মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বাবু (সিঙ্গাপুর প্রবাসী): স্বাধীনতার সূর্য দেখবে বলে, যারা দীর্ঘ নয় মাস এই অবরুদ্ধ নগরীতে বেঁচেছিলন অবিক্রীত স্বাধীন চিত্তসহ ওরা ভেবেছিল তাঁদের মেরে এ দেশকে যদি মেধাশূন্য করা যায় সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যাবে এই বঙ্গ ,কিয়দাংশে হয়েছে ও তাই। আজ যদি সে সব গুনি জন বেঁচে থাকতেন হয়তো হতে পারত এক অন্য রকম বাংলাদেশ। হিংসা হানাহানি হীন নির্লোভ বাংলাদেশ। শান্তির প্রতীক হত এই লাল সবুজের পতাকা। পূর্ব পাকিস্তানকে ফিরে পাওয়ার সুপ্ত আশায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফাটল ধরাতে এ দেশীয় রাজাকার আল বদর আল সমস বাহিনীর সহযোগিতায় রায়ের বাজার বদ্ধ ভূমিতে চালায় ইতিহাসের নির্মম হত্যা যজ্ঞ । এক রকম সুদূরপ্রসারী লক্ষ নিয়ে ওরা বুদ্ধিজীবীহত্যার ঘটনা ঘটায়, বুদ্ধিজীবী নিধনের যজ্ঞ, যার নাম ‘অপারেশন ডার্কনেস’’একাত্তরের ২৫ মার্চের মধ্য রাতে ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার নরখাদকরা শুরু করেছিল তাদের দেশরক্ষার অভিযান,‘অপারেশন ডার্কনেস’ দিয়ে তারা ইতি টানে দেশ ধ্বংসের খেলায়।
১৪ ডিসেম্বর একটি শোকাতুর বেদনাময় দিন। বাংলাদেশকে মেধা মননে পঙ্গু করার হীন উদ্দেশ্যে স্বাধীনতার ঊষালগ্নে এ দিনে হানাদার বাহিনীর দোসররা দেশের প্রথিতযশা শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক বিজ্ঞানীসহ বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীদের নৃশংসভাবে হত্যা করেছিলো। বুদ্ধিজীবীগণ দেশের বরেণ্য শ্রেষ্ঠ সন্তান। শহীদ বুদ্ধিজীবীগণ আমাদের প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করে যাবেন।১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর অকালে যাদের প্রাণ কেড়ে নেয়া হয় তারাদের মধ্যে এই বঙ্গের কৃতি সন্তান অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. আলীম চৌধুরী, ড. জিসি দেব, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক সেলিনা পারভীন, ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, রাশেদুল হাসান, ড. আনোয়ার পাশা, সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লাহ কায়সার, নিজামুদ্দীন আহমেদ, গিয়াসউদ্দিন আহমদ, অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. গোলাম মোর্তজা, ড. মোহাম্মদ শফি, আলতাফ মাহমুদ, নতুন চন্দ্র সিংহ, আরপি সাহা, আবুল খায়ের, কবি মেহেরুন্নসার মত বুদ্ধিজীবী।দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধচলাকালে এসব বুদ্ধিজীবী মেধা, মনন ও লেখনীর মাধ্যমে স্বাধীনতাকামী মানুষকে সাহস ও পথ যুগিয়েছিলেন। মায়ের সম্ভ্রম বাঁচাতে এ অবদানই ছিলো তাদের অপরাধ। ‘বাংলাপিডিয়া’য় তথ্য অনুযায়ী, একাত্তরের ২৫ মার্চ হইতে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ৯৯১ জন শিক্ষাবিদ, ১৩ জন সাংবাদিক, ৪৯ জন চিকিৎসক, ৪২ জন আইনজীবী এবং ১৬ জন শিল্পী-সাহিত্যিককে হত্যা করা হইয়াছিল।বাংলার এই দুর্দিনে তারা বেঁচে থাকলে তাদের আদর্শে সৃষ্টি হতো নতুন নেতৃত্ব .কালিগঞ্জ সরকারী আর আর এন পাইলট স্কুলে যখন সপ্তম শ্রেণীতে পড়তাম আমার বাংলা শিক্ষক মরহুম আব্দুর রাজ্জাক বলেছিলেন, কোন জাতিকে ধ্বংস করতে হলে তার শিক্ষা ব্যবস্থা নষ্ট করো, তাদের মেধা শূন্য করো ,পাকিস্তান করেছিলো তাই ৬৮, ৬৯ সালের দিকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পাকিস্তানি বা পাকিস্তানপন্থী শিক্ষক গণ বলতেন" কিতাব খুলকে লিখো "সেই থেকে শুরু নকল করে পরীক্ষা দেওয়ার .ওদের কুলষিত মন ছিলো ভারত পাকিস্তান বিভাগের পর থেকেই .যুদ্ধে পরাজিত হবার শেষ মুহুর্তের মরন কামড় ছিলো এই বুদ্ধিজীবিদের হত্যা।যারা এ দেশ কে ভালবাসবে মাতৃ ভূমিকে ভালবাসবে তারা দেশ বরেণ্য বুদ্ধিজীবিদের শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করবে চিরকাল।
১৪ ডিসেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস