মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৮:২১:০৪

সৌদি সরকারের এ কেমন আইন প্রবাসীদের উপর!

সৌদি সরকারের এ কেমন আইন প্রবাসীদের উপর!

প্রবাস ডেস্ক: বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি প্রবাসীর বসবাস সৌদি আরবে। এ দেশে বেসরকারী হিসেবে প্রায় ২৭ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি বৈধ-অবৈধ ভাবে বাস করছে। তবে তেল উৎপাদন মন্দার কারণে এরই মধ্যে অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে সৌদি আরবে।

যে কারণে নিজেদের অর্থনীতির ভীতকে ধরে রাখতে এরই মধ্যে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে সৌদি সরকার। সৌদি আরব মূলত প্রবাসী কর্মী নির্ভর দেশ, তাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রচুর প্রবাসী রয়েছে সেখানে। আর এ প্রবাসীর পরিমাণ কমানোর জন্যও বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন তারা। এরই মধ্যে প্রবাসী শ্রমিকদের ওপর নতুন ট্যাক্স আরোপ করেছে সৌদি সরকার ।

সৌদি প্রবাসী ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান বলেন, সৌদি সরকার তাদের জানিয়েছে, এখন থেকে সৌদি আরবে প্রত্যেক প্রবাসীদের মাসে ২২শ‘ টাকা করে ট্যাক্স দিতে হবে। তিনি জানান, ২০১৭ সালে প্রত্যেক প্রবাসী ২২শ‘টাকা দিলেও সামনের বছর এ ট্যাক্স দ্বিগুন অর্থাৎ ৪৪শ‘ টাকা হবে।

এভাবে ২০১৯ সালে হবে ছয় হাজার দুইশ আর ২০২০ সালে তা হবে সাড়ে আট হাজার টাকায়। এভাবে সৌদি সরকার প্রতি বছর এ ট্যাক্স বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বলে জানান তিনি।

আব্দুল মান্নান বলেন, এখানে অধিকাংশ শ্রমিক বেতন পায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। এর মধ্যে প্রতি মাসে যদি এভাবে ট্যাক্স দিতে হয় তাহলে কিছু বছর পর সৌদি আরবে বাংলাদেশিদের টিকে থাকাই সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্তে সবচেয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের শ্রমিকরা, কারণ তারা অন্যান্য দেশের শ্রমিদদের তুলনায় অনেক কম বেতন পায়।

সৌদি সরকার আগামী মাস থেকেই এ ট্যাক্স আদায় করতে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি। সৌদি আরবের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভালো না।

আন্তর্জাতিক বাজারে গত দুই বছরে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম রেকর্ড কমে গিয়েছে। এতে তেলের ব্যবসার ওপর নির্ভরশীল সৌদি আরবের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সৌদি মন্ত্রাণলায়ের তথ্য মতে, এক বছরে দেশটির ঘাটতি বাজেট দাড়িয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি ডলার। এরপরই দেশটি অর্থনৈতিক সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেয়। এরইমধ্যে সৌদি আরব ‘২০৩০ ভিশন‘ নামে একটি রূপকল্পও হাতে নিয়েছে। যার আওতায় প্রবাসীদের ওপর ট্যাক্স আদায়ের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

সৌদির আরেক প্রবাসী রহমত উল্লাহ বলেন, বর্তমানে সৌদির বিভিন্ন কর্মকান্ডে মনে হচ্ছে তারা মূলত প্রবাসীদের হটিয়ে স্থানীয়দের জন্য কর্মসংস্থান বাড়াতে চাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সে পরিকল্পনায় দেশটিতে প্রবাসীরা কাজ করে এমন কোম্পানির ওপরও এ ধরনের কর আরোপ করা হয়েছে। বছরে বছরে করের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় নাগরিকরা বিদেশী শ্রমিক নিয়োগে নিরৎসাহিত হবে।

আর এর ফলে দেশীয় শ্রমশক্তিকে কাজে লাগানোর সুযোগ বাড়বে।

রহমত উল্লাহ বলেন, শুরু কর আরোপই নয়, সৌদি সরকার বিভিন্ন কোম্পানিতে বিদেশি শ্রমিক নেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন আইন চালু করেছে। এ আইন অনুযায়ী যেসব কোম্পানিতে প্রবাসীর সংখ্যা স্থানীয় নাগরিকদের সমান বা তার কম, তাদের জন্য ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানকে জনপ্রতি ৩০০ রিয়াল করে মাসিক ফি দিতে হবে। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে এটা হবে ৫০০ রিয়াল। আর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে হবে ৭০০ রিয়াল।

স্থানীয়দের চেয়ে কোম্পানিতে প্রবাসী বেশি হলে ওই কোম্পানিকে জনপ্রতি ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে দিতে হবে ৪০০ রিয়াল, ২০১৯ সালে দিতে হবে ৬০০ রিয়াল এবং ২০২০ সালে তা হবে ৮০০ রিয়াল। এভাবে নতুন নতুন আইনের ফলে চাপের মুখে পড়ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড়ে এ শ্রমবাজার।

রহমত উল্লাহ বলেন, এভাবে চলতে থাকলে এক বছরের মধ্যে অনেক বাংলাদেশিদেরে উপায় না দেখে দেশে ফেরত আসতে হবে। সৌদির বর্তমান অবস্থা বাংলাদেশিদের একেবারেই অনুকূলে না বলে মনে করেন এই প্রবাসী।
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে