প্রবাস ডেস্ক : মসজিদ ও মুসলিম-আমেরিকানদের নিরাপত্তায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বাংলাদেশি ইমামসহ মুসল্লিকে গুলি করে হত্যার দায়ে আটক ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবিতে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়েছে।
গত ১৩ আগস্ট জোহর নামাজ পড়িয়ে মসজিদ থেকে নিকটবর্তী বাসায় যাবার সময় ওজনপার্কে আল ফোরকান জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আলাউদ্দিন আকঞ্জি (৫৫) এবং তার সাথী থারা মিয়া (৬৪)-কে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে এ কর্মসূচির আয়োজন করে নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ সোসাইটি।
অংশগ্রহণকারীদের হাতে ছিল ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘স্টপ হেইট ক্রাইম’, মুসলিম লাইভস ম্যাটার’, 'উই ডিমান্ড জাস্টিস’ ইত্যাদি লেখা প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার।
ইমামসহ মুসল্লি হত্যার মামলায় ৩৫ বছর বয়েসী অস্কার মরেলকে গ্রেফতারের পর তার ঘর থেকে পয়েন্ট ৩৮ ক্যালিবারের রিভলবারটিও উদ্ধার করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ভিডিও ফুটেজে যে পোশাকে তাকে দৌড়ে পালাতে দেখা যায়, সেই পোশাকটিও পুলিশ উদ্ধার করেছে। এরপরও তিনি কেন নিজেকে নির্দোষ দাবি করছেন তা নিয়ে বিক্ষোভ-সমাবেশ থেকেও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আজমল হোসেন কুনু বলেন, ‘গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিই ঘাতক, এতে কোন সন্দেহ-সংশয়ের অবকাশ থাকতে পারে না। তাই তার সর্বোচ্চ তথা আজীবন (নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে মৃত্যুদণ্ডের বিধান নেই) কারাদণ্ড দাবি করছি।’
নিউইয়র্কের পুলিশ ডিপার্টমেন্টের কমিশনার উইলিাম ব্র্যাটন বুধবার বিকালে এক প্রেসব্রিফিংয়ে বলেন, নিউইয়র্ক সিটির মুসলিম কম্যুনিটির প্রায় সকলেই বলাবলি করছেন যে, মুসলিম-বিদ্বেষমূলক মন্তব্য/বক্তব্য প্রচারের পরিপ্রেক্ষিতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে আক্রমণের প্রবণতা বেড়েছে। তারই জের হিসেবে ইমাম আকঞ্জি এবং থারা উদ্দিনকে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তারা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারেননি ঠিক কি উদ্দেশ্য নিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।
পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, ‘আমি জানি যে, কম্যুনিটির অনেকেই ভাবছেন যে এটি হেইট ক্রাইম। তবে এখনও আমরা নিশ্চিত করতে পারছি না এবং তদন্তের এ পর্যায়ে আমি তা নিশ্চিত করতে চাচ্ছি না’।
এদিকে, আদালতে নিজেকে নির্দোষ দাবির পরই অভিযুক্ত অস্কারকে নিউইয়র্ক সিটির রাইকার্স আইল্যান্ড কারাগারের একটি সেলে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। জামিনহীন আটকাদেশ দেয়া হয়েছে। সেই সেলে প্রবেশ পথে জনৈক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে অত্যন্ত অস্কার বলেছেন, ‘ওটা আমি ছিলাম না। আমি শুধু বলতে চাই, আমি সকল ধর্মকেই পছন্দ করি।’
উল্লেখ্য, অস্কারকে রবিবার রাতে গ্রেফতারের পর সোমবার দুপুরে দ্বিতীয় ডিগ্রি হত্যার অভিযোগ গঠন করা হয়। একইসময়ে অস্কারের গুলিতে (অভিযোগ অনুযায়ী) নিহত ইমাম ও মুসল্লীর নামাজে জানাযায় অংশগ্রহণকারী ২০/২২ হাজার মানুষ স্লোগানে উচ্চারণ করেন ‘ঘাতকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই’।
এ সময় ওই জানাযায় সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাসিয়োও উপস্থিত ছিলেন। ঘটনার পূর্বের পরিস্থিতির ওপর ভিডিও ফুটেজ এবং ইমাম আকঞ্জি ও মুসল্লি থারা মিয়াকে গুলি করে দৌড়ে নিজের গাড়িতে উঠে পলায়নের সময় এক সাইকেল আরোহীকে ধাক্কা দেয় ঘাতক। গাড়ি না থামিয়ে স্থান ত্যাগের সময় সাইকেল চালক গাড়ির নম্বর প্লেট লিখে পুলিশকে ফোন করেন। সেখান থেকে দ্রুত সটকে পড়ার পথে মাইল তিনের দূর টহল পুলিশের ছদ্মবেশী একটি গাড়িতেও ধাক্কা দেয় অস্কার। এরপর সেখান থেকেও সে দ্রুত পালিয়ে রাস্তায় গাড়ি রেখে সরে পড়েন।
অবশেষে রবিবার রাতে তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে ওজনপার্কের নিকটেই ইস্ট নিউইয়র্কের একটি বাসা থেকে। যে রিভলবারের গুলিতে মারা গেছেন ইমাম ও মুসল্লী, সেটিও অস্কারের ঘরেই ছিল। এসব বিষয় গভীরভাবে পর্যালোচনার পর মঙ্গলবার তাকে ক্রিমিনাল কোর্টে পেশ করার সময় খুনের প্রথম ডিগ্রি অভিযোগ সংযোজন করা হয়।
তবে এখনও তার বিরুদ্ধে ‘হেইট ক্রাইম’র অভিযোগ উত্থাপন না করায় বিক্ষোভ-সমাবেশ থেকে পুলিশের সমালোচনা করেন প্রবাসী আইনজীবী ও মূলধারার রাজনীতিক মোহাম্মদ এন মজুমদার এবং শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা মিসবাহ উদ্দিন। তারা বলেন, ‘রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্য/মন্তব্য/বিবৃতিতে মুসলিম-বিদ্বেষ বেড়েছে। অস্কার মরেল তার অন্যতম উদাহরণ।’
ইউএস সুপ্রিম কোর্টের এটর্নি মঈন চৌধুরী এই বিক্ষোভে অংশ নিয়ে বলেন, ‘নভেম্বরের নির্বাচনে ব্যালটের মাধ্যমে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ডাম্প করতে হবে। অন্যথায় এই যুক্তরাষ্ট্রে ইমিগ্র্যান্টদের পাশাপাশি মুসলমানদের বসবাসের ব্যাপারটি মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।’
কম্যুনিটি অ্যাক্টিভিস্ট মাজেদা এ উদ্দিন বলেন, ‘মসজিদের মুসল্লীগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। মসজিদের আশপাশে টহল পুলিশের সংখ্যা বাড়াতে হবে।’
সমাবেশে নেতৃবৃন্দের মধ্যে আরও ছিলেন বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম হাওলাদার, কম্যুনিটি অ্যাক্টিভিস্ট কাজী আজম প্রমুখ। -এনআরবি নিউজ
১৮ আগস্ট, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম