প্রবাস ডেস্ক : ভারতে হঠাৎ করেই ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট নিষিদ্ধ করায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় যাওয়া মানুষদের। কেন্দ্রীয় সরকারের মঙ্গলবারের এই ঘোষণায় সেদেশে যাওয়া বাংলাদেশের নাগরিকেরা অসহায় অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তাদের অধিকাংশের কাছে ভারতীয় টাকা বলতে যা আছে, তার প্রায় সবটাই ওই দু’টি নোটের।
এছাড়া, বুধবার ভারতের সমস্ত ব্যাঙ্ক ও এটিএম বুথও ছিল বন্ধ। ফলে হাতে থাকা ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট অচল হওয়ার দরুণ বুধবার বাংলাদেশ থেকে আসা বহু মানুষের কলকাতায় খাওয়াও জোটেনি!
বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়াদের একটা বড় অংশ আবার রোগী এবং রোগীর আত্মীয়-স্বজন। তারা কলকাতার ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস লাগোয়া পিয়ারলেস হাসপাতাল, আর এন টেগোর ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিয়াক সায়েন্সেস, অ্যাপোলো, মেডিকা, এএমআরআইয়ের মতো বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এসব রোগীর আত্মীয়দের একটা বড় অংশ থাকছেন ওইসব হাসপাতাল লাগোয়া হোটেল ও অতিথিশালায়। কেউ কেউ দৈনিক ভাড়ায় কোনও বাড়িতে ঘর নিয়ে থাকেন। কিন্তু ডলার ভাঙিয়ে বা বাংলাদেশি টাকা দেশ থেকে ভাঙিয়ে যত ভারতীয় টাকা তারা এনেছেন, সে সব কিছুই এই কাজে লাগছে না।
এক দিকে যেমন রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের খাওয়া-দাওয়া জুটছে না, তেমনই সমস্যা হচ্ছে রোগীদের চিকিৎসার খরচের টাকার জোগান দেওয়ার ক্ষেত্রেও। মঙ্গলবার রাত থেকেই ইএম বাইপাস লাগোয়া কোনও কোনও হাসপাতাল ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট আর নিচ্ছে না। ফলে, বুধবার যেসব রোগীর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার কথা ছিল, তাদের কয়েকজনকে এ দিন ছাড়ানো যায়নি। অথচ রোগীর আত্মীয়দের হাতে রয়েছে প্রয়োজনীয় টাকা, যা কি না অচল!
পাঁচদিন আগে খুলনা থেকে এসে এক রোগী ভর্তি ছিলেন ইএম বাইপাস লাগোয়া, মুকুন্দপুরের একটি নার্সিংহোমে। বুধবার তার ছাড়া পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রোগীর আত্মীয়দের হাতে থাকা ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট হাসপাতাল নেয়নি। ওই রোগীর এক আত্মীয়া বলেন, ‘উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ায় আমাদের কয়েকজন আত্মীয় আছেন। তাদের সহায়তায় সমস্যার সমাধান হয়েছে। ওরা এসে বৃহস্পতিবার ডেবিট কার্ডে হাসপাতালের খরচ মিটিয়ে দেবেন। পরে আমরা দেশে ফিরে গিয়ে ওদের টাকা পাঠিয়ে দেব।’
তবে কোনও কোনও হাসপাতাল বিদেশ থেকে আসা রোগীদের সাহায্য করতে হাত বাড়িয়েছে। এএমআরআইয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে আসা যে সব রোগীর এখনই ছুটি হচ্ছে, তাদের ক্ষেত্রে আমরা পুরনো ৫০০, ১০০০ টাকার নোট নিচ্ছি। তবে তাদের একটি ফর্ম পূরণ করতে হচ্ছে। যাতে ওই রোগীর বিস্তারিত বিবরণ ও নোটের নম্বর লেখা থাকছে।’
ভারত সরকারের এই আচমকা ঘোষণায় কলকাতায় মাছ ও সবজির বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরো বাজারে এদিন মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। বিক্রেতাদের একাংশ পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকা নিয়েছেন এই শর্তে যে, ক্রেতাদের ওর কাছাকাছি মূল্যের সামগ্রী কিনতে হবে। আবার কোনও কোনও ব্যবসায়ী এই সব শর্ত রাখেননি। তাদের বক্তব্য, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বৃহস্পতিবার থেকে তারা ব্যাঙ্কে জমা করতে পারবেন, কিন্তু খদ্দের ফিরিয়ে দিলে অনেকটাই লোকসান। কেউ কেউ ধারেও খদ্দেরদের মাছ-মাংস দিয়েছেন।
সাধারণ মানুষের এই ধরনের ভোগান্তির কথা তুলে ধরে বুধবারও ফের নরেন্দ্র মোদির তীব্র সমালোচনা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন চন্দননগরে মমতা বলেন, ‘আমরাও কালো টাকার বিরুদ্ধে। কিন্তু সাধারণ মানুষের এই হেনস্থা মেনে নেওয়া যায় না। বিভিন্ন জেলা থেকে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপাররা আমাকে সমস্যার কথা জানাচ্ছেন।’ -বাংলা ট্রিবিউন।
১০ নভেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম