হোসেইন জামাল : ‘ওরে ভাই! সৌদি আরবে এখন আগের মতো টাকার গাছ নাই, যে ঝাঁকি দিলেই টাকা পড়বে! তাই যারা বা যাদের আত্মীয়-স্বজন সৌদি আরব আসতে চাইছেন, তারা- ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না। আর না ভাবিয়া সৌদি আসিয়া, বন্ধুর রুমে বসিয়া কাঁদিও না।’
কথাগুলো শাহ আলম শরাফতি নামে একজন প্রবাসীর। ‘আমরা সৌদি আরব প্রবাসী বাংলাদেশি গ্রুপ’ নামে একটি ফেসবুক পেইজে কথাগুলো শেয়ার করেছেন তিনি।
সৌদি আরবের বর্তমান বাস্তবতা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ‘এখন সৌদি আরবে ৭৪ এর দুর্ভিক্ষ চলছে। তবে যিনি ফ্রি ভিসা নিয়ে আসতে চাইছেন, তিনি তো জানেন না, ফ্রি ভিসার ঝক্কি-ঝামেলা! নতুন লোকটা আসার পরপরই কোনোমতে আকামাটা তৈরি করেই কফিল ঘোষণা দিয়ে দিচ্ছে এক-দুই মাসের মধ্যে ট্রান্সফার হতে। সেটা কি একজন নতুন লোকের দ্বারা সম্ভব? তাই সাবধানের মাইর নাই।’
‘আমরা সৌদি আরব প্রবাসী বাংলাদেশি’ গ্রুপের আরেক সদস্য এইচ এম জাহাঙ্গীর। ফ্রি ভিসায় বর্তমানে সৌদি গেলে কী পরিণতি অপেক্ষা করে, খুব সুন্দরভাবে তা তুলে ধরেন তিনি। এইচ এম জাহাঙ্গীর লিখেছেন, ‘সৌদি আরবে হঠাৎ করে কর্মসংস্থান একেবারে নেই বললেই চলে! কাজের এখন অনেক সংকট, দিনকে দিন বেকারত্ব বেড়ে চলেছে, যা রীতিমতো সবাইর মাঝে শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে!’
তিনি জানান, বর্তমানে এখানে বাংলাদেশিদের ৫০ ভাগ লোকের কাজ নেই। তারা দীর্ঘদিন ধরে বেকার বসে আছেন। আর যারা নতুন করে এসেছেন, তাদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ লোক বেকার।
এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে যারা আসছেন, সবাই কাছে বিনীতভাবে না আসার অনুরোধ জানিয়ে এই সোদি প্রবাসী বলেন, ‘এখানে বর্তমান অবস্থা খুবই বিপর্যস্ত। বিভিন্ন সমস্যার কারণে অনেক কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে। তাই আগের মতো স্বাভাবিক অবস্থা না ফেরা পর্যন্ত কাউকে নতুন করে ফ্রি ভিসা নিয়ে আসা উচিত হবে না।’
যারা ফ্রি ভিসা আসছেন, তারা সামনে ভয়াবহ বিপদের সম্মুখীন হতে যাচ্ছেন জানিয়ে এইচ এম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আসলে ফ্রি বলতে কোন ভিসা নেই। যে ভিসা আসলে কোনও কাজ নেই, নিজে নিজে কাজ খুঁজে নিতে হয়, সেই ভিসাকে আমরা ফ্রি ভিসা বলে থাকি। চাকরি থাকুক আর না থাকুক আপনাকে প্রতিমাসে বিভিন্ন খরচ বাবদ প্রায় ২২ হাজার টাকা দিতে হবে। আর ভিসা রিনিউ করার সময়, যাকে সৌদি আরবে আকামা বলে, সেই সময় মকতব আমেল বাবদ ৫৫ হাজার এবং জাওয়াজাত ফ্রি প্রায় ১৫ হাজার, হেলথ ইন্সুরেন্স আট হাজার মিলিয়ে মোট ৭৮ হাজার টাকা। এটা হলো সরকারি ফি। বছর শেষে ভিসা নবায়ন করার সময় এটা দিতে হবে। সব মিলিয়ে বছরে খরচ পড়বে প্রায় তিন লাখ ৪২ হাজার টাকা।
তিনি জানান, কোম্পানি গ্রিন রাখার জন্য বা সিস্টেম চালু রাখার জন্য কফিল বা কোম্পানি প্রতি পাঁচজন লোকের জন্য একজন করে সৌদি রাখতেই হবে, যার ন্যূনতম বেতন মাসে ৬৬ হাজার টাকা, ইন্সুরেন্স বাবদ প্রায় সাড়ে তেরো হাজার টাকা। যা বছরে দাঁড়ায় প্রায় নয় লাখ ৫৪ হাজার টাকা। জনপ্রতি বছরে প্রায় এক লাখ ৯১ হাজার টাকা পড়বে। পুরো বছরে মোট আয়ের পাঁচ লাখ ৩৩ হাজার টাকা ফ্রি ভিসার জন্য কফিল কে দিতে হবে।
এই প্রবাসী জানান, একজন ব্যক্তি ফ্রি ভিসায় আসলে মাসে সর্বোচ্চ গড়ে ৪৫ হাজার টাকা আয় করতে পারেন। বছরে তা দাঁড়াবে পাঁচ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এর মধ্যে কফিলকে দেওয়ার পর হাতে থাকবে মাত্র সাত হাজার টাকা। এর মধ্যে বছরের প্রায় ছয় মাসেই বেকার থাকলে এত টাকা জোগাড় করা আর আকামা নবায়ন করা সম্ভব হবে না। আর আকামা ছাড়া ফ্রি ভিসায় আসা ব্যক্তি অবৈধ হয়ে যাবেন। তখন অবৈধ ভাবে থাকার কারণে জেল জরিমানা হবে। দেশে যেতে হলে জেল খেটে যেতে হবে।
এইচ এম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘তাছাড়া শুনেছি, আগামী জুন থেকে প্রতিমাসে, জনপ্রতি আরও আট হাজার টাকা করে বেশি দিতে হবে, তখন পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস