মঙ্গলবার, ২৭ জুন, ২০১৭, ০৬:২০:০৮

আল্লাহর সাথে বাবার তুলনা করে মীর কোনও দোষ করেনি : তসলিমা

আল্লাহর সাথে বাবার তুলনা করে মীর কোনও দোষ করেনি : তসলিমা

প্রবাস ডেস্ক : বাবাকে আল্লাহর সঙ্গে তুলনা করে জনপ্রিয় সঞ্চালক ও অভিনেতা মীর আফসার আলী (মীর) কোনও দোষ করেননি। সোশ্যাল মিডিয়ায় হেনস্তার মুখে পড়ার পর এবার মীরের পাশে এসে দাঁড়ালেন প্রখ্যাত লেখিকা তসলিমা নাসরিন।

ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার ঈদের দিন। টিপু সুলতান মসজিদে ঈদের নমাজের পর বাবার সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করেন মীর। সেখানে ক্যাপশনে তিনি লেখেন, তার বাবাই তার আল্লাহ। ছবি পোস্ট করার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় বিতর্ক। কেন একজন ব্যক্তিকে আল্লাহর সঙ্গে তুলনা করা হল তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন কিছু ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা।

ক্রমশ তা শালীনতার সীমা ছড়ায়। রীতিমতো হেনস্তার মুখে পড়তে হয় মীরাক্কেলের সঞ্চালককে। এর আগেও নেটদুনিয়ায় এরকম আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছিল মীরকে। সে ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ার পরই নিজের পোস্টে মন্তব্য দেওয়ার অধিকার নিয়ন্ত্রিত করতে চলেছেন শিল্পী। তবে এই বিতর্কে সোশ্যাল মিডিয়ায় অসংখ্য মানুষের পাশাপাশি এবার তিনি সঙ্গে পেলেন তসলিমাকেও।

এই ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে সোশ্যাল মিডিয়ায় তসলিমা লেখেন, তিনি একটি কবিতা লিখেছিলেন। যে কবিতা ছাপা হওয়ার পর মৌলবাদীদের আক্রমণের মুখে পড়েন তিনি। নিষিদ্ধ হয় গোটা পত্রিকাটিই। কিন্তু কেন যে পত্রিকা বন্ধ হল তা ভেবে পাননি লেখিকা। অনেক ভেবে দেখেন, সে কবিতায় আল্লাহকে ব্যক্তির সঙ্গে তুলনা করার জন্যই তাকে রোষের মুখে পড়তে হয়।

এ কথা জানিয়েই তিনি লেখেন, মীর আসলে কোনও দোষ করেননি। তিনি আল্লাহকে নামটিকে কাউকে ঘৃণা করে বা অবজ্ঞা-অপমান করে ব্যবহার করেননি। বরং লেখিকা জানান, অনেকেই আল্লাহ-হু-আকবর বলে মানুষ খুন করছে। এখন এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে কেউ আল্লাহ-হু-আকবর শুনলেই উল্টো দিকে দৌঁড়াচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে কেউ যদি নিজের বাবাকে আল্লাহর সঙ্গে তুলনা করেন, তবে তিনি যে কোনও ভুল করেননি এমনটাই জানালেন লেখিকা।

নিন্মে লেখিকা ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো:

'আমার মায়ের গল্প'' নামে আমার একটি কবিতা অনেক বছর আগে দেশ পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। একদিন শুনি দেশ'এর ওই সংখ্যাটি আমার কবিতার কারণে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হয়েছে। কবিতায় কী এমন ছিল যে নিষিদ্ধ হলো গোটা পত্রিকা -- বুঝে পেলাম না। পরে শুনলাম ওই কবিতায় আমি আসমান জমিনের মালিক স্বয়ং আল্লাহতায়ালাকে ব্যক্তি হিসেবে উপস্থাপন করেছি, সেটিই সরকারকে রাগিয়েছে।

কবিতাটিতে ছিল ক্যান্সারে আমার মা মারা যাচ্ছেন সেই দৃশ্যের বর্ণনা, এবং পরকালে তিনি বেহেস্তে যাচ্ছেন সেটির কল্পনা। ওই কল্পনার মধ্যে ছিল মা বেহেস্তের বাগানে হাঁটছেন, এমন সময় আল্লাহ তায়ালা মা'কে স্বাগত জানাতে এলেন, মা'র খোঁপায় গুঁজে দিলেন লাল একটি গোলাপ। দেশ নিষিদ্ধ হওয়ায় পত্রিকার প্রকাশক এবং সম্পাদক গোষ্ঠী ভীষণ বিপদে পড়ে গেলেন।

এর কিছুকাল পর দেশ' এর একটি সংখ্যা আমার ওপর করেছিলেন ওরা, প্রচ্ছদ জুড়ে ছিল আমার ছবি, ভেতরে আমার লেখা, আমাকে নিয়ে কয়েকজন মনীষীর লেখা। ওই সংখ্যাটি শুধু পশ্চিমবঙ্গের জন্য ছাপা হয়েছিল। অন্য লেখা টেখা ভরে, যেখানে আমার বিন্দুমাত্র কিছু নেই, একই তারিখে ভিন্ন এক দেশ ছাপা হয়েছিল বাংলাদেশে বিক্রি হওয়ার জন্য।

মীরাক্কেলের মীর তার বাবাকে আল্লাহ বলে ডেকেছেন -- এই নিয়ে তুলকালাম কান্ড হচ্ছে দেখে মনে পড়লো আমার সেই কবিতার কথা। কবিতা নিষিদ্ধ হওয়ার সময় আমি বাংলাদেশে থাকলে হয়ত কুপিয়ে আমাকে দু 'টুকরো করতো বাংলার বীর মুসলমানেরা। মাথায় টুপি পরে মীর কাল ঈদের নামাজ পড়েছেন, তারপরও তাকে রেহাই দেওয়া হয়নি।

মীর লিখেছিলেন 'আমার আব্বা... আমার আল্লাহ ঈদ মোবারক'। বাবাকে তিনি আল্লাহর সঙ্গে তুলনা করেছেন। যে আল্লাহকে তিনি কোনওদিন দেখেন নি, যাঁর কণ্ঠস্বর শোনেন নি, যাঁকে কোনওদিন স্পর্শ করেন নি, যার গন্ধও কোনওদিন পাননি । শত সহস্র লোক বিশ্বাস করে আল্লাহ উদার, মহান, সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞানী।

মীর নিশ্চয়ই তার বাবাকেও তাই মনে করেন। উদার, মহান, ইত্যাদি। আসলে আল্লাহ একটি প্রতীকের মতো। সর্বশক্তিমানের প্রতীক। যেহেতু আল্লাহর অস্তিত্ব নিয়ে এখনও সংশয় আছে, অর্থাৎ এখনও তার অস্তিত্বের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি, প্রতীক হিসেবে তার নামখানা ব্যবহার করা যেতেই পারে।

বাউল-ফকিরেরা, সুফি গায়কেরা অনেক সময় আল্লাহকে অতি ভালোবেসে যা ইচ্ছে তাই বলে ডাকেন। আল্লাহর নাম জিহাদি সন্ত্রাসীরাও নেয়। 'আল্লাহু আকবর' বলে চাপাতি চালিয়ে নিরীহ মানুষকে খুন করে। কোথাও 'আল্লাহু আকবর' চিৎকার শুনলে মানুষ আজকাল ভয়ে উল্টোদিকে দৌঁড়ায়।

মীর কোনও দোষ করেন নি। তিনি আল্লাহ নামটিকে কাউকে ঘৃণা করে, কাউকে অবজ্ঞা-অপমান করে, ব্যবহার করেন নি। মীর তার বাবাকে অতি ভালোবেসে 'আল্লাহ' বলেছেন। ভালোবাসা অপরাধ হলে মীর অপরাধী।
জুন, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে