নাঈম হাসান পাভেল, লিসবন, পর্তুগাল থেকে: ইউরোপে পর্তুগালকে অভিবাসীদের স্বর্গরাজ্য হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ইউরোপের অন্যান্য দেশ যেখানে অভিবাসীদের বিষয়ে কঠোর নীতি অনুসরণ করে সেখানে পর্তুগাল বৈধ পন্থায় প্রবেশকারী অভিবাসীদের জন্য সহজ শর্তে রেসিডেন্স প্রদান প্রক্রিয়া চালু রেখেছে।
সম্প্রতি নাগরিকত্ব আইনে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে পর্তুগাল। ৫ জুলাই পর্তুগালের সরকারি প্রেস দায়রা দ্যি রিপাবলিকায় নতুন এই সংশোধনীর গেজেট প্রকাশিত হয়।
অভিবাসী মা-বাবা পর্তুগালে দুই বছর ধরে বৈধভাবে বসবাস করলে পর্তুগালে জন্ম নেয়া তাদের সন্তানরা সরাসরি নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবে। এ নিয়ে পর্তুগিজ সংসদে অভিবাসী আইন সংশোধিত হয়েছে। সেক্ষেত্রে মা-বাবা যেকোনো একজনের বৈধ অভিবাসন স্বীকৃতি থাকলেই জন্ম নেয়া সন্তান পর্তুগিজ নাগরিকত্ব পাবে।
এছাড়াও নতুন আইনে পর্তুগিজ কলোনি অন্তর্ভূক্ত ছাড়া যেসকল সাধারণ অভিবাসীরা রয়েছেন তাদের নাগরিকত্ব আবেদনের সময়সীমাও আগের চেয়ে কমিয়ে আনা হয়েছে।
পূর্বে অভিবাসীরা অস্থায়ী নাগরিকত্ব পাবার ছয় বছর পূর্ণ হলে পর্তুগিজ স্থায়ী নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারতেন।
কিন্তু নতুন এই সংশোধনীতে আবেদনের সময়সীমা একবছর কমিয়ে আনা হয়েছে। পূর্বের ছয় বছরের পরিবর্তে পাঁচ বছর পূর্ণ হলেই পর্তুগিজ নাগরিত্বের আবেদন করতে পারবেন।
তবে এ বিষয়ে পর্তুগালের সব গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করলেও সরকারি গেজেটে বিষয়টি এখন পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি।
সংশোধনীতে আরেকটি পরিবর্তন আনা হয়েছে। যাদের পূর্ব পুরুষ পর্তুগিজ ছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে দ্বিতীয় প্রজন্ম নাগরিকত্ব গ্রহণ না করে দীর্ঘসময় অন্যত্র বসবাস করছেন, তাদের সন্তানরা চাইলে এখন আবার পর্তুগিজ নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে পারবেন।
এদিকে নাগরিকত্ব আইনে পরিবর্তন আনার পাশাপাশি পর্তুগালে বসবাসরত বিভিন্ন দেশের প্রায় ৩০ হাজার ভিসাবিহীন অনিয়মিত অভিবাসীদের বৈধতাদানের ব্যাপারেও সংসদে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে।
এদিকে বিশ্ব জনসংখ্যা জরিপ বলছে বয়স্ক হার বেশী হওয়ায় পর্তুগালে জন্মহারের চেয়ে মৃত্যুহার বেশী। সে হিসেবে ২০৫০ সালে পর্তুগালের জনসংখ্যা কমে দাঁড়াবে ৭ মিলিয়নে। বর্তমানে যা ১০ মিলিয়ন।
তাই পর্তুগালের সরকারও এটি নিয়ে শঙ্কিত। এর মধ্যে শিশু জন্মহার বৃদ্ধিতে বিরোধী একদল সরকারের কাছে দাবি করেছে প্রতিটি শিশু সন্তানের জন্য ১০ হাজার ইউরো করে সহায়তা ঘোষণার জন্য।
যদিও দাবিটি কোনো ইতিবাচক সাড়া পায়নি। তাই অভিবাসীদের কাছে স্বর্গরাজ্য খ্যাত দেশ পর্তুগালকে হয়ত ভরসা রাখতে হবে সেই অভিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতিই।