শহীদুল ইসলাম, যুক্তরাষ্ট্র থেকে: দেশের মায়া ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী আবাস গড়েছেন ফুটবলে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক জুয়েল রানা। সন্তানদের উন্নত শিক্ষা ও সুন্দর ভবিষ্যত গড়তে গত ২২ এপ্রিল তিনি সপরিবারে নিউইয়র্কে এসেছেন। পারিবারিক সূত্রে অভিবাসী হয়েছেন তিনি। আর দুদিন আগেই হাতে পেয়েছেন গ্রিনকার্ড।
স্থানীয় সময় বুধবার নিউইয়র্কের উডসাইডের গুলশান টেরেসে বাংলাদেশি আমেরিকান ব্যবসায়ীদের এক ইফতার অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে এসেছিলেন অধিনায়ক জুয়েল রানা। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যও রাখেন সেখানে তিনি। প্রবাস জীবনে চলার পথে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।অনুষ্ঠানের শেষে আলাপচারিতায় জুয়েল রানা তুলে ধরেন বাংলাদেশের ফুটবল অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত স্বপ্নের কথা। আবারো সুযোগ পেলে ফুটবলের উন্নয়নে তিনি সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারেও প্রস্তুত আছেন, বললেন জুয়েল রানা।
১৯৯৭ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশের সাবেক তারকা ফুটবলার জুয়েল রানা। অনেক প্রতীক্ষার পর ১৯৯৯ সালে সাফ গেমস ফুটবলে প্রথম সোনা এসেছিল তাঁর অধিনায়কত্বেই। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের ফুটবলে সফল অধিনায়ক বলা হয় এই জুয়েল রানাকেই।
অভিবাসী জীবন এক মাসের হলেও এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি, জুয়েল রানা এখানে চাকরি নাকি ব্যবসা করবেন। তবে তার অস্তিত্বজুড়ে এখনো সেই ফুটবল। ৮ বছর আগে অবসর নিলেও ফুটবল ছাড়েননি তিনি। ঢাকায় বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে ফুটবল প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছিলেন কৃতী এই সাবেক ফুটবলার।
প্রবাস জীবনে থিতু হওয়ার চেষ্টা থাকলেও জুয়েল রানা এখনো স্বপ্নে বিভোর বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে। তিনি বলেন, ক্রিকেট যেমন জনপ্রিয়তা পেয়েছে, একসময় ফুটবলও এমন জনপ্রিয় ছিল বাংলার ঘরে ঘরে।
সদিচ্ছা থাকলেই ফুটবলকে আবারো সমান জনপ্রিয়তায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। শুধু দরকার সঠিক পকিল্পনা। এই সঠিক পরিকল্পনার অভাবেই ফুটবল দিন দিন পেছনে পড়েছে। তিনি এখনো মনে করেন, ফুটবলকে এগিয়ে নিতে হলে প্রথমেই ক্লাবগুলোকে একাডেমিক হতে হবে।
খেলোয়াড়দের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে তিনি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছেন। কিন্তু একাডেমিকভাবে খেলোয়াড় গড়ে তুলতে এখনো কোনো উদ্যোগ নেই কোথাও। তিনি বলেন, সরকারের সদিচ্ছার অভাব নেই। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে আন্তরিকতার ঘাটতি রয়েছে। তবে বাংলাদেশের ফুটবলকে নিয়ে এখনো আশাবাদী সাবেক অধিনায়ক জুয়েল রানা।
সাফ সোনাজয়ী অধিনায়ক কেনো প্রবাসী জীবন বেছে নিলেন? উত্তরে জুয়েল রানা বললেন, ২০০৪ সালে তার স্ত্রীর বড় বোন তাদের জন্য ইমিগ্রান্ট ভিসার আবেদন করেছিলেন। ১৪ বছর লেগেছে ভিসা প্রক্রিয়া শেষ হতে।
তবে দুই সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিয়েছেন তিনি। এখন বসবাস করছেন নিউইয়র্কের কুইন্সের জ্যামাইকার ১৬৪ স্ট্রিটে।
জুয়েল রানা জানান, প্রবাস জীবন বেছে নিলেও মাঝেমধ্যে দেশে যাবেন। ফুটবলের মাঝেই বেঁচে থাকতে চান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যতদিন বেঁচে থাকব, ততদিন ফুটবল আমার রক্তে থাকবে। সব সময়ই ফুটবলকে মিস করছি। মিস করছি বন্ধুদেরও। ঢাকার সেই মাঠ প্রতিমুহূর্তে আমাকে হাতছানি দিচ্ছে। তবে সুযোগ পেলে এই যুক্তরাষ্ট্রে ফুটবলের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চান জুয়েল রানা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে সুযোগ থাকলে হয়তো কোচ হবো।
দুই সন্তানের জনক জুয়েল রানার একমাত্র ছেলে জাবির আরহামের বয়স এখন ১৩ বছর। আর একমাত্র মেয়ে আরফা ওয়াজিহার বয়স ১০ বছর। তারা এখানকার স্কুলেও ভর্তি হয়েছে। প্রবাসে স্ত্রী, দুই সন্তান ও অন্য স্বজনদের নিয়ে ভাল সময় কাটছে তার।
জুয়েল রানার গ্রামের বাড়ি বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুরে। গ্রামের বাড়িতে জন্ম হলেও বড় হয়েছেন ঢাকাতেই।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস