সাঈম সাম্য : ক্লাস সিক্স সেভেন দুই বছর বইসা আমি তসলিমা নাসরিনের প্রবন্ধগুলা বাংলাদেশ প্রতিদিনের কলাম থেকে কাইটা একটা ফাইলে জমা রাখতাম। ফাইলের উপরে উনার অনেক ছবি কাইটা আইকা দিয়ে লাগানো ছিল। মাঝেমধ্যে স্কুলে বন্ধুদেরকে ফাইলের প্রবন্ধগুলা পড়তে দিতাম এবং পড়ে শোনাতাম…। প্রথমেই তারা তাদের বাপ মা’র কাছে উনার নামে হাবিজাবি শুইনা বড় হওয়ার কারণে আমাকে গালিগালাজ করতো কিন্ত প্রায়ই দেখা যাইতো ওরাও উনার কথার সাথে একমত। হঠাৎ একদিন আমার ফাইল বাসা থিকা উধাও…এরপর খুঁজে দেখা গেলো ফাইল আছে পেপার কাটিং উধাও। খুব কষ্ট পাইছিলাম।
উনাকে আমি চিনি ২য় শ্রেণি থেকে। আব্বা একদিন বলতেছিলেন যে একজন লেখিকাকে বাংলাদেশ থেকে লেখালেখির কারণে বিতাড়িত করা হইছে। আরো খোঁজ নিয়া জানা গেলো হুজুরেরা নাকি উনার মাথার দাম ও ঘোষণা করছিলো এবং মূলত এই ব্যাপারটাই আমাকে উনার প্রতি কৌতূহলী করে তুলছিলো।
তসলিমা নাসরিনকে আমি ঈশ্বর ভাবিনা; উনাকে আমি পূজা করিনা। কিন্ত উনাকে আমি ভালোবাসি এবং শ্রদ্ধা করি। আমাদের মানুষদের একটা সমস্যা হল অল্পতেই আমরা একেক জনকে আদর্শ হিসেবে দেখাইতে চাই…এইটা আমার পছন্দ না। আরে ভাই আমরা মানুষ…আমাদের ভুলত্রুটি থাকবেই আমরা তো মহাপুরুষ না।
তসলিমা নাসরিন সেইসময় আমার মনে কৌতূহল তৈরি না করলে হয়তো আমি এতো অল্প বয়সেই নারীদের নিয়া এবং তাদের অধিকার নিয়া জানতে চাইতাম না। তসলিমার লজ্জা বই পড়ার আগে আমার হাতে আসে বেগম রোকেয়ার রচনাসমগ্র এবং এরপর আসে আরজ আলী মাতুব্বরের ৪ টা বই। লজ্জা পড়ে আমিতো পুরা তব্দা খেয়ে বসে আছি। এই বইর জন্য কাউরে দেশ থিকা পালায়া যাওয়া লাগে? অথচ ধর্ষকেরা তো ঠিকই শার্টের বুতাম খুইলা ঘুরতেছে (তখন ধর্ষণ ব্যাপারটা নতুন জানতে পারছি পেপার থিকা)। এ আমার শৈশবে তসলিমা এবং আরজ আলীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। উনাদের কারণে আমি যুক্তি দিয়া ভাবতে শুরু করছিলাম এবং নারীদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হইতেও শুরু করছিলাম..আমিতো একটা সংগঠনও খুলে ফেলছিলাম ৪র্থ শ্রেণিতে পড়াকালীন! হা হা…
প্রবন্ধ পড়ার সময় থেকে এখন অবধি আমার অনেক মতের সাথেই তসলিমা নাসরিনের মতের অমিল হয়েছে। কিন্ত আমি উনাকে অবশ্যই অনেক শ্রদ্ধা করি এই ভেবে যে আমাদের দেশে অনেক নারীই নারীবাদ শব্দটার সাথে পরিচিত হইছে উনার কারণেই। খোলামেলাভাবে কোনো প্রকার ভয় না পেয়ে নারীবাদ চর্চা শুরু হইছে উনার থেকেই। উনার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ! শুভ জন্মদিন তসলিমা নাসরিন।