বুধবার, ০৫ অক্টোবর, ২০১৬, ১০:৩৫:৫০

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশীদের মানবেতর জীবন

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশীদের মানবেতর জীবন

প্রবাস ডেস্ক: মালয়েশিয়ায় পেশাদার ভিসায় (ডিপি-১০) পাড়ি জমানো বাংলাদেশীরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বেতন পাচ্ছেন না। এমনকি কারও কারও কপালে কোনো কাজ জোটেনি এখনও।
 
একটি সূত্রে জানা গেছে, কর্মীর পাসপোর্ট দালালদের হাতে আটক থাকা ছাড়াও কোম্পানিতে কাজ না পাওয়া কর্মীর সংখ্যা বেশি বলে জানতে পেরেছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এদিকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন ও মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এসব শ্রমিকের কর্মক্ষেত্রের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে সম্প্রতি একটি ই-মেইল বার্তা পাঠানো হয়েছে দূতাবাসে।
 
ওই ই-মেইল বার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে, বেশ কিছু প্রফেশনাল ভিসার কাগজপত্র সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। তাই এসব ভিসার বিপরীতে বহির্গমন ছাড়পত্র দেয়ার আগে হাইকমিশন থেকে যাচাই-বাছাই হওয়া প্রয়োজন। এ দিকে চলতি বছরের এপ্রিলে জোহান এসডিএন বিএইচডি কনস্ট্রাকশন কোম্পানির অধীনে মালয়েশিয়ায় যান জামালপুরের রুহুল আলম। স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে দেশে একটি ওষুধ কোম্পানির মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ করতেন তিনি। বেতন ও কমিশনসহ আয় ছিল মাসে প্রায় ৪০ হাজার টাকা।
 
বড় ভাইয়ের বন্ধু জুবায়েরের প্ররোচণায় মালয়েশিয়ায় আসেন তিনি। ক্যাটাগরি-১ এ প্রফেশনাল ভিসায় ওই কোম্পানিতে ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগের কথা ছিল তার। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাংলাদেশী টাকায় বেতন হবে এক লাখ।
তবে ক্যাটাগরি-১ এ প্রফেশনাল ভিসায় মালয়েশিয়ায় পৌঁছেই সর্বনাশটা বুঝতে পারেন রুহুল। পুরো ৪৮ ঘণ্টা এয়ারপোর্টে কাটানোর পর হামিদ নামে এক বাংলাদেশী তাকে আমপাংয়ে নিয়ে যান।
 
বাংলাদেশ থেকে জুবায়ের ফোনে জানান, ওই কোম্পানিতে ম্যানেজারের পদ শূন্য নেই, কিছুদিন আরেকটি কোম্পানিতে কাজ করার জন্য।
 রুহুল আলমকে নিয়ে যাওয়া হলো জোহরবারুতে। সেখানে একটি কাঁচ তৈরির কারখানায় শ্রমিকের কাজ দেয়া হয় রুহুলকে। যেখানে ভারি মেশিনপত্র চালাতে হতো এবং বেতন ছিল বাংলাদেশী টাকায় ২০ হাজার টাকা। আর থাকতে হতো একই রুমে ১০ থেকে ১২ জন।  এরপর গত জুনে দেশে ফিরে আসেন তিনি। এভাবেই রুহুলের মতো বাংলাদেশী হাজার হাজার যুবক পেশাদার ভিসায় গিয়ে হচ্ছেন প্রতারণার শিকার। আবার অনেকেই কর্মহীন হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
 
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিচালক এ কে এম টিপু সুলতান বলেন, প্রফেশনাল ভিসায় বহির্গমন নিতে একাধিক রিক্রুটিং এজেন্সির মোট ৭২টি ভিসার আবেদন জমা পড়েছে। এসব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে আমাদের কিছু কিছু ভিসায় সন্দেহ হয়েছে। তাই বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য গত ২৫ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়ায় আমাদের হাইকমিশনকে চিঠি দিয়েছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চলতি বছর দেশ থেকে পাড়ি জমানো শ্রমিকেরা কেমন আছেন তারও সর্বশেষ তথ্য জানার জন্য আমরা হাইকমিশনকে অনুরোধ করেছি। তবে সেখান থেকে প্রতিবেদন আসতে কতদিন লাগতে পারে তা তিনি জানাতে পারেননি।
 
প্রফেশনাল ভিসায় (ডিপি-১০) যাওয়া সিলেটের দুইজন শ্রমিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ১০ মাস আগে বাড্ডা নর্দার একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে আমরা দুইজনে এখানে আসি। কিন্তু এখন পর্যন্ত দালাল আমাদের হাতে পাসপোর্ট দেয়নি। এখন দুই হাজার দুইশ' রিংগিত দাবি করছে, না দিলে পাসপোর্ট দেবে না। তারা বলেন, পাসপোর্ট না থাকায় নানান সমস্যা হচ্ছে। তাছাড়া যে কোম্পানির নামে আমরা এসেছি সেখানে কাজ নেই। তাই জহুরবারুর একটি মার্কেটে লুকিয়ে কাজ করছি।
 
এ বিষয়ে বুধবার মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাউন্সিলর (শ্রমিম) সায়েদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। বিএমইটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রফেশনাল ভিসা নিয়ে ৩৫ হাজার ২২৮ জন কর্মী মালয়েশিয়া গেছেন। মালয়েশিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশ কমিউনিটির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূলত ২০১২ সালে বেসরকারি প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি বন্ধ হলে এক শ্রেণির অসাধু রিক্রুটিং এজেন্সি এ পেশাদার ভিসা ও ডিপি-১০ ভিসায় মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো শুরু করে।
 
এ জন্যে তিন থেকে চার লাখ টাকা খরচ করতে হয় (এক বছরের ভিসার জন্য)। এ প্রক্রিয়ায় প্রথমে ট্যুরিস্ট ভিসায় মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর মালয়েশিয়ান কোম্পানির অধীনে পুত্রজায়া থেকেই ভিসা নেয়া হয়। এছাড়াও বাংলাদেশ থেকেও কোম্পানির নিয়োগপত্র এনে এ ভিসা নেয়া যায়।
 কেননা পেশাদার এ ভিসার মাধ্যমে চিকিৎসক, প্রকৌশলী বা অন্য পেশার দক্ষ মানুষেরা যেতে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ছাড়পত্র প্রয়োজন হয় না। আর বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে চুক্তি করে অর্থের বিনিময়ে এদের ছেড়ে দেয়া হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিউনিটির একাধিক নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের দেশের ছেলেরা প্রতারিত হয়ে এখানে এসে ক্লিনার, পেট্রোল পাম্প বা নির্মাণ সাইটে কাজ করতে হচ্ছে। এক শ্রেণির দালালরা যোগ্যতা সম্পন্ন ছেলেদের মালয়েশিয়ায় এনে ফাঁদে ফেলছেন।
 
বাংলাদেশীদের বিদেশমুখী দুর্বলতাও এজন্য দায়ী বলে মন্তব্য করলেন কমিউনিটি নেতারা। ডিপি-১০ ও পেশাদার ভিসায় কতো বাংলাদেশী রয়েছে তার কোনো হিসেব কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে পাওয়া যায়নি।
 
শুধু প্রতারণা ছাড়াও অনেক বাংলাদেশী জেনে-বুঝে এ ভিসায় মালয়েশিয়া গিয়ে এখন আর কাজ পাচ্ছেন না। কেননা নামকাওয়াস্তে কোম্পানিটির কোনো কাজ আসলে নেই। শুধুমাত্র অফিস দিয়ে ভিসা ব্যবসা করা হয়।-যুগান্তর
০৫ অক্টোবর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে