তানভীর আহমেদ, লন্ডন : লন্ডনের জনপ্রিয় পত্রিকা ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ডের দৃষ্টিতে লন্ডনের এ বছরের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের তালিকায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি ও বঙ্গবন্ধুর নাতনি টিউলিপ সিদ্দীকসহ চার বাংলাদেশি স্থান পেয়েছেন। এরা হচ্ছেন, বেথনালগ্রিন ও বো আসনের এমপি রুশনারা আলী, প্রখ্যাত বাংলাদেশি-ব্রিটিশ নৃত্যশিল্পী আকরাম খান এবং মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেনের সেক্রেটারি জেনারেল হারুন খান।
পত্রিকাটি মোট ৩২টি ক্যাটাগরিতে লন্ডনের মোট এক হাজার প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বকে নির্বাচিত করে। প্রিন্স চার্লসের উপস্থিতিতে লন্ডনের স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যায় তালিকাটি প্রকাশিত হয়।
এ তালিকায় রাজনীতিভিত্তিক ওয়েস্টমিনিস্টার ক্যাটাগরিতে স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি ও শেখ রেহানার কন্যা টিউলিপ সিদ্দীক এবং বেথনালগ্রিন ও বো আসনের এমপি রুশনারা আলী। আর নৃত্য ক্যাটাগরিতে জায়গা করে নিয়েছেন আকরাম খান। এছাড়াও ফেইথ লিডার ক্যাটাগরিতে মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেনের সেক্রেটারি জেনারেল হারুণ খানের নাম এসেছে।
শহরের সায়েন্স মিউজিয়ামে অনুষ্ঠিত জমকালো ওই অনুষ্ঠানে ‘দ্য প্রোগ্রেস ওয়ান থাইজেন্ড’ শিরোনামে দশমবারের মতো লন্ডনের হাজার প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের তালিকা প্রকাশ করে পত্রিকাটি।এ বছর তালিকার শীর্ষে ছিলেন লন্ডনের মেয়র সাদিক খান, তাকে লন্ডনার অব দ্য ইয়ার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এছাড়াও তালিকাটিতে ওই তালিকায় রয়েছেন যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনের মতো ব্যক্তিত্ব।
এ তালিকার ওয়েস্টমিনিস্টার ক্যাটাগরিতে শেখ রেহানার কন্যা টিউলিপ সিদ্দীককে রাখার ব্যাপারে বলা হয়েছে,টিউলিপকে আত্মপ্রচারবিমুখ উল্লেখ করে ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ড জানিয়েছে, ‘টিউলিপ যখন বিরোধে জড়িয়ে পড়েন তখনই তার সেরাটা চেনা যায়।’
সিরীয় উদ্বাস্তুদের ব্রিটিশ সরকারের সহায়তা দেওয়ার ব্যপারে টিউলিপের সরব উপস্থিতিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছে পত্রিকাটি। এছাড়াও গর্ভবতী থাকা অবস্থায় হাউজ অব কমন্সের বিতর্ক চলাকালে টিউলিপ খাবার গ্রহণ করতে গিয়ে হাউজ অব কমন্সের নিয়ম ভাঙ্গলে ডেপুটি স্পিকার টিউলিপকে বলেছিলেন, ‘টিউলিপ প্রেগন্যান্সি কার্ড ব্যবহার করে হাউজ অব কমন্সের নিয়ম ভেঙ্গেছেন।’
পরে টিউলিপ সিদ্দীক পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘একজন নারী হিসেবে ডেপুটি স্পিকারের জানা উচিত ছিল কখন একজন গর্ভবতী মায়ের খাবার গ্রহণের প্রয়োজন হয়।’
ওই সময় তিনি প্রয়োজনে গর্ভবতীদের জন্য হাউজ অব কমন্সের নিয়ম শিথিল করারও প্রস্তাব দেন।
এদিকে, খবরটি জানতে পেরে হ্যাম্পস্টেড ও কিলবার্ন এলাকার এমপি টিউলিপ সিদ্দীক এক ফেসবুক পোস্টে জানান, ‘গতরাতে এ সংবাদ জানার পর নিজেকে অত্যন্ত সম্মানিত মনে হচ্ছে।’
প্রতি বছর লন্ডনের ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ড ব্রিটেনের বিভিন্ন সেক্টরের প্রভাবশালীদের নিয়ে ১ হাজার জনের একটি তালিকা প্রকাশ করে। ওই তালিকায় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের ক্যাটাগরিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনের মতো ব্যক্তিদের পাশে স্থান পেয়েছেন টিউলিপ সিদ্দীক।
রুশনারা আলী সম্পর্কে ওই তালিকায় বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে নেতৃত্ব নির্বাচন প্রতিযোগিতায় করবিনকে সমর্থন দেন রুশনারা আলী এবং এই গ্রীষ্মেই তিনি তাকে কোনও ছাড় না দিয়ে ‘ভাল কাজ করার’ আহ্বান জানান। স্বাধীনচেতা এই ব্রিটিশ এমপি সেসময় সহকারী নেতা নির্বাচনে অংশ নিতে চান। তবে পদের জন্য অনেক কষ্ট করতে হওয়ার প্রেক্ষিতে তিনি তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। এছাড়া ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইরাকে ইসলামিক স্টেটে বিমান হামলার প্রতিবাদে তিনি সরকারের শিক্ষা ও যুব উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের ছায়ামন্ত্রীর পদ থেকেও পদত্যাগ করেন।
তালিকার নৃত্য ক্যাটাগরির ১০ম স্থানে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আকরাম খানের নাম রয়েছে। তিনি উইম্বলডনে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন পেশাদার নৃত্য শিল্পী। এছাড়া তিনি একজন নামকরা কোরিওগ্রাফার হিসেবেও পরিচিত।
তালিকায় ফেইথ লিডার ক্যাটাগরিতে ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছেন মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেনের সাধারণ সম্পাদক হারুন খান। গত বছর এক উন্মুক্ত চিঠিতে সংগঠনটির পক্ষ থেকে যুবকদের মৌলবাদ থেকে দূরে রাখতে ইমামদের ঘোষণা দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। এরপর থেকেই তিনি ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করে মৌলবাদীদের বিভিন্ন কাজের বিরোধিতা করে আসছেন। -বাংরা ট্রিবিউন।
০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম