সোমবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৭, ০৫:০৪:৪৫

ধর্ম মানুষকে শুদ্ধ করে না : তসলিমা নাসরিন

ধর্ম মানুষকে শুদ্ধ করে না : তসলিমা নাসরিন

তসলিমা নাসরিন : বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের একাংশ দিন দিন চরম হিন্দু-বিদ্বেষী হয়ে উঠছে। তারা অমুসলিমদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়ে একশ ভাগ মুসলমানের দেশ বানাতে চায় বাংলাদেশকে।

অনেকে বিশ্বাস করে অমুসলমান বা বিধর্মীদের নির্যাতন করলে বেহেস্ত নসীব হবে। সন্ত্রাসীরাও তো বিশ্বাস করে, কাফেরদের কুপিয়ে মারতে পারলে সওয়াব ভালো জোটে, শর্টকাটে বেহেস্তে চলে যাওয়া যায়। পুলসিরাত ইত্যাদি পার হতে হয়না, কবরের আজাবও সইতে হয় না।

হিন্দুদের ফাঁসানোর জন্য দাউদকান্দির কিছু মুসলমান এ বছরের মার্চ মাসে এমনই মরিয়া হয়ে উঠেছিল যে ১৬টি কোরানের ওপর বিষ্ঠা ছিটিয়ে গিয়েছিল। ভালো যে হিন্দুদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার আগে জানাজানি হয়ে গিয়েছিল যে কাজটি কোনও হিন্দুর নয়, হাবিবুর রহমান নামের এক মুসললমানের।

আমি জানিনা হাবিবুর রহমান বা তাকে দিয়ে যারা এ কাজটি করিয়েছিল, তাদের আদৌ কোনও শাস্তি হয়েছিল কি না। আমি আজও অবাক হই সেই হেফাজতি গুন্ডাদের বিরুদ্ধে ধর্মপ্রাণ মুসলমানের কেন কোনও ক্ষোভ দেখিনি, যারা বায়তুল মোকাররমের আশেপাশের দোকানের শত শত কোরান পুড়িয়ে দিয়েছিল !

মাঝে মাঝে ভাবি বাংলাদেশ সম্পূর্ণ বিধর্মীমুক্ত হয়ে গেলে কি মুসলমানদের কোনও লাভ হবে? বাংলাদেশ কি সৌদি আরবের মতো পবিত্র স্থান হয়ে উঠতে চাইছে! সৌদি আরবে গোপনে গোপনে কী হয়, সেদিন এক সৌদি রাজপুত্রের সাবেক স্ত্রী ফাঁস করলেন, দেদার মেয়ে বিক্রি হয়, দুর্নীতি, মদ্যপান, উলঙ্গ নৃত্য, আর ব্যাভিচারে বুঁদ হয়ে থাকে সৌদি রাজা এবং রাজপুত্রেরা। ধর্ম মানুষকে শুদ্ধ করে না। মানুষকে শুদ্ধ করে সুশিক্ষা, সচেতনতা, সহিষ্ণুতা, সহমর্মিতা।

অসহায় রোহিঙ্গাদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে বাংলাদেশের মানুষ। মিয়ানমার সেনা যেভাবে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাড়িঘর পুড়িয়েছিল, তা দেখে কেঁদে বুক ভাসিয়েছে বাংলাদেশের মুসলমান। কিন্তু নিজের দেশেই যখন ঘটনাগুলো তারা নিজেরাই ঘটায়?

যখন দেশের মানুষের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয় শুধু তাদের ধর্মটা ভিন্ন বলে? মিয়ানমার সেনাদের যে অপরাধ দেখে বাংলাদেশের মুসলমানেরা কেঁদেছিল, সেই একই অপরাধ তারা নিজেরাই করে তাদের নিজের দেশে। কী পার্থক্য তবে তাদের সঙ্গে বর্বর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর? আমি তো কোনও পার্থক্য দেখি না।
-নির্বাসিত লেখিকার ফেসবুক থেকে।
এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে