প্রবাস ডেস্ক : এক বাংলাদেশির বিশ্বজয়! কানাডায় আইন পরিষদের সদস্য পদে এবারই প্রথম প্রার্থী হয়েছেন কোনো বাংলাদেশি। তিনি খালিছ আহমেদ। যুক্ত হয়েছেন মূলধারার রাজনৈতিক দল এনডিপির (নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি) সঙ্গে। কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হার্পারের ছেড়ে দেওয়া ক্যালগেরি হেরিটেজ আসনে দলটির প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন তিনি। জানাচ্ছেন সাইমুম সাদ
খালিছ আহমেদের জন্ম, বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা—সবই বাংলাদেশে। স্নাতকোত্তর করেছেন জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। জ্বালানি নিয়ে পড়াশোনা শেষ করার পর ভাবলেন, ভূতত্ত্ববিদ হিসেবে উত্তর আমেরিকার দেশগুলোতে ভালো কাজের সুযোগ আছে। সেই ভাবনায় ২০০৪ সালের দিকে ইমিগ্রেশন নিয়ে পাড়ি জমান কানাডায়। আজ অবধি কানাডাতেই আছেন। যুক্ত আছেন একটি কনসাল্ট্যান্সি ফার্মের সঙ্গে।
দেশে থাকাকালে কোনো দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। বলা চলে রাজনীতিটা তাঁর ভাবনার ত্রিসীমানায়ও ছিল না। বললেন, ‘আমি সামাজিক মানুষ। সমাজ নিয়েই আমাদের বসবাস। মতপ্রকাশে কখনোই দ্বিধা করিনি। তবে রাজনীতিটা কখনো করা হয়ে ওঠেনি। দেশে থাকতে আমার ঝোঁক ছিল গান শোনা, বই পড়া, হেঁটে বেড়ানো আর মানুষ দেখায়। ’ তাহলে কিভাবে এলেন? ‘কানাডার মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর প্ল্যাটফর্ম পর্যালোচনা করে বুঝলাম রাজনীতির মধ্য দিয়েই মানুষের জন্য সত্যিকারের কিছু করার সুযোগ আছে। নিজেকে রাজনীতিতে নিয়োজিত করলাম। সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক থেকে হয়ে উঠলাম রাজনৈতিক। বলা চলে সামাজিক কাজকর্ম, সমস্যা নিয়ে ভাবনা আর সমস্যা থেকে উত্তরণ আমাকে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করেছে। ’
কানাডার প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল এনডিপির হয়ে ক্যালগেরি হেরিটেজ আসনে আইন পরিষদের সদস্যপদ পেতে লড়ছেন তিনি। কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হার্পার হাউস অব কমন্স থেকে পদত্যাগ করলে আসনটি খালি হয়ে যায়। আগামী বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ আসনে নতুন নির্বাচন হবে। সেই আসনেই এনডিপি থেকে মনোনীত হয়েছেন খালিছ। জানা গেছে, ১৯৬১ সালে কো-অপারেটিভ কমনওয়েলথ ফেডারেশন আর কানাডিয়ান লেবার কংগ্রেসের সমন্বয়ে গঠিত হয় এনডিপি। এটি কানাডার তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। নাগরিক জীবনে স্বাস্থ্যসেবা, পেনশন ব্যবস্থা—এগুলো নিয়ে কাজ করছে দলটি। খালিছ আহমেদ আরো বললেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার, শান্তি ও পরিবেশ সুরক্ষা নিয়েও কাজ করি। ’
মানবতার কল্যাণে কাজ করতে চান খালিছ। যেমনটি বললেন, ‘ আমি পৃথিবীর কোনো শিশু যেন না খেয়ে না থাকে। তাদের জন্য এমন একটি পৃথিবী কল্পনা করি, যেখানে সবাই নিজের মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ করবে। কোনো হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না। এ কাজটাই আমরা ধারাবাহিকভাবে করে যেতে চাই। ’ সঙ্গে আরো যোগ করলেন, ‘কানাডা বিশ্বের কাছে একটি শান্তিকামী ও দাতা দেশ হিসেবে পরিচিত। আমাদের দায়িত্বও বেশি। যেমন জলবায়ু পরিবর্তনে বিশ্বের যে বিপর্যয়—সেটাকে মোকাবিলার নেতৃত্ব দেওয়াটা জরুরি। যেটা বাংলাদেশের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। ’
বাঙালিসহ সব কমিউনিটির সঙ্গে ইতিমধ্যেই নিজেকে আলাদাভাবে পরিচিত করেছেন খালিছ। বলেন, ‘আমরা বাঙালিরা এখানে যৌথ পরিবারের মতো বাস করি। সবাই এখানে যেভাবে উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে কাজ করেন, সেটা দেখার মতো। ’ এই জীবনে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি কী? বললেন, ‘মানুষের ভালোবাসা আর সম্মান। মানুষ যখন আমার কথা আগ্রহ নিয়ে শোনে, তখন নিজেকে প্রয়োজনীয় মনে হয়। মানুষের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দিতে আরো উদ্যোগী হই। ’
কানাডায় প্রত্যেকেই নিজ নিজ পেশার পাশাপাশি রাজনীতিতে যুক্ত থাকেন। খালিছ আহমেদও ব্যতিক্রম নন। তিনি একজন ভূতত্ত্ববিদ। তেল-গ্যাস সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূতাত্ত্বিক সমস্যা সমাধানে একটি কনসাল্টিং ফার্ম আছে তাঁর। খালিছরা ছয় ভাই দুই বোন। তাঁদের পাঁচজন এখনো দেশেই আছেন। বললেন, ‘মনে হয় ১৬ কোটি মানুষ রেখে চলে এসেছি কানাডায়। সবার প্রতি আমার একটি দায়িত্ববোধ আছে বলে মনে করি। ’
৯ ডিসেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর