মনির হায়দার : চিকিৎসার জন্য টানা এক মাসেরও বেশি সময় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের পর সিঙ্গাপুরে ফিরেছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় শুক্রবার রাত ৯টায় তিনি সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে রওনা দেন। সঙ্গে রয়েছেন তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম। সিঙ্গাপুরে পৌঁছানোর পর ২-৩ দিনের মধ্যেই তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছেন, দেশে ফিরেই তিনি নিজ নির্বাচনী এলাকা ঠাকুরগাঁওয়ে যাবেন। সেখানেই তিনি ঈদ করবেন। সূত্র জানায়, তিনি সিঙ্গাপুর থেকে নিউ ইয়র্কে আসার কারণে তার বিমান টিকিট কাটা হয়েছিল সিঙ্গাপুর-নিউ ইয়র্ক-সিঙ্গাপুর। এইজন্য তিনি নিউ ইয়র্ক থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে ঢাকা ফিরবেন।
বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে মির্জা আলমগীর বলেন, আমি এখানে কর্নেল হাসপাতালের নিউরো বিভাগের চেয়ারম্যানের অধীনে চিকিৎসা সেবা নিয়েছি। সার্জারি করা সম্ভব হচ্ছে না। চিকিৎসকরা কিছু মেডিকেশন ব্যবস্থা দিয়েছেন। এখন চিকিৎসার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে।
তারা বলেছেন, আগামী ৬ মাস পর আবার আসতে হবে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে আমার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। দুর্বলতা কিছুটা কাটিয়ে ওঠেছি। মোটামুটিভাবে চিকিৎসার ফল পেয়েছি। এখানে আসার যে উদ্দেশ্য ছিল সেটা অনেকটা পূরণ হয়েছে।
দেশের পরিস্থিতি নিয়ে মির্জা আলমগীর বলেন, দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি সবসময় আশাবাদী। বাংলাদেশ অবশ্যই উঠে দাঁড়াবে। মানুষ তার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও গণতান্ত্রিক অধিকার অর্জন করতে মানুষ সক্ষম হবে। তিনি বলেন, বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসেবে দেশের মানুষের জন্য যতটুকু করা দরকার সেটা করতে আমরা চেষ্টা করছি। দেশের মানুষ গণতান্ত্রিক স্পেসের জন্য সংগ্রাম করছে। আমি আশা করি, মানুষ অবশ্যই সফল হবে। মির্জা আলমগীর বলেন, বিএনপি নির্বাচনী দল। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনগণের অধিকার আদায়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা সেটা করে যাবো।
আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে তিনি বলেন, সেটা হবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যেই, যখন যেটা প্রয়োজন। জনগণ যেভাবে চাইবে সেভাবেই হবে। আমরা আশা করি বর্তমান অবস্থার অবসান হবে। কারাবন্দি নেতাকর্মীদের ব্যাপারে বলেন, হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাবন্দি রয়েছেন। তারা যথাযথ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়েই মুক্ত হবেন। ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, আমি সবসময় মানুষের কল্যাণে বিশ্বাস করি।
বাংলাদেশের মানুষের শুভ হোক, ভাল হোক এটাই প্রত্যাশা করি। এদিকে বিগত দুই বছরে বেশ কয়েক দফা কারাবরণকারী বিএনপির এই নেতা করোটিড আর্টারি ব্লকড নামের জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। কারাগারে থাকাকালে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত মেডিকেল বোর্ড তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরামর্শ দেন। মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য চলতি বছরের ১৪ই জুলাই তিনি জামিনে মুক্তি পান।
এরপর ২৬শে জুলাই প্রথমে সিঙ্গাপুর যান তিনি। সেখান থেকে চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে উপযুক্ত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার পরামর্শ দিলে ১১ই আগস্ট তিনি সিঙ্গাপুর থেকে সোজা নিউ ইয়র্কে আসেন। এখানে তিনি বিখ্যাত কর্নেল হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। কর্নেল হাসপাতালে চিকিৎসকরা প্রথমে তাকে অপারেশনের উদ্যোগ নিলেও শারীরিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে অপারেশন করেননি।
চিকিৎসকরা জানান, মির্জা আলমগীরকে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা সেবা নিতে হবে। এদিকে নিউ ইয়র্ক ছেড়ে যাওয়ার সময় জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে মির্জা আলমগীরকে বিদায় জানান বিএনপির আরেক কেন্দ্রীয় নেতা ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা। যিনি নিজেও গত এক বছর ধরে নিউ ইয়র্কে অবস্থান করে ক্যান্সারের চিকিৎসার নিচ্ছেন।
এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র সফররত প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমান, মির্জা আলমগীরের বন্ধু রফিকুল ইসলাম, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিএনপির অর্থবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতা জিল্লুর রহমান জিল্লু, মিজানুর রহমান ভূঁইয়া মিল্টন, ডিসিসির সাবেক কমিশনার মোশাররফ হোসেন খোকন, যুবদল নেতা আবু সাঈদ প্রমুখ বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।-এমজমিন
২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে