প্রবাস ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রামপ শপথ গ্রহণের পরদিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘উইমেনস মার্চ’ সহ ট্রামপবিরোধী বিভিন্ন বিক্ষোভের মুখপাত্র হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক মুনিরা আহমেদ। বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভে অংশ নেয়া অনেক মানুষের হাতে ছিল তার ছবি দিয়ে তৈরি পোস্টার। ২১শে জানুয়ারি উইমেনস মার্চে অংশ নেয়া প্রতিবাদী নারীরা মুনিরার ছবি হাতে নিয়ে বিক্ষোভ করেছিলেন। এমনকি, নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্টসহ যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি শীর্ষ পত্রিকায় পূর্ণ পাতাজুড়ে ছাপা হয়েছিল ওই ছবি। ছবিটিতে দেখা যায়, মুনিরা আমেরিকান পতাকার নকশায় তৈরি একটি হিজাব পরে আছেন। তার চাহনী দৃঢ়। ছবিটি সম্বন্ধে মুনিরা দ্য গার্ডিয়ান ও ভক্সকে বলেন, মুল ছবিটি তোলা হয়েছিল এক দশক আগে।
তুলেছিলেন রিদওয়ান আদামি নামের একজন ভ্রমণ ফটোগ্রাফার। পরবর্তীতে ছবিটিকে পোস্টারে রূপ দেন শেফার্ড ফেইরি। এম্পলিফায়ার ফাউন্ডেশনের ‘উই আর দ্য পিপল’ নামে একটি গ্রুপ প্রজেক্টের আওতায় ছবিটি নিয়ে কাজ করেন ফেইরি। প্রসঙ্গত, ফেইরি সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ‘হোপ’ থিম নিয়ে কাজ করে বিশ্বজুড়ে সুখ্যাতি অর্জন করেন। ছবিটি কোন বিক্ষোভ বা আন্দোলনে প্রতীক হিসেবে ব্যবহারের উদ্দেশ্য নিয়ে তোলা হয়নি। এক দশক আগে আদামি ইলুমি ম্যাগাজিনে প্রকাশের উদ্দেশ্যে ছবিটি তোলেন।
আমেরিকায় মুসলিমদের জীবন-যাপন ফুটিয়ে তুলতে ইলুমি ম্যাগাজিনে প্রকাশ করা হয় এটি। মুনিরা ভক্সকে জানান, প্রাথমিকভাবে ছবিটি এমন হওয়ার কথা ছিল- আমি নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে দাঁড়িয়ে থাকবো। সেখানে একটি আমেরিকান পতাকা ঝুলতো। আমি ভাবলাম ঠিক আছে, এটা শুনে দারুণই মনে হচ্ছে। আর তাছাড়া রিদওয়ানের কাজ আমার ভালো লাগে। আমার মতো সে-ও কুইন্সে জন্মেছে। প্রাথমিক উদ্দেশ্য নিয়ে বেশ কয়েকটি ছবি তোলা হয়। তার মধ্যে ওই ছবিটিতেই ফুটে ওঠে বিশেষ কিছু। যেটি দেখে মনে হয় ছবির ওই নারী, বাকি সবার দিকে সাহসী দৃঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। ওই দৃষ্টির সামনে কেউ তার মুসলিম ও আমেরিকান পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন করার সাহস পাবে না। পরবর্তীতে, বছর দশেক পর ট্রামপ নির্বাচিত হলে ট্রামপ-বিরোধী আন্দোলনে ছবিটির পোস্টার রূপ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। অবশ্য, মাঝখানের এই এক দশকে ছবিটি ইলুমি ম্যাগাজিন থেকে শুরু করে বিভিন্ন মুসলিম ব্লগ, ডানপন্থি ষড়যন্ত্রমূলক সাইট, পিন্টারেস্ট, টুম্বলারসহ নানা জায়গায় ব্যবহৃত হয়েছে।
হঠাৎ করে বহুদিন পর ট্রামপবিরোধী আন্দোলনের সময় ছবিটি জনপ্রিয়তা পাওয়া নিয়ে মুনিরা বলেন, ছবিটি আসলে দ্বিতীয় ও তৃতীয় জীবন লাভ করেছে। ভাইরাল আবিষ্কার হওয়ার আগেই এটি ভাইরাল হয়েছে। তবে মুনিরার মতেই, আগের তুলনায় আন্দোলনের সময় এর জনপ্রিয়তা ছিল ব্যাপক পরিমাণে বেশি। ছবিটি নিয়ে মুনিরা দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, এর মাধ্যমে এটা বলার চেষ্টা করা হয়- আমিও বাকি সবার মতই একজন আমেরিকান। আমি একজন মুসলিম। একই সাথে আমি একজন আমেরিকানও। উভয় পরিচয় নিয়েই আমি গর্বিত। মুনিরা আরো বলেন, এই ছবিটি যে বার্তা পাঠায়, তার জন্য আমি আমি গর্বিত। এটা কোনকিছুর বিরুদ্ধে নয়। এটা সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে চলার বার্তা পাঠায়। ছবিটির বার্তা হচ্ছে- আমিও তোমাদের মতনই একজন মার্কিনি।
ভক্স অনুসারে, মুনিরা বর্তমানে একজন ফ্রিল্যান্স ভ্রমণ ও ফুড ফটোগ্রাফার। ১৯৭০-এর দশকে তার বাবা-মা বাংলাদেশ ছেড়ে আমেরিকার উদ্দেশে পাড়ি জমান। মুনিরার জন্মও সেখানেই- নিউ ইয়র্ক সিটি বোরো (পৌরসভা আছে এমন অঞ্চল) কুইন্সের জ্যামাইকায়। পরবর্তীতে পরিবারের সদস্যরা মিশিগানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ভক্সে মুনিরা ও তার ওই ছবি নিয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে লেখিকা মিশেল গার্সিয়া বলেন, আমি ক্যাথলিক স্কুল থেকে সরকারি স্কুলে চলে আসার পর, আমি যে কয়জন মুসলিম বন্ধু পেয়েছিলাম- আহমেদ তাদের মধ্যে একজন।
সে তখন হিজাব পড়তো না, এখনো পড়ে না। তবে সে আমাকে তার বিশ্বাস সম্বন্ধে অনেক কিছু শিখিয়েছে। আর আজও সে তার মুসলিম পরিচয় নিয়ে দৃঢ়ভাবে গর্বিত। ওই লেখিকা মুনিরার ছবি নিয়ে বলেন, হয়তো আহমেদ শুধুই এমন একটি ছবির মডেল হিসেবে কাজ করেছে, যেটি পরবর্তীতে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কিন্তু আপনি যদি তাকে চেনেন, তাহলে বিষয়টা অনেকটা এমন লাগে যে, এটা হওয়ারই ছিল। মুনিরার ভাষ্য, আমি সবসময়ই কিছু একটা বলার প্রয়োজন বোধ করেছি। কারণ, আমি একজন মানুষ।
প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এ পর্যন্ত ট্রামপ বেশ কয়েকটি মুসলিম বিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এগুলোর জন্য বেশ সমালোচিতও হয়েছেন। জানুয়ারিতে প্রকাশিত গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মুনিরার ওই ছবি একটি প্রশ্ন তোলে - আমেরিকান ও মুসলিমদের মধ্যকার সমপর্কের কি হবে? প্রায় এক বছর শেষ হয়ে এসেছে এরপর। মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে ট্রামপ প্রশাসনের সমপর্ক আরো নেতিবাচক মোড়ই নিয়েছে। সেসব কিছু মিলিয়ে বর্তমান সময়ে ওই প্রশ্ন আরো বেশি তাৎপর্যপূর্ণ।-এমজমিন
এমটি নিউজ/আ শি/এএস