এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : সারা দেশের মতো পেঁয়াজের শীর্ষ উৎপানকারী এলাকা পাবনায়ও অস্থিরতা দেখা গিয়েছিল পেঁয়াজের বাজারে। হঠাৎই গত শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) ২০-৩০ টাকা বেড়ে খুচরা বাজারে কেজি দাঁড়ায় ১৩০-১৪০ টাকায়। এরপর আমদানির খবরে কেজিতে দর কমেছে ৩০-৪০ টাকা। এতে অস্থিরতা কমেছে বাজারে।
তবে অতিরিক্ত দরপতন হলে মুড়ি কাটা পেঁয়াজ উৎপাদনকারী চাষিরা লোকসানে পড়বেন। সেদিকটা বিবেচনায় রেখে আমদানি ও বাজার নিয়ন্ত্রণের দাবি সংশ্লিষ্টদের।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) পাবনার বড় বাজার, মাসুম বাজার ও লাইব্রেরি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি পুরনো পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকায়। আর মুড়ি কাটা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকায়।
যা শুক্রবার প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা পর্যন্ত। আর পুরনো পেঁয়াজের দর ছিল ১৩০-১৪০ টাকা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত শুক্রবারের আগে পাবনার বাজারগুলোতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দর অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল। পুরনো পেঁয়াজের প্রতি কেজি খুচরা বাজার ছিল ১১০-১২০ টাকা।
বৃহস্পতিবারও বাজার অনেকটা একই থাকলেও শুক্রবার হঠাৎ বাজার বেড়ে পেঁয়াজের দর ওঠে ১৪০ টাকায়। কোনো কোনো জায়গায় ১৫০ টাকাতেও বিক্রি হয়েছে। এর পরদিন আবার দর অনেকটাই কমে যায়। অর্থাৎ শনিবার ও রবিবার বাজার ছিল ১১৫-১২৫ টাকা। তবে আমদানির খবরে দর আরো কমে সোমবার বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকায়।
১২০ টাকার মুড়ি কাটা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকায়। তবে আমদানির প্রভাবে অতিরিক্ত দরপতন হলে চাষিরা লোকসানে পড়বে বলেও জানান তারা।
বড় বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী শহিদুল্লাহ শেখ বলেন, ‘পাবনায় শুধু শুক্রবারেই পেঁয়াজের বাজার অতিরিক্ত ছিল। এর পরদিন সকালেই বাজার কমেছে। ১৪০ টাকার পেঁয়াজ বিক্রি করতে হয়েছে সর্বোচ্চ ১২৫ টাকা। এতে আমরা ছোট ব্যবসায়ীরা লোকসান পড়েছি। এভাবে হুটহাট বাজার ওঠানামা না হওয়াই ভালো। দাম যেন স্বাভাবিক থাকে, আমরা সেটাই চাই। কারণ যে দামেই বিক্রি করি, আমাদের ওই একই লাভ।’
আরেক ব্যবসায়ী মকবুল বলেন, ‘এখন মুড়ি কাটা পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। আজ ব্যাপক উঠেছে। এদিকে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করছে। কৃষকের কথা মাথায় রেখে যেন এই দাম কম বা বেশি হয়। কারণ এ কয়দিনে যেভাবে দাম কমেছে, এভাবে কমতে থাকলে বাজার একেবারে পড়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে কৃষকরা লোকসানে পড়বেন। ২৫০০ টাকা মণ প্রতি দর পেলে কৃষকরা লাভবান হবেন। তাহলে তারা আবাদ ও উৎপাদনও বাড়াবেন। এদিকে ভোক্তাও সহনীয় দামে কিনে খেতে পারবেন। তাই এ সব কিছু বিবেচনায় রেখে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।’
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একমত পোষণ করছেন অধিকাংশ ক্রেতা। বাজারকে সিন্ডিকেটমুক্ত করে কৃষকদের বাঁচিয়ে সহনীয় দাম নির্ধারণের দাবি তাদের। ক্রেতা রাইসুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে শৃঙ্খলা কখনোই দেখা যায় না। এক দিনে বাজার অস্বাভাবিক হারে বাড়ল। আবার আমদানির খবরে একইভাবে কমল। কম থেকে দামটা যেন সহনীয় পর্যায়ে থাকে, সেটিই আমরা চাই। ৫০ টাকার মধ্যে দাম থাকলে ভোক্তা ও কৃষক উভয়েই বাঁচবে।’
এদিকে কৃষকরা বলছেন, গত বছর মুড়ি কাটা পেঁয়াজ আবাদে বিঘাপ্রতি কেউ কেউ ৭০-৮০ হাজার টাকাও লোকসান গুনেছেন। তাদের দাবি, বাজারে ওঠার সময়ই বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করায় বাজার একেবারে কমে যায়। এতে লোকসানে পড়ে কৃষক। এ ক্ষেত্রে কৃষকের স্বার্থ বিবেচনায় রেখে আমদানি ও বাজার নিয়ন্ত্রণের দাবি তাদের।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. রাফিউল ইসলাম বলেন, ‘বাজার স্বাভাবিক রাখতে খুবই সীমিত আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কৃষকদের চিন্তার কারণ নেই। এবার তাদের আবাদ ব্যয় কম পড়েছে। সব মিলিয়ে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা মণ দর পেলে তারা অনেক লাভবান হবেন। আমরা সেটি নিয়ে কাজ করছি। এ ছাড়া বাজারে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রশাসনের সহায়তায় বাজার মনিটরিংও করা হচ্ছে।’