সাইফুল সামিন: চাঁদের মাটিতে মানুষের প্রথম পা রাখার গল্প ছোটবেলায় পাঠ্যবইয়ে পড়েছিলেন আল ইমরান। এই গল্প তাঁর মনে গেঁথে গিয়েছিল। তখন থেকেই মহাকাশ নিয়ে তাঁর কৌতূহল, আগ্রহ।
ছোটবেলায় জোছনারাতে ইমরান অবাক হয়ে আকাশের দিকে তাকাতেন। মনে মনে ভাবতেন, চাঁদে মানুষ গেল কীভাবে? তিনি কি কখনো চাঁদে যেতে পারবেন? চাঁদে কী আছে? সেখানে গিয়ে কি থাকা সম্ভব?
মহাকাশ নিয়ে ইমরানের ছোটবেলার এই আগ্রহ শেষ পর্যন্ত তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (নাসা) জেট প্রোপালশন ল্যাবরেটরির (জেপিএল) গবেষক বানিয়েছে।
চলতি জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ইমরান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার জেপিএলে পোস্ট ডক্টরাল ফেলো হিসেবে যোগ দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার পাসাডেনায় জেপিএল অবস্থিত। নাসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, মর্যাদাসম্পন্ন গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্রগুলোর একটি জেপিএল।
জেপিএলের ব্যবস্থাপনায় রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (ক্যালটেক)। জেপিএলের অর্থায়নে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার। নাসার জন্য মনুষ্যবিহীন নভোযান তৈরি, পরিচালনা ও গবেষণার কাজ করে জেপিএল।
জেপিএলে ইমরানের কাজের ক্ষেত্র হলো মঙ্গলগ্রহ। মঙ্গল গ্রহে প্রাণের সম্ভাব্য বসবাসযোগ্য পরিবেশ অনুসন্ধানে (ডিসকভারি) কাজ করবেন তিনি। এই গবেষণাকাজে তাঁর তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আছেন জেপিএলের গবেষণা বিজ্ঞানী ক্যাথরিন স্ট্যাক মরগান।
ইমরানের (৩৩) বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার পশ্চিম রামপুর। তাঁর বাবা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. নুরুল ইসলাম। মা মাহমুদা খাতুন গৃহিণী।
নিজ এলাকায় স্কুল-কলেজের পাঠ শেষে ইমরান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ইমরান এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলাম। তাই বিজ্ঞানের মৌলিক কোনো বিষয়ে পড়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু ঢাবিতে ভর্তি পরীক্ষায় ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিষয় পাই। তাই এই বিভাগেই ভর্তি হই।’
স্কুল-কলেজের পরীক্ষাগুলোতে খুব ভালো ফল কখনো করেননি ইমরান। এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বলতে দ্বিধা নেই, আমি অনেকবার ফেলও করেছি।’
এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে চতুর্থ বিষয় ছাড়া ইমরানের জিপিএ ৩.৫৭। এইচএসসিতে ৪.৪। তবে অনার্সে এসে বদলে যান ইমরান। তিনি অনার্স ও মাস্টার্স উভয় পরীক্ষায় প্রথম হন। অনার্সে তাঁর সিজিপিএ ৩.৬৯। মাস্টার্সে ৩.৯৭।
ঢাবিতে মাস্টার্সে ইমরানের সহপাঠী ছিলেন আলী হাসান সরকার। তিনি বলেন, ‘ইমরান গতানুগতিক মেধাবী ছিলেন না। তিনি কঠোর পরিশ্রম করে বিশ্ববিদ্যালয়ে সেরা ফলাফল করেছেন।’
অনার্স-মাস্টার্স শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল ইমরানের। এ জন্য তিনি একাধিকবার আবেদন করেছিলেন। কিন্তু কোনোবারই তিনি নিয়োগের জন্য বিবেচিত হননি।
ইমরান বলেন, ‘আমাকে কেন নেওয়া হয়নি, তা জানি না। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি না হওয়াটা আমার জন্য ভালোই হয়েছে। একটা দরজা বন্ধ হয়ে গেলে অনেকগুলো দরজা খুলে যায়। ঢাবিতে শিক্ষক হিসেবে চাকরি না হওয়াটা আমার জন্য সম্ভাবনার বড় দুয়ার খুলে দিয়েছে।’
উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার ভাবনা আগে থেকেই ছিল ইমরানের। ২০১৭ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামার অবার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্ল্যানেটারি জিওসায়েন্সে মাস্টার্স করেন তিনি। অর্জন করেন পূর্ণ সিজিপিএ ৪। সূত্র: প্রথম আলো