রবিবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৬, ০৯:৪৩:৩১

সৌদি আরবে স্বপ্নের অপমৃত্যু, নিঃস্ব অবস্থায় দেশে ফিরছেন অনেক প্রবাসী

সৌদি আরবে স্বপ্নের অপমৃত্যু, নিঃস্ব অবস্থায় দেশে ফিরছেন অনেক প্রবাসী

অহিদুল ইসলাম, সৌদি আরব : অনেক স্বপ্ন নিয়ে কাজের উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়ে সৌদি আরবে এসেছিলেন তারা। মরুভূমির প্রচণ্ড গরম আর সূর্যের তীব্র তাপ উপেক্ষা করেই সম্পূর্ণ অপরিচিত পরিবেশে প্রায় অপরিচিত কাজে তাদের যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল একটু বেশি আয় রোজগার করে পরিবার পরিজনদের নিয়ে একটু স্বচ্ছল জীবন যাপন। কিন্তু, এসব বাংলাদেশি অভিবাসীদের স্বপ্নের চরম অপমৃত্যু ঘটে যাচ্ছে নীরবে। বৈধ ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে এসেও এখন চোখে শর্ষের ফুল দেখছেন অনেকেই।

দেশটির অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান হুটহাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের অনেকেই এখনে বেকার হয়ে পড়েছেন। আর কাজ না থাকা মানে অবৈধভাবে বসবাসের অভিযোগে ফেরার হয়ে যাওয়া।তাই স্বপ্নের দেশে এসে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেক বাংলাদেশি শ্রমিক, অনেকেই সর্বস্বান্ত হয়ে হাহাকার করতে করতে ফিরে যাচ্ছেন দেশে।

সর্বশেষ, গত ১৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে গেছেন আরও ৩০ বাংলাদেশি শ্রমিক। এনিয়ে এ বছর কয়েকশ’ শ্রমিক এভাবেই নিঃস্ব অবস্থায় দেশে ফিরতে বাধ্য হলেন।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় সৌদি এয়ারলাইন্সের এসভি-৮০৪ ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তারা। সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানিয়েছে, এসব শ্রমিক সৌদি আরবের দাম্মাম প্রদেশের আল-সাদ গ্রুপে কাজ করছিলেন। এই কোম্পানি থেকে এর আগেও প্রায় ২৫ জন শ্রমিক দেশে ফেরত গেছে।

রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রমউইং) মো. মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, এক দাফতরিক চিঠিতে দেশে সৌদি আরব থেকে এসব কর্মীর ফেরত যাওয়ার বিষয়টি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া তাদের জন্য শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার জন্য ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডকে অনুরোধ করা হয়েছে।

জানা গেছে, দাম্মাম প্রদেশের আল-সা’দ গ্রুপে অন্তত ১৭০ জন বাংলাদেশি কাজ করতেন। গ্রুপের অব্যবস্থাপনা ও বিভিন্ন সমস্যার কারণে এদের বেশিরভাগ চাকরিচ্যুত হন। অনেকে কাজ করেও বেতন পাচ্ছেন না। এর ফলে অন্তত ৬৩ জন চূড়ান্তভাবে দেশে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এর ধারাবাহিকতায় সৌদি শ্রমমন্ত্রণালয় থেকে তাদের ধাপে ধাপে চূড়ান্ত বহির্গমন ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে। এর আগে দুই ধাপে ২৫ জন বাংলাদেশি শ্রমিক চূড়ান্ত বহির্গমন ছাড়পত্র নিয়ে দেশে ফেরত গেছেন।

বিদায়ীদের সঙ্গে দূতাবাসের শ্রম-কাউন্সিলয় সরোয়ার আলম ও শ্রমউইংয়ের প্রথম সচিব মিজানুর রহমান

প্রসঙ্গত, সৌদি আরবের অনেক কোম্পানিতে বছরখানেক ধরে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেওয়ায় উৎপাদন বন্ধ শুরু হয়। এ কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে। কোনও কোনও প্রতিষ্ঠানে মাসের পর মাস কাজ করার পরও শ্রমিকরা বেতন পাচ্ছেন না। এসব কোম্পানির অনেকগুলি নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করেছে। এ ছাড়া কাজ না থাকা কোম্পানি মালিকদের সঙ্গে বনিবনা না থাকায় প্রায়ই অবৈধ হচ্ছেন অনেক শ্রমিক। ফলে এসব অবৈধ শ্রমিক সৌদি পুলিশের অভিযানে আটক হচ্ছেন বিভিন্ন স্থান থেকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সৌদি আরবে আসা অবৈধ শ্রমিকদের মধ্যে ভারতীয় ও পাকিস্তানিদের চেয়ে বাংলাদেশিদের সংখ্যা বেশি। এদের অনেকের কাছে দেশে ফেরত যাওয়ার জন্য বিমানের টিকিট কেনার টাকাও নেই। এ কারণে, অনেকেই সৌদি পুলিশের কাছে স্বেচ্ছায় ধরা দিচ্ছেন দেশে যাওয়ার জন্য।

দূতাবাস সূত্র জানিয়েছে, সৌদি আইনে বড় ধরনের অভিযোগ কিংবা মামলা নাই এমন অবৈধ শ্রমিকদের দূতাবাসের বিশেষ সহযোগিতায় দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। দূতাবাসের অনুমোদন সাপেক্ষে আইনগত প্রক্রিয়ায় এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে সৌদি খরচে এরা দেশে যেতে পারছেন।

এদিকে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম-কাউন্সিলর সরোয়ার আলম জানিয়েছেন, ফেরত যাওয়া শ্রমিকদের মধ্যে যারা একেবারেই নিঃস্ব, দেশে ফেরত যাওয়ার পর তাদের পুনর্বাসন করার জন্য প্রবাসীকল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। -বাংলা ট্রিবিউন।
২০ নভেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে