প্রবাস ডেস্ক: লিবিয়ায় কাজের উদ্দেশ্যে যাওয়া বাংলাদেশীদের সেখানে জিম্মি রেখে, বাংলাদেশে তাদের পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের বিশেষ বাহিনী র্যাব।
কর্মকর্তারা বলছেন, লিবিয়া, সিরিয়া, সুদান ও মালয়েশিয়াতে এ ধরনের চক্র গড়ে উঠেছে। সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশীরা স্থানীয়দের সাথে মিলে এ ধরনের জিম্মি কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে র্যাব। ২০১২ সালে লিবিয়ায় কাজের জন্য গিয়েছিলেন চাঁদপুরের ফয়েজ উল্লাহ।
সেখানে বৈধভাবে কাজও করেছেন অনেকদিন। কিন্তু সেখানে রাজনৈতিক সংকটের কারণে কাজ হারান। তারপরে নিজের দেশের লোকেরাই সেখানে তাকে জিম্মি করে বাংলাদেশে আত্মীয়দের কাছ থেকে টাকা আদায় করে।
র্যাব এর একজন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার গোলাম সারোয়ার জানিয়েছেন, গত কয়েকদিনে দুটি অভিযানে এরকম চক্রের সাথে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলছেন, "মূলত লিবিয়ায় বাংলাদেশী দূতাবাসের কাছ থেকে আমরা তথ্য পাই যে সেখানে বাংলাদেশী ও বিদেশি কিছু লোকের সমন্বয়ে গঠিত একটি চক্র বাংলাদেশীদের অপহরণ করে বাংলাদেশে তাদের নিকটাত্মীয়দের কাছ থেকে মুক্তিপণের টাকা আদায় করছে।"
এসব লোককে তারা নির্যাতন করছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তিনি জানান, বাংলাদেশে অবস্থিত চক্রের কাছে বিদেশে জিম্মি হওয়া ব্যক্তিদের পরিবার 'বিকাশে'র মাধ্যমে অর্থ দিতে বাধ্য হয়। অপহৃত দু'জন ব্যক্তির পরিবারও র্যাবের কাছে অভিযোগ নিয়ে আসে।
মি. সারোয়ার বলছেন, তিন মাস আগে অপহৃত হয়েছিলেন ফয়েজ উল্লাহ। দেশে থাকা তার পরিবারের কাছ থেকে এক লাখের বেশি টাকা আদায় করেছে অপহরণকারীরা। মন্টু আলী নামে নাটোরের নলডাঙার এক বাসিন্দাও লিবিয়ায় অপহরণের শিকার হয়েছেন। তার পরিবার দেশে ঐ চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করলে একজনকে আটক করা হয়। তখন লিবিয়াতে মন্টু আলীকে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়া হয়েছে।
মি সারোয়ার বলছেন, সিরিয়া ও সুদানেও বাংলাদেশীদের এমন চক্র গড়ে উঠেছে। তবে বিশেষ করে লিবিয়ার চক্রটি বেশি সক্রিয় বলে তারা জানতে পেরেছেন। তিনি বলছেন, "লিবিয়া, সুদান ও সিরিয়াতে এখন আমাদের কর্মী প্রেরণের অনুমোদন নাই। বিশেষ করে লিবিয়াতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল নয় বলে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেভাবে নিয়মিত কাজও করছে না। এর সুযোগটাই নিচ্ছে এসব চক্র।"
"দেখা যাচ্ছে লিবিয়াতে বাংলাদেশীরা যারা অনেক আগে গিয়েছেন এবং রাজনৈতিক সংকটের মাঝেও সেখানে রয়ে গেছেন, তারা অসাধু কিছু লোকের সাথে মিলে এসব কাজ করছে," বলেন তিনি। বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়াতে যাওয়ার পর একই ধরনের কিছু ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছেন র্যাবের কর্মকর্তা।
মালয়েশিয়াতে প্রবাসীদের পত্রিকা প্রবাসী কণ্ঠের সম্পাদক গৌতম রায় বলছেন, এরকম ঘটনা তারা মাঝে মাঝেই শুনছেন। তিনি বলছেন, গত মে মাসেই মালয়েশিয়াতে ন'জন বাংলাদেশীকে উদ্ধার করে দেশটির পুলিশ। তাদের জিম্মি করার ঘটনায় সন্দেহভাজন তিনজন বাংলাদেশীকে আটকও করা হয়। তবে সেখানে স্থানীয়দের চক্রই বেশি সক্রিয় বলে জানা গেছে।-বিবিসি
২৮ নভেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ