সুমন বর্মণ: গত বছর ১৬ ডিসেম্বর কাজের সন্ধানে দুবাই গিয়েছিলেন রুমা আক্তার (৩৫)। কিন্তু এর তিন মাস পর দেশে ফিরে আসেন। এরপর স্বজনদের না জানিয়ে ঢাকার বাড্ডা নতুনবাজার এলাকায় ভাড়া বাড়িতে ওঠেন। অনেক দিন পর স্বজনরা বিষয়টি জানতে পারে। তবে তাঁর সঙ্গে কারো যোগাযোগ ছিল না।
গতকাল শুক্রবার নরসিংদীতে তাঁর পরিবারের সদস্যরা এসব তথ্য জানিয়েছে। গুলশান হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গত বুধবার গভীর রাতে নরসিংদীর শিবপুরের চরখুপি গ্রাম থেকে রুমা আক্তারকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। রুমা পলাশ উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন বুদু মিয়ার ছোট মেয়ে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাত ১২টায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি বিশেষ দল শিবপুরের চরখুপি গ্রামে অভিযান চালায়। তাদের সহযোগিতা করে পলাশ থানা পুলিশের একটি দল। বোনজামাতা তারু মিয়ার বাড়ি থেকে রুমা আক্তারকে আটক করা হয়। পুলিশ রুমার ব্যবহৃত মোবাইল ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র জব্দ করে। দীর্ঘ এক ঘণ্টার বেশি সময় অভিযান শেষে পুলিশ তাঁকে ঢাকায় নিয়ে যায়।
আটকের সময় প্রত্যক্ষদর্শী আওয়ামী লীগ নেতা মাহফুজুল হক টিপু বলেন, ‘গভীর রাতে পুলিশের গাড়ি দেখে আমি সামনে এগিয়ে যাই। তখন পিকআপ ভ্যানে পলাশ থানার এসআই আব্বাসের নেতৃত্বে একদল পুলিশ এবং সাদা মাইক্রোবাসে সাদা পোশাকের পুলিশ ছিল।
রুমাকে আটকের কারণ জানতে চাইলে তারা কারো সঙ্গে কথা বলার অনুমতি নেই বলে জানায়। বিষয়টি স্পর্শকাতর কোনো কিছু এমনটা উপলব্ধি করে এ বিষয়ে আর কথা বলিনি।’ নরসিংদীর পুলিশ সুপার আমেনা বেগম (বিপিএম) রুমাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
গতকাল শুক্রবার সকালে সরেজমিনে শিবপুর চরখুপি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রুমার বোনজামাতা তারু মিয়ার বাড়িতে সুনসান নীরবতা। সেখানে আটক রুমার বড় বোন সাবিনা আক্তার পরিচয় দিয়ে জানান, রুমা আক্তার কোনো লেখাপড়া করেনি। ১৭ বছর আগে শিবপুরে তাঁর প্রথম বিয়ে হয়। ওই সংসারে তাঁর এক সন্তান রয়েছে।
তবে দুই বছর পর সেই সংসার ভেঙে যায়। এরপর নোয়াখালীতে তাঁর দ্বিতীয় বিয়ে হয়। কিন্তু এক বছরের মাথায় সেই বিয়েও ভেঙে যায়। পরে ঢাকার গুলশান-বনানীর বিভিন্ন বাসাবাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন তিনি। তবে মাঝেমধ্যেই গ্রামে ফিরে মানসিক ভারসাম্যহীন আচরণ করতেন। এমনকি কয়েকবার বিষ খেয়ে ও শরীরে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছেন রুমা।
বড় বোন সাবিনা আক্তার আরো বলেন, ‘হঠাৎ করে গত বছর সে বিদেশে যাওয়ার জন্য টাকা চায়। বোনেরা টাকা জোগাড় করে দুবাই পাঠাই। কিন্তু সেখানে মাত্র তিন মাস থেকে দেশে ফিরে আসে। কিন্তু ভয়ে সে আমাদের জানায়নি। অনেক দিন পর শুনতে পাই, সে দেশে এসে বাড্ডা নতুনবাজারে থাকে।’
সাবিনা বলেন, “টিভিতে গুলশানের ঘটনা দেখে আমি রুমার মোবাইলে কল দিই। সে বলে, ‘আপা, আমি তো ওইখানেই ছিলাম। ওই হোটেলের সামনের ফুটপাতে বসে চা খাওয়ার সময় ঘটনাটা ঘটেছে। আমি তো ওই জায়গায় দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ ঘটনা দেখেছি।’”
রুমা আক্তারের জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করে বড় বোন সাবিনা আক্তার বলেন, ‘এ রকম হতে পারে না। আমার বোন এত দূর যাওয়ার মতো লোক না। ও অসুস্থ মানুষ। ধর্ম নিয়ে তার তেমন আগ্রহ আমাদের চোখে পড়েনি। ঘটনার সময় ঘোরাঘুরি করেছে, ফুটেজ-ক্যামেরায় পড়ে গেছে। এখন আমাদের একটাই দাবি, সুস্থ তদন্ত হোক।’
এ ঘটনায় বিব্রত রুমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন বুদু মিয়া। তবে রুমা জঙ্গি হামলার ঘটনায় জড়িত নন বলে তিনি মনে করেন। ঘটনার সুস্থ তদন্ত দাবি করে তিনি বলেন, ঘটনার সঙ্গে রুমা জড়িত থাকলে তাঁর যেকোনো শাস্তি তাঁরা মেনে নেবেন।
রুমার নিজ গ্রাম পলাশের চরসিন্ধুর ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের বাবুল মিয়া বলেন, ‘রুমা স্বাভাবিকভাবে ভালো চলাচল করলেও মাঝেমধ্যেই সে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলত। তার মতো মেয়ে এত বড় ঘটনায় আটক সন্দেহাতীত ব্যাপার।’
তবে দুবাই থেকে মাত্র তিন মাস পরেই ফিরে আসা, নিজেকে আত্মগোপনে রাখা, গুলশানের ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে সন্দেহজনক চলাফেরা ও মোবাইলে কথোপকথন, গুলশান ঘটনার পরদিন রুমা শিবপুরের চরখুপি গ্রামে বোনজামাতার বাড়িতে বেড়াতে আসা, মাঝে দুই দিনের জন্য ঢাকায় গেলেও বাকি সময়টুকু চরখুপি গ্রামেই কাটানো, একই সঙ্গে রুমার পেশা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।-কালের কন্ঠ
২৩ জুলাই, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ