরে রাখার জন্য তার আপন ছোট ভাই কামরুল আশরাফ খান পোটনকে সতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে মহাজোটের প্রার্থীকে পরাজীত করে সংসদ সদস্যের পদটি ফের দখলে নেয়। দশম নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে দলীয় মনোনয়ন নেওয়া জাসদ নেতা জায়েদুল কবিরের পক্ষে আওয়ামীলীগের কিছু নেতাকর্মী নির্বাচনী কাজ করলেও দলের অধিকাংশ নেতাকর্মীই সতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে।

সে সময় যে সকল নেতাকর্মী সতন্ত্র প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নেয় তাদের অনেকেই এখন আওয়ামীলীগ থেকে বিতারিত। এবার একাদশ নির্বাচনে মহাজোটের শরীক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রীক দল (জাসদ) থেকে পলাশ আসনে পুণরায় দলীয় মনোনয়ন নিতে মাথাচারা দিয়ে উঠেছে। এই নির্বাচনী আসনে গত এক বছরে জাসদ থেকে কয়েকটি সভা সমাবেশও করা হয়। জাসদের এসব প্রচারণা আওয়ামীলীগের গলার কাঁটা হয়ে দাড়িয়েছে বলে মনে করছে অধিকাংশ নেতাকর্মী।

জাতীয় সমাজতান্ত্রীক দল (জাসদ) নেতা জায়েদুল কবির বলেন, দশম সংসদ নির্বাচনের মহাজোট থেকে আমাকে দলীয় মনোনয়ন দিলেও, এমপি পরিবারের চাপে নির্বাচনে স্থানীয় আওয়ামীলীগ আমার বিপক্ষে অবস্থান নেয়। তবে এবার একাদশ নির্বাচনে হবে তার ভিন্ন চিত্র।

এদিকে পলাশ আসনের বর্তমান এমপি কামরুল আশরাফ খান পোটন তার বড় ভাই উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ডাঃ আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলিপকে একাদশ নির্বাচনে এ আসন ছেড়ে দেওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, আমি চাই আগামী নির্বাচনের পলাশ থেকে আমার বড় ভাই ডাঃ আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলিপ নির্বাচন করবে।

পলাশ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ডাঃ আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলিপ জানান, দশম সংসদ নির্বাচনে দল থেকে প্রথমে আমাকে মনোনয়ন দিলেও পরে সভানেত্রী মহাজোটের শরীক দল জাসদকে এ আসনে মনোনয়ন দেয়। সে সময় সভানেত্রীর নির্দেশে আমি এ আসন থেকে সড়ে পড়ি। এবার একাদশ নির্বাচনে পলাশের আসনে নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিবে বলে আমি আশাবাদী।

হিসাব নিকাশ করবে জাতীয় পার্টি : একসময়ে পলাশের রাজনৈতিক মাঠে জাতীয় পার্টি ছিল দ্বিতীয় অবস্থানে। কিন্তু সাংঠগনিক দুর্বলতা ও নেতৃত্বের অভাবে তা এখন তৃতীয় অবস্থানে চলে এসেছে। পলাশের অধিকাংশ নেতাকর্মী ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সাথে লিয়াজু করে চলছে।

নবম ও দশম নির্বাচনে এ আসনে জাতীয় পার্টি সরাসরি আওয়ামীলীগের পক্ষে অবস্থান নেয়। জাতীয় পার্টির অধিকাংশ নেতা জানায়, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ড. আব্দুল মঈন খানকে পরাজীত করে আওয়ামী লীগের বিজয় অর্জনে জাতীয় পার্টি বিরাট ভূমিকা পালন করে।

পলাশ উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক জাকির হোসেন মৃধা বলেন, আওয়ামীলীগ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ১৪ দলীয় জোটের শরীক দল জাতীয় পার্টির পলাশের নেতাকর্মীদের অনেকটা কোনঠাসা করে রাখে। দল ক্ষমতায় থাকলেও সেই সময় পলাশের জাতীয় পার্টি কোন সুযোগ সুবিধা পায়নি।

শরীক দল হিসেবে বিগত সময়ে আমরা আওয়ামীলীগকে কি দিয়েছি আর কি পেয়েছি তা নিয়ে আমাদের হিসাব নিকাশ রয়েছে। এবার একাদশ নির্বাচনে আমাদের পার্টি থেকে একক প্রার্থী দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে আমার, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আজম খান ও কেন্দ্রীয় যুগ্ন যুব বিষয়ক সম্পাদক আবু সাঈদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে।

ঘাঁটি ফিরে পেতে চায় বিএনপি : গত ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পলাশের বিএনপির শক্ত ঘাঁটির প্রথম পরাজয় হয়। এরপর থেকে একেএকে উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদ গুলোও চলে যায় ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের কব্জায়।

এতে করে ভেঙে পড়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মনোবল। সেই সাথে মামলা হামলার ভয়ে অনেকটা কোনঠাসা হয়ে পড়তে হয় বিএনপিকে। নিজেদের ঘাঁটি পুণরায় ফিরে পেতে বিভিন্ন সভা সমাবেশ ও দলের নতুন সদস্য সংগ্রহের মাধ্যমে সক্রিয় হচ্ছে উপজেলা বিএনপি।

পলাশ উপজেলা বিএনপির সভাপতি এরফান আলী জানান, পলাশে এখনো বিএনপির ঘাঁটি রয়েছে। যা একটি সুষ্ঠ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ মিলবে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী সারা দেশের ন্যায় পলাশেও বিএনপির নতুন সদস্য সংগ্রহের কাজ চলছে।

আমাদের নেতাকর্মীরা প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায় থেকে সদস্য সংগ্রহ করছে। দলীয় প্রার্থীর বিষয়ে এরফান আলী জানান, পলাশের বিএনপির একক প্রার্থী ড. আব্দুল মঈন খান।

এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে