তানভীর আহমেদ, লন্ডন : তিন বছর পর ভুল চিকিৎসা ও দায়িত্বে অবহেলার কথা স্বীকার করলো রয়্যাল লন্ডন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালটির ভুল চিকিৎসার কারণে ২০১৩ সালে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তৌহিদুল করিম সুহৃদ ও নারগিস ফারজানা ন্যান্সি দম্পত্তির ২০ মাস বয়সী সন্তানের মৃত্যু হয়। তিন বছরের আইনি লড়াইয়ের পর বিষয়টি প্রমাণ হয়েছে। দোষা স্বীকার ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটিকে ৩৫ হাজার পাউন্ড ক্ষতিপূরণ দেবে ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস ট্রাস্ট (এনএইচএস)।
লন্ডন প্রবাসী সুহৃদ-ন্যান্সি দম্পতি বলেন, ২০১২ সালে ১২ মার্চ লন্ডনের কুইন্স হাসপাতালে তাদের সন্তান তাহমিদ তাওসিফের জন্ম। তাদের সন্তান শর্ট ট্রমা ভাওয়েল বা ছোট পাকস্থলী নিয়ে জন্ম নেয়। সাধারণত জন্মের সময় একটি শিশুর পাকিস্থলীর আয়তন থাকে ১০০ সেন্টিমিন্টার। কিন্তু তাহমিদের পাকস্থলী ছিল ২৭ সেন্টিমিটার। জন্মের পরপরই শিশুটির পাকস্থলীতে অপারেশনের প্রয়োজন হলে তাকে রয়্যাল লন্ডন হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ২০ মাস পর্যন্ত রয়্যাল লন্ডন হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোনমি বিভাগে চিকিৎসাধীন ছিল তাহমিদ। তার পাকস্থলী স্বাভাবিক করতে ৯টি অপারেশন করা হয়। সর্বশেষ ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর শেষ অপারেশনটি করা হয়। অপারেশনের পর শিশুটির ক্ষতস্থানে থ্রি এম পলিফিল্ম টেপ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল। অপারেশন ঠিক মতো না হওয়ায় ক্ষতস্থান দিয়ে ফ্লুয়িড গড়িয়ে পাকস্থলীর ভেতরে ইনফেকশন হয়। শিশুটির বাবা-মা তাৎক্ষণিকভাবে ডাক্তারের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও ডাক্তারের সাক্ষাত পাননি। শিশুটির অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে। পরেরদিন ১০ শিশুটি মারা যায়।
তাহমিদ মৃত্যুর পর ডাক্তাররা সুহৃদ-ন্যান্সিকে এই বলে সান্ত্বনা দেন যে, জন্মের সময় দুর্বল থাকায় সে মারা গেছে। তবে এমন যুক্তি মানতে না পেরে তদন্তের দাবি করে শিুশুটির পরিবার।
ক্লিনিক্যাল কোয়ালিটি কন্ট্রোল বিভাগে অভিযোগ করলে কোন প্রতিকার পাননি এই দম্পতি। বারবার অভিযোগের ফলাফল জানতে চাইলেও তারা এ বিষয়ে কথা বলে ২০১৪ সালের এপ্রিলে। ৮ মাস পর ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে রয়্যাল লন্ডন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার অবহেলার কথা স্বীকার করলেও ভুল চিকিৎসার বিষয়টি এড়িয়ে যায়। এরপর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেন সুহৃদ দম্পতি। ২০১৫ সালে দ্বিতীয় দফা তদন্তের পর এনএইচএস চিকিৎসায় কোনও ধরনের অবহেলা ছিল না বলে রিপোর্ট প্রকাশ করলে ব্যক্তিগত আইনজীবীর মাধ্যমে তৃতীয় দফা তদন্তের পর ডিসেম্বরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলা ও ভুল চিকিসার বিষয়টি প্রমাণিত হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়। চলতি বছরে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে সুহৃদের আইনজীবী গণমাধ্যম বিষয়টি জানান।
সুহৃদ বলেন, ‘আমার সন্তানের চিকিৎসার সময়ে দেখেছি অনেক বাঙালি পরিবারের শিশু এনএইচএসের গাফিলতি আর ভুল চিকিৎসার কারণে মারা যাচ্ছে। কিন্তু কোনও বাবা-মাকে সাহস করে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে দেখিনি আমি। এ কারণেই আমি এনএইচএসের ভুল চিকিৎসার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তাদের ভুল স্বীকার করতে বাধ্য করি।’
সুহৃদ-ন্যান্সি দম্পতি মনে করেন, হারানো সন্তান আর কোনোদিন ফিরবে না। তবে এই আইনি লড়াইয়ে আজ যে সত্য উম্মোচিত হলো তাতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশিরা ভুল চিকিৎসার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সাহস পাবে। -বাংলা ট্রিবিউন।
২১ জানুয়ারী, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম