বুধবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৫, ০৬:১৬:৩৬

বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা হলেন চট্টগ্রামের সুবীর চৌধুরী

বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা হলেন চট্টগ্রামের সুবীর চৌধুরী

প্রবাস ডেস্ক : সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় পরামর্শদাতা হিসেবে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত লেখক এবং কনসালট্যান্ট বাংলাদেশি-আমেরিকান সুবীর চৌধুরী। বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট ড. জিম কিসের ৫ সদস্যের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য হলেন তিনি। চলতি অক্টোবর থেকে এটি কার্যকর হয়েছে। এ কাউন্সিল কাজ করবে বিশ্বব্যাংকের এক্সিকিউটিভ লিডারশিপ টিমের উপদেষ্টা হিসেবে। বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টের লিডারশিপ কাউন্সিলের উপদেষ্টা মণ্ডলীর অপর সদস্যরা হলেন মার্শাল গোল্ডস্মিথ, মার্ক থমসন, রিটা ম্যাকগ্রেইন এবং মায়া হু চেন। উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের সন্তান সুবীর চৌধুরী প্রথম বাংলাদেশি যিনি এ দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হলেন। মৃদুভাষী সুবীর চৌধুরী মঙ্গলবার রাতে গণমাধ্যমকে বলেন, শেকড়ের প্রতি সবারই টান থাকে। আমি তার ব্যতিক্রম নই। তবে বাংলাদেশ এখন যারা চালাচ্ছেন বা নীতি-নির্ধারক হিসেবে রয়েছেন তাদের উদারচিত্তে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, প্রথা অনুযায়ী বাংলাদেশ যতটা সম্ভব সহায়তা পাচ্ছে। তবে বাংলাদেশ নিয়ে অনেক বেশি আগ্রহ আমার মধ্যে কাজ করে। নিজের দেশকে উন্নয়ন দিতে সামান্যতম কার্পণ্য থাকবে না। নিজের সামর্থ্য যা রয়েছে তার চেয়ে বেশি দেয়ার চেষ্টা রয়েছে। সুবীর চৌধুরী বলেন, বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বকে চরম দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করা। দৈনিক গড়ে ১.২৫ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থের কম আয়কারী লোকদের চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বাসবাসকারী বলে অভিহিত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বিশ্বকে দারিদ্র্যমুক্তির চলমান কার্যক্রমের অংশ হতে পেরে সম্মানবোধ করছি। বিশ্বব্যাংকের এ লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে যেকোনো একটি প্রকল্পে সম্পৃক্ত হতে পারলেই আমি গৌরববোধ করবো। বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে জীবন-যাপন করছে। আশা করছি, বিশ্ববাংকের এ লক্ষ্য অর্জনের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশেও চরম দারিদ্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা একেবারেই শূন্যে নেমে আসবে। মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে আমার অবস্থান থেকে সাধ্যমত সহায়তা করে যাব বলে জানান সুবীর চৌধুরী। চট্টগ্রামের সন্তান সুবীর চৌধুরীর মিলিয়ন ডলার অনুদানে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার বিশ্বখ্যাত বার্কলে ক্যাম্পাসে এ বছরের মার্চে চালু হয়েছে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিসহ বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নে গবেষণার জন্য ‘সুবীর অ্যান্ড মলিনী চৌধুরী সেন্টার ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ। ৪৮ বছর বয়সী সুবীর চৌধুরীর ১৪টি বই প্রকাশিত হয়েছে কোয়ালিটি ও ম্যানেজমেন্টের ওপর। সবক’টি সমাদৃত হয়েছে সর্বমহলে এবং নিউইয়র্ক টাইমস তাকে ‘দ্য লিডিং কোয়ালিটি এক্সপার্ট’ এবং বিজনেস উইক ‘দ্য কোয়ালিটি প্রফেট’ হিসেবে অভিহিত করেছে। সামনের জানুয়ারিতে তার আরেকটি গবেষণামূলক বই ‘রোবাস্ট অপ্টিমাইজেশন’ প্রকাশিত হবে। ষোড়শ’ গ্রন্থ ‘কোয়ালিটি ফর হিউম্যান মাইন্ডসেট’ নিয়ে কাজ করছেন তিনি। ভারতের খড়গপুরে ইন্ডিয়ান টেকনোলজি অব ইন্সটিটিউট থেকে এ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আন্ডার গ্র্যাজুয়েশনের পর সেন্ট্রাল মিশিগান ইউনিভার্সিটি থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যানেজমেন্টে গ্র্যাজুয়েশন করেন সুবীর চৌধুরী। ১৯৯১ সালে উচ্চতর শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আসেন তিনি। ২০০৪ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সিটিজেন হিসেবে শপথ গ্রহণের পর মিশিগানের ব্লুমফিল্ড হিলসে বসতি গড়েছিলেন। এএসআই কন্সাল্টিং গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সুবীর চৌধুরী। শিক্ষা শেষে কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৯৩ সালে মিশিগানে জেনারেল মটর্স কোম্পানির ডেলফি ডিভিশনে কোয়ালিটি অ্যান্ড সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। ১৯৯৮ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনি আমেরিকান সাপ্লাইয়ার ইন্সটিটিউটের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তাদের ট্রেনিং প্রদানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে বিশ্বখ্যাত ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত লেখক কেন জিমারের সঙ্গে ‘কিউএস-৯০০০ পাইয়োনিয়ার’ বই লিখে কল-করখানায় সর্বোৎকৃষ্ট পণ্য উৎপাদনমূলক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন তিনি। সেই থেকে শুরু সুবীর চৌধুরীর ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত সুপরামর্শক জীবনের। এরপর আর থেমে থাকেননি তিনি। বিশ্বখ্যাত কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনায় গতি আনতে সুবীর চৌধুরীকে অর্থের বিনিময়ে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। সুবীর চৌধুরী বেশ কয়েক বছর ধরে স্ত্রী মলিনী চৌধুরী, কন্যা আনন্দি এবং এক পুত্র নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাস করছেন। ২৮ অক্টোবর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে