এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : পাবনার ঈশ্বরদীতে মা কুকুরের অগোচরে আটটি কুকুর ছানাকে বস্তাবন্দি করে পুকুরে ডুবিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলার পর অভিযুক্ত নারী নিশি রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিশি রহমান ঈশ্বরদীর ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশন কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নের স্ত্রী।
এদিকে আসামি নিশি রহমান মঙ্গলবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘বাচ্চাগুলো আমাদের বাসার সিঁড়ির পাশে থাকত এবং খুব ডিস্টার্ব করত। তাই আমি বাজারের ব্যাগে ভরে পুকুরের পাশে একটি সজিনার গাছের গোড়ায় রেখে আসি। কিভাবে পুকুরে পড়েছে জানি না। আমি নিজে ছানাগুলোকে পুকুরে ফেলিনি।’
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন বাদী হয়ে ঈশ্বরদী থানায় মামলা করেন। ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ স ম আব্দুন নূর মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরেই ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের একটি কোণায় থাকতো টম নামের একটি কুকুর। এক সপ্তাহ আগে টম আটটি বাচ্চা প্রসব করে। সোমবার সকাল থেকে তার ছানাগুলো না পেয়ে পাগলপ্রায় অবস্থায় কান্না আর ছোটাছুটি করতে দেখা যায় মা কুকুর টমকে।
পরে উপজেলা পরিষদের কর্মচারীরা জানতে পারেন, ঈশ্বরদী উপজেলা পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়ন ও তার স্ত্রী জীবন্ত আটটি কুকুর ছানাকে বস্তার মধ্যে বেঁধে রোববার রাতের কোনো এক সময় ফেলে দেন উপজেলা পরিষদের পুকুরে।
একদিন পর সোমবার সকালে পাওয়া যায় কুকুর ছানাগুলোর মরদেহ। দুপুরের পর মৃত কুকুর ছানাগুলোকে ইউএনওর বাসভবনের পাশে মাটিচাপা দেওয়া হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাড়ির কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সোমবার সকালে নয়ন স্যার মোটরসাইকেলে বাইরে যাচ্ছিলেন। আমি ছানাগুলোর কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি কিছু জানেন না বলেন।
তখন তার ছেলে বলে- ‘আম্মু ছানাগুলোকে বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলে দিয়েছে।’ এরপর আমরা পুকুরে গিয়ে একটি বস্তা ভাসতে দেখি। তুলে খোলার পর আটটি ছানাকেই মৃত অবস্থায় পাই। মৃত ছানাগুলো দেখে মা কুকুরটি প্রচণ্ড আর্তনাদ করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মীরা কুকুরটিকে চিকিৎসা দেন।
এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কুকুর ছানা নিয়ে নিষ্ঠুরতার নিউজ ছাপা হয়। পুরো দেশে এ ঘটনাটি তোলপাড় সৃষ্টি হলে মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন বাদী হয়ে ঈশ্বরদী থানায় এ ঘটনায় মামলা করেন। মামলায় নিশি রহমানকে একমাত্র আসামি করা হয়।
ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রণব কুমার বুধবার জানান, মামলার পর মঙ্গলবার দিনগত রাত দেড়টার দিকে অভিযান চালিয়ে ঈশ্বরদী পৌর সদরের রহিমপুর গার্লস স্কুলের পাশে একটি বাসার চারতলা থেকে নিশি রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে তাকে আদালতে সোপর্দ করার প্রক্রিয়া চলছে।
ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন বলেন, ঘটনাটি বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত সমালোচিত হয়েছে। যে কারণে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার ফোন করেছিলেন। তিনি বলেছেন, এ ঘটনা অমানবিক। এ ঘটনা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে। তাই প্রাণী হত্যায় জড়িতদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। এছাড়াও মহাপরিচালক স্যারও ফোন করে তার পক্ষে মামলা দায়ের করার নির্দেশনা দিয়েছেন।
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, ‘কুকুর ছানা হত্যার ঘটনায় ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নকে সোমবার (১ ডিসেম্বর) গেজেটেড কোয়ার্টার ছাড়তে লিখিত নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তারা মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) বিকেলে বাসা খালি করে অন্যত্র চলে গেছেন।